শাহানারা ঝরনা
সময়ের পরিক্রমা
ভেবে দেখো.সময়ের হাত ধরে কতোটা এগুতে চাও!
পলর পথিক তুমি বৈরী বাতাসে ছড়াও মায়াবী আবেগ;
ইচ্ছের গীতবিতানে আমি শুনি হলুদিয়া প্রহরের গান |
যখন একাকার হয়ে মিশে যায় জল ও জোছ্নাবধূ.
সমুদ্রে-ঢেউয়ের সাথে কানাকানি করে বেভুল নাবিক!
সখ্য -আবেশে আমার আঙিনায় হাসে
কবিতার ফুলপাখি|
মধুরতা যতই থাক ..
আমার পাখিমন উড়ে যায় দূর থেকে দূরান্তরে |
নগরকীর্তনে আর মন বসেনা!
অলোকনিসর্গে ভরে কাপালিক হৃদয় .
শাশ্বত অনুভবে গাঁথি সপ্তসুরের মালা | দেখি .
প্রহরী সময় খেয়ালি
আভিজাত্যে সাজায় মানবতার বাগান |
আমি হই স্বপ্নের আলাদীন |
প্রযুক্তির শিখরেবসে
সৌম্য অতীত ভাবি;
বিষণ্ণ চোখে আঁকি দলছুট মেঘের বয়সী প্রতিচ্ছবি!
হৃদ্যতাকে
অণুপরমাণুতে বিভাজন করি...
মহৌষধি ভেবেই পান করি মন্ত্রমুগ্ধের অমৃত -সুধা |
তুমি লোকপ্রবাদের
অবগুণ্ঠণ খুললেই
আমি মনের দেউলে দেবো
অনুভবের কণকাঞ্জলি |
বাহ্যিক ঐশ্বর্যে নয়,
বনেদী আরাধনায়
আমি পাল্টে ফেলি আমার পোশাকি ভাবনার রূপরেখা |
পরিপূরক স্বপ্ন নিয়েই পাড়ি দিই বাধ্যগত অনুভূতির নদী
কিংবা সমতার অথই সাগর |
তুমিও সাগর-সান্নিধ্যে যাও...
আনন্দ ভৈরবী শুনে ভলবাসাকে ট্যাগ করে দাও আমার দেয়ালে |
আমি তার জ্যোতির্ময় পরিচর্যায় বিভোর হই;
দেবাত্মাকে পরমাত্মার সাথে কোলাজ করেই
দেবোত্তর ভাবনায় হই উজ্জীবিত!
দেখি..
আমার চারপাশে কেবল তুমিময় রোদের লুকোচুরি খেলা |
কিশোরি আহলাদে উচ্ছলতার বিণুনী গাঁথি...
অতঃপর. স্নায়ুযুদ্ধের শিল্পবিদ্যায় সমর্পন করি
আমার আমিত্বের সবকিছু!
মন চিঠি
শাহানারা ঝরনা
প্রিয় বন্ধন ,
কখনও যদি একাত্ম হয়ে প্রশ্ন করো ঐযে আকাশ ,
কতটুকু বিশালতা তার?
বলব, খুঁজে দেখো বুকের অনন্ত আকাশে ,
পেয়ে যাবে উত্তর!
