মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

রিয়া চক্রবর্তী



রিয়া চক্রবর্তী

ফাগুন বেলা

এমন এক পলাশ রাঙা পথে
দেখা হল ফাগুন তোর সাথে
কুয়াশা এসে ভিজিয়ে দিলো ধুয়ে…..

আজও নাকি তেমনই এক দিন
কিছু সাদাকালো,আর কিছু রঙিন।
আমিই শুধু আমায় আছি ছুঁয়ে…..

আমার মন উদাসের দিনে
সুখের দামে দুঃখগুলো কিনে
কষছি হিসাব সেই পুরনো খাতা 

রক্ত মাখা আলভোলা এক ক্ষণে
মেঘ জমছে মনের কোনে কোনে
বানভাসি তাই দু চোখেরই পাতা..

নতুন ভাবে ভাবতে হবে আবার
নতুন খেলা ভাঙা  কিংবা গড়ার
ফিরছে পাখি দিনের শেষে নীড়ে

অনেক দিনের স্বপ্ন  ছিল যত
লুকিয়ে রাখি শতছিন্ন ক্ষত
বাঁধন আমার কবেই গেছে ছিঁড়ে




রক্ত মৃত্যু রসায়ন

অব্যক্ত ঘৃণার স্ট্রাটোস্ফিয়ারে
বিধ্বস্ত তুলতুলে হৃদয়।
গামা রশ্মির শিকারে আহত
আত্মরক্ষায় অপটু মন।
পথের প্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা
আগাছার দুঃস্বপ্নে দিন কাটে
কখন কি হয়।
মাউনাকিয়ায় চুপটি করে বসে থাকা
দূরবীন ও জানে না,
নত্রাদামের ধুসর পাথরের কথা।
যুগের পর যুগ বরফের আস্তরনে
ডুবে থাকা দিন রাত ও ভয়
পায় লাভা উদগীরণের।
পৃথিবীর শূন্য থেকে যাত্রা
শূন্যতেই বুঝি শেষ।
চিন্তায় টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া,
স্থান, কাল ও বন্য সমাজকে
ডিঙিয়ে যেতে গিয়ে,
ক্ষত বিক্ষত বিষাক্ত কাঁটায়।
নিত্য অনিত্যের ভিড়ে, পুরাণের
কাহিনী ও মিথ্যে হয়ে যায়।
ক্ষত স্থান থেকে চুইয়ে পড়া
রক্তের স্বাদে শুদ্ধ হয়েছে ক্যাকটাস।
শুকনো রুটির টুকরোর সাথে
মৃত্যু মিলেমিশে একাকার।
স্থবির জীবনকে আয়োনোস্ফিয়ার
গ্রাস করতে চেয়েছে বারবার।




আমার পৃথিবী

প্রকৃতিতে ফাগুনের জোয়ার এলেই,
আমার বেঁধে রাখা,লুকিয়ে রাখা প্রেম,
সমস্ত শিকল ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসতে চায়।
চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে চায় মন।
আর তখনই আমার সর্বক্ষণ কল্পনায় শান্ত থাকা
অনু পরমানু গুলো খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে।
দারুন বিদ্রোহে ঝড় তোলে,তছনছ করে দেয় সব।
আমার চোখে তখন পলাশের সমারোহ,
শরীরের উজানবেয়ে নামে লাভার স্রোত,
তুমুল বৃষ্টি আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
জেগে উঠি বৃষ্টি স্নাত হয়ে, বুকে তখন
ছলাৎ ছলাৎ, উথাল পাথাল ঢেউ।
তুফান তখন নিশ্বাস প্রশ্বাসে,শিরায় শিরায়।
গিরি গুহা উপচে পড়ছে ম্যাগমা প্রপাতে।
ধীর লয়ে বেজে চলেছে মোৎজার্ট , সোনাটা।
চারিদিকে থৈ থৈ ভিজে ভিজে পরাগ রেণু।
তারপর পৃথিবী ক্লান্ত হলে, রণক্লান্ত সময়ে,
ভেঙে যায় বুকের ভেতর জমিয়ে রাখা,
অভিমানের যত বাঁধ,ভেসে যায়  ফাগুন।




ইচ্ছে আমার ইচ্ছেগুলো

মাঝে মাঝে
ইচ্ছে করে
বৃষ্টি হয়ে
ঝরে পড়ি
সবুজ ঘাসে।
হলদে পাখির
ডানায় চড়ে
ছুঁয়ে আসি
বনপলাশী
এক নিমেষে।
ফাল্গুনী এই
অবুঝ বেলায়
গান গেয়ে যায়
একলা চাতক
মন উদাসী।
শুকনো পাতা
ঝরার বেলায়
হেসে বলে
গাছকে ডেকে
এবার আসি।




আমি

মাঝেমাঝে চুপ করে বসে থাকি আমি আমার পাশে।
আমার আমিকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত রুদ্ধ শ্বাসে;
আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকি,জুড়ে নিই টুকরো  হৃদয়।
খুঁজে পাই ব্যর্থ ইতিহাসের পাতায় এক নতুন পরিচয়ে।

ব্যস্ত  দিনের শেষে যখন চাঁদ নেমে আসে,
ডুবে যায় মন তখন  গল্প উপন্যাসে;
তারাগুলো মিটিমিটি তাকিয়ে দেখে আমায়।
পার করি সময় ওদের ভালবাসার আঙিনায়;

বই থেকে চোখ খুলে দেখি চারিদিকে আবছা আলো।
কল্পনায় সব-ই রঙিন কিন্তু বাস্তবে সব সাদাকালো ।
সব আশা, নিরাশাদের ঘুম পাড়িয়ে জেগে উঠি যখন,
খুঁজে পাই আমাকে,পুরনো আমি ,যেমন আছি এখন।