মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

নাসির ওয়াদেন



নাসির ওয়াদেন  

বাসন্তিকা
                        ১
বসন্ত এসেছে, হারিয়ে যাওয়া সেই বসন্ত
ছায়ার মতন লেপ্টে থাকা বুকে 
গুঁজে দাও অভিমানী মুখ খানি
প্রস্ফুটিত কাঞ্চন, মুকুলিত আম্রিকা বনে,
ছড়িয়ে যাক নিঃসন্দেহ বাতাস
হৃৎপিণ্ডে বিঁধে আছে বেদনার দীর্ঘ নখে ।

বোঝাপড়ার ঝরণা জলে ধুয়ে গেছে
শীতের কৌমার্য পেশীসমূহ---
স্নিগ্ধতা বহে গেছে বাতাসের জলে
ধুয়ে দিয়ে আমার হৃদমাঝার

সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো তোমার
বক্ষ পয়োধর সুধা দিগন্তে ছড়াক
অনুভূতি গুলো ছড়িয়ে দিয়ে আকাশে ,
চোখের জলই শুদ্ধ করবে আমার পরাণ ।




                    
এসো বসন্ত, বসো ছোট আঙিনাতে
তোমার জন্য খোলা আছে
আমাদের সদর দরজা----

দুচোখে অশ্রু কেন বাসন্তিকা ?
বিরহের চোখে পলাশ ফুল আঁকা
তবুও মধুরতর হোক আমাদের সান্নিধ্য

সূর্য ডুবে গেছে। আকাশে তারাদের আলো।
অসম্ভব কান্নারা ঠোঁটে কথা বলছে ।
দক্ষিণা বাতাস সস্নিগ্ধ পরশ ছুঁইয়ে
বুক জুড়োয় বসন্ত জোৎস্নার---

বাতাস একটু বসবে আমার পাশে
আমি তোমাকেই দূত করে পাঠাবো ।




                        
কি আশ্চর্য!  তোমাকে ভালবেসে কি
আমাকেই ঠকিয়েছি আমি ?
নীরব কেন বাসন্তিকা? সময়ই দেবে উত্তর ?

উঠোনে হামাগুড়ি টানে আমাদের
জমানো বুকের অভিমানগুলি ---

একখানা কাঠের ঘোড়ার বায়না
ছিল আমার ছোট্ট সোনার

অপরাধ কেন ব্যথা জাগায় আজ বসন্ত ?
অপার সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়ালে সম্মুখে
বেশ তো ছিলাম একাকী  এবেলা---
ভালবাসা দিয়ে ফিরিয়ে নিলে
অনুযোগ রেখে পালাচ্ছে অন্য বিকেলে ।




                      ৪
চৈত্রের ঝরাপাতা গানের দিন শেষ
ঝড়ো পাখিদের ডানায় জোছনা
লেগে রয়েছে, বসন্তের হিম জোৎস্না ।

অন্ধকার দিয়ে অন্ধকার ঢাকি যত্নে
দেওয়া নেওয়ার ভেতর এক অপূর্ব কারুশিল্প
গাছ বিছিয়ে দিচ্ছে নীরব ছায়ারেখা
বিরহ বসন্তের ব্যথিত মৃত্তিকার

জীবন আর ছায়া মিলে মিশে
ডেকে আনুক অনন্ত শূন্যতা
ষোড়শী জোছনা রাতের গালে
প্রগাঢ় চুম্বন আঁকে মহুয়া ফুলের গন্ধ
লাল হয়ে ওঠে বুকে দিগন্তের ভাঁজ--

কান্না দিয়ে কি হৃদয় ধুয়ে ফেলা যাবে  !




                    ৫
পলাশ বনে আগুন রাঙা চোখ
ডাকছে কাছে আয়রে বসন্ত আয়
ডানাভাঙা ভোর মুকুল-ঝরা বুক
বুকের ভেতর রাঙিয়ে দিয়ে যায় ।

ফাগুন এলে আগুন মেখে বুকে
ফাগের দাগে মনখানি মাতালো
চৈতের হাওয়া ফুল ঝরালো বনে
শিমুল ফুলে গাছগুলো রাঙালো ।

সুখ না পেতেই হাতছানি দিয়ে যাস
থাকবি না তো, আসিস কেন তুই ?
রাঙা আগুন বুক জ্বালিয়ে রাখ
রূপের নেশায় মন মজালি সই ।

দুপুর রোদে রাতের শীতল ঢেউ
বুক জুড়ানো মনকেমনের হাওয়া
রইবি না তুই, আর ক'টা দিন হেথা
শূণ্যই রবে তোকে ফিরে পাওয়া ।