জানো তো,
জীবনের চারপাশে ভ্রাম্যমাণ বেদনার আনাগোনা চিরকাল,
আছে খুনসুটি,
ভালবাসা প্রেম ও বিরহ।
মায়াপাশে বেঁধে নেয়া ছোট ছোট অনুভূতি কণা
মানস-প্রতিমা হয়ে
ছায়া দেয় মনে ও মননে।
শাশ্বত সত্তা জুড়ে রীতিনীতির মাদল বাজে।
বদলে যায় মৌসুমি হৃদয়-ঋতু।
কবিতার পংক্তিজুড়ে সোনাময়ি রোদ হাসে,
সাদা ফুল ছুঁয়ে হাসে
কিশোরী বাতাস।
বাতাসের সেতারে বাজে মর্মরিত দিনের আহবান।
মরুভুমে নিরুপায় চাতক ধ্যানমগ্ন সারাক্ষণ।
আমিও চাতক চোখে
দূর থেকে এঁকে দেই সৌহার্দের চিত্ররেখা।
যেদিন লোকালয় ছেড়ে চলে যাব বহুদূর
অলক্ষ্যেই জড়িয়ে রবো ভালবাসার বন্ধনে,
আরাধ্য বেদিতে দেবো নির্ভয় পুষ্পাঞ্জলি।
ভিন্নতা থাকতেই পারে কল্পনা ও বাস্তবতায়।
ভয়কে না এড়ালে জীবন বাধাগ্রস্ত হয় ,
জটিল প্রবাহে ভেসে যায় সব!
চুপকথাগুলো নীরবে সাজায় স্বপ্নের মঞ্চ ,
সীমাহীন আকুলতায় আত্মনিমগ্ন হই ,
আত্ম-ক্ষরনের ভাষা অজানাই থেকে যায়।
এভাবেই পয়মন্ত হয় অনুভবের বারোমাসি।
শাসনহীন মনোজগৎ নিয়ে পুষ্পিত সুন্দরের বন্দনায় মাতি।
দলছুট ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রণ করেই অন্তরে বাঁধি
নিভৃত ভালবাসার রাখি-বন্ধন!
জীবনের হিসেব
দুঃসময়ের বিলাসীতায় আবেগী হয় মন
কষ্টে পোড়ে আঙুরবালার বোধবুদ্ধির বন
ভাবনারা হয় প্রতিবন্ধি নীরব চোখে জল
আঙিনাতে কুটুমপাখি ডাকে অনর্গল ..!
কেমনে , কোথায় যায় হারিয়ে ইচ্ছে নোলকটাও
কেউ বলেনা মেয়ে তোমার দুঃখ আমায় দাও
আচম্বিতে স্বপ্নগুলোও হয় যে ভাষান্তর..
ক্ষুধার আগুন নিত্য পোড়ায় পুতুল সইয়ের ঘর!
মন কালিতে চিঠি লিখে কাকে দেবো আর?
প্রাপক যারা- তাদের এখন বড্ড অহংকার ..!
প্রযুক্তির শাসন মেনেই করছে সবাই বাস
জীবন পথে আসে কতো
নতুন পূর্বাভাস!
আঙুরলতা হৃদয় তবু ফুল ও ফসলহীন
কেউকী ভাবে ফুল- পাখিদের কেমনে কাটে দিন?
ব্যস্ত সময় শুনি শুধু দুঃসময়ের ধ্বণি...
অন্তরেতে দেয়না দোলা ঋতুর আগমনী
মিঠেকড়া দিনের খবর যাচ্ছে কোথায় ভেসে
দিনান্তের ঐ বার্তা আহা কোথায় গিয়ে মেশে?
অভিধানের শব্দমালা নিত্য ফেরি করি ..
মিথ্যে কোন আশ্বাসেতেই মন সিন্দুক ভরি
নষ্ট বিবেক দ্রুত চলে.. একটুও না থামে
চেতনাকে বিক্রি করি পাঁচমিশালি দামে ..
ইচ্ছেকুটুম মন -বাড়িতে তবু বাঁধে বাসা
হিসেব যতোই গরমিলে হোক ফুরায়না তো আশা!
চেতনায় স্বদেশ
চারুশীলা হৃদয় বনে এখনো ছায়া দেয়
.শেকড়ের সেই প্রথম পাঠ ..!
জোনাকি আবেশ নিয়ে কত রাত কেটে যায়;
বিশ্বাসী শৈশব কাছে ডাকে বারবার!
কোনকিছুই আর উদ্দীপ্ত করেনা |
নাব্যতা হারিয়ে নদী কাঁদে
আমার মননের নদী ডুবে যায়
অপশক্তির উজানি ঢলে!
মঙ্গা আক্রান্ত চেতনা নিয়ে
. কি নির্বিকার বসে থাকি
মেধাকে বন্ধক রাখি অসংগতিময়
নেশার কলোনিতে |
নিপীড়িত মানুষের মনকথার বার্তাগুলো
যখন কেউ মস্তিস্কের দেয়ালে ট্যাগ করে দেয়
আমি সমাধানের সূত্র খুঁজে পাইনা!
অরক্ষিত জীবন যাদের , তাদের কথা ভেবে
অনুভূতি হয়ে যায় বিক্ষোভের নদী ..
কলমের কালি হয়ে যায় কষ্টের ছোপছোপ রক্ত!
ভাষারা হয়ে যায় যন্ত্রনার ইতিহাস!
ইচ্ছে করে পেশাজীবী জীবনের শেকল ভেঙে
নিজেকে সাজাই অন্যরকম সাজে ,
আবার প্রতিবাদী হই হাজারো বীরাঙ্গগণার মত..!
প্রিয় বর্ণমালায় গাঁথা কবিতার পাপড়িগুলো
পতাকার মত ওড়ে ....!
উড়ে উড়ে চলে যায় কোন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার আঙিনায়
কবিতার বাতাসে ভাসে ছেেলহারা মায়ের কান্নার আর্তি
ভাইহারা বোনের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর |
মানবতার শ্লোগানে যখন ....
গনজাগরণ মঞ্চ কেঁপে ওঠে
আমার রক্ত .কণায় সংক্রমিত হয়
স্বামীহারা বধূর আর্তনাদের সুর |
চেতনার আকাশে ভাসে শহীদ মিনার কিংবা
স্মৃতিসৌধের প্রতিচছবি!
ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিল
তাদের স্মরণে জ্বালি অতসী বোধের প্রদীপ!
ভাষা আমার মননের মাঠে ছড়ায়
শুচিতার সোনারং আলো!
যেদিকে তাকাই - যতদূরে যাই ..
অপার মমতায় ..আমার সত্তাকে জাগায়
রক্তে পাওয়া এই সোনার স্বদেশ |
নিমগ্ন চেতনার ভেতর
নিয়মতন্ত্রের ঘন্টা বাজে .
বৈষম্যের আলপথ পেরিয়ে ছুটে যাই
সমতা নদীর ওপাড়ে!
এলোমেলো সংলাপ
ঘুমহীন চোখের পাতায় বিষণ্ণ রোদের খেলা.
আমাকে পাহাড়া দেয় হলুদ প্রজাপতি ও মেঘরং ফুল!
সমুদ্র ভেবে সন্তাপের নদীতে ডুবাই জ্বলন্ত শরীর |
বিভেদের কাঁটায় ক্ষত হৃদয়ের মানসভূমি!
দীর্ঘ ব্যকুলতা; মৃত্যুময় নিস্তব্ধতা ,
সবকিছুর সমন্বয়ে চলে অবিরাম পথ চলা |
সুনিপুন শিল্পকর্মে দোলে রোদেলা ঢেউ!
বাতাসের আকুলতা নিয়ে সমৃদ্ধির পসরা সাজাই
পাতাঝরা বৃক্ষের শবদেহ ছুঁয়ে _
কখনো থমকে দাঁড়াই পথের মাঝে..!
ধোঁয়া ওঠা কফির কাপে সম্মোহনের নতুন
আবহ দেখে , অপেক্ষার মন্দিরা হাতে
নিশ্চুপ বসে থাকে টকশো'র উপস্থাপক!!
এস এম এস বার্তা আসে ....
" আমলকি বনের পাখি , রশিতে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে "!
খবর ছড়িয়ে পড়ে দিক- বিদিক;
আমাকে জাগ্রত করে রাঙামুখী মিষ্টি সকাল |