সৌরভ মজুমদার
ভাবনা যেমন
বেশ কয়েকদিন হল ভাবছি - নাকি বহুদিন ধরেই !
এই ভাবনার পোকাটাকে বোধহয়
এবার, দূর ক’রে দেওয়ার
সময় হল । চলমান ট্রেনের
রেকের মত, টর্নেডোর কিম্বা সুনামির
মত অনবরত তার নড়াচরা, তাড়া করা, অবিলম্বে থামানো দরকার ।
ব্রেক ক’ষে । মাথার সমস্ত কোষে কোষে যে ঘোড়দৌড়ের শুরু
সকাল সকাল, বাগে আনা যাচ্ছেনা কিছুতেই তাকে । মধ্য বিকেলে
গর্দানিবাগের পুরনো গির্জার
শব্দহীন প্রার্থনায়, দিনমান নাম সঙ্কীর্তনে,
কান পেতে শেষরাতের আজানে
রতিসুখের ঘুম ঘুম খেলায় বা
কাকডাকা ভোরে ঘুঘু পাখিটার
একঘেয়ে ঘুম ছাড়ার ডাকে ।
বাতাশশূন্য বয়ামের ভেতর
সুতোবাঁধা ধাতব পেন্ডুলাম এর মত সিম্পল
হারমনিক চলন তো আর নয়, ভাবনার। বোধশূন্য প্রতিবেশে তার চলা
এলোমেলো । ভবঘুরে যেমন। কখন
চাগাড় দিয়ে উঠে কখন নেমে যায়,
থেমে যায় নিজেরই বোধের পাশে, নিঃশব্দে, বোঝা দায় । মিল কত দর্শনে
আর দশাননে কেউ কেউ হয়তবা জানে
! এটাই আপাতত প্রাসঙ্গিক, অসহ্য
দুপুরে উপুর হয়ে।
অন্ত্যেষ্টি চিন্তার। হাহাকার বা ইচ্ছামৃত্যু ভাবনার, আগোছালো
শব্দবাগানে সম্পূর্ণ করা
যাক সশব্দে। শূন্য থেকে শুরু করে ফিরে যাওয়া
সেই শূন্যতেই । হেঁটমুণ্ড
ঊর্ধ্বপদ হয়েছি আবার । বেশ কয়েকদিন হল
ভাবছি - নাকি বহুদিন ধরেই !
এই ভাবনার পোকাটাকে…
-------------------------------------------
খবর পেলাম
খবর পেলাম ক’দিন আগে, তোমরা আসছ অনেক দিন পর, আর তুমি
সবার মধ্যে বেশ একটা খুশির
ভাব ছড়িয়ে দিতে পেরেছ, শুধু আমি
কোন থই পাচ্ছিনা ভেবে, কী হব, কী হওয়া উচিৎ, সত্যিই তোমাদের -
জানা হলনা আমি কে, সেভাবে তো দেখাই হলনা এতদিনেও আমাদের ।
এমন তো হওয়ার কথা ছিল না, ছিল কি সত্যিই ! কী বলি ! আমাদের, আমার
যে চেনা পরিসর ক্রমাগত ছোট
হয়ে আসা, তাতে কোন এক দিন যে তোমার
অভাব হবে ভাবি নি তখনও।
দেখা-অদেখা চরিত্রের মুখ বদলে বদলে গেলে, আমি
এখনও অবাক হতে থাকি, এখনও বিস্ময়বোধ জাগে, এখনও ভাবতে ভাবতে থামি।
কী বলে ডাকতাম তোমায়, মনে নেই আজ আর। সেইদিন ডেকেছিলাম কী ব’লে বলতো !
ভুলে গেছি। ভুলে গেছ তুমিও
কি, আর বাকি সবাই ! একে একে ভুলে যাওয়া সংগত -
জাতক-কথা। আমি কে, আমি কার, আর কত ক্ষত ভাবনা বয়ে নিয়ে
বেড়ানো, কে জানে !
তুমিও কি পেরিয়েছ কাশ ফুল
ঘাস ফুল বরফ-শীতল মন ছুঁয়ে দেখা সংবেদ সজ্ঞ্যানে !
--------------------------------------------------------
এই যে আজ
এই যে আজকের দেখা দুজনের, কত কত দিনের অদেখার
পারে দুটো অবয়বের রিকানেকশণ, তোড়জোড়হীন, মানুষের নয় –
দুটো সম্পর্কের । এর ভিত
গাঁথা হয়েছিল অনেক অনেক বছর
ধ’রে । সংস্কারে । ঘটনাটা ঘটল যদিও শোক সমারোহে । আর,
একটা অতীত হয়ে যাওয়া
মানুষমন, অনুঘটক। এই বুঝি চেয়েছিল সে
ঘটমান বর্তমানে । আজ জানতেও
পেলনা পর্দার আড়ালে যাওয়ার পর ।
এই যে তিনজন মানুষমানুষীর
তিনটে ডাকনাম ফিরে পাওয়া
এতদিনে, এত সম্পর্কের ভিড়ে, জন্মের দুর্ঘটনায় প্রাপ্তির
ওপারে,
তার ভিতও চলে গেছে পৃথিবীর
কেন্দ্রে । অটুট । ফুটন্ত লাভার
ভেতর আটকে থাকা জলস্তরে, বুড়বুড়ি কাটা গলিত পাথরের নীচে ।
নিজের সজীব অস্তিত্ব জানান
দিচ্ছে প্রাকৃত নিয়মে, বারবার, অর্জনের
সীমারেখা মুছে ফেলা টুকরো
টুকরো ছেঁড়া ছেঁড়া কথায়। ভালোবাসার ।
এই যে আজ দরজায় খিল দিলেই
পাটনা আর প্যারিসে কোন
পার্থক্য থাকেনা আর । জানলা
খুললেই কলম্বিয়া এসে মুহূর্তে মেশে
কেয়াতলায়, এও যেন মান আর বোধের যোগাযোগ । কুমু আর ক্যারলের ।
এর বীজও বাতাসেই ওড়ে ।
অন্তত উড়েছে এতদিন । মাটি পাওয়া বাকি ছিল
তার । পেল এবার । পেয়েই
সহজিয়া প্রেমে বিশাল বটগাছ । কিম্বা গভীর
অপ্রেমে চারাগাছ । যেন
বহুরূপী কর্ণকুন্তী আজকের রাস্তায়, মহাভারতের ।
---------------------------------------------
সহজিয়া
যদি তুমি নিজেকে বোঝাও, কোন ভুল হয়নি কোথাও
সব কিছু সমকোণে আছে, ভারী ভালো থাকা যায় তবে ।
তুমি যদি বুঝতে না চাও, অস্থিরতা কুরে কুরে খাবে
সারি বেঁধে কষ্টেরা এসে, সরাবে দুঃখের ঘোমটাও ।
স্বস্তি তোমার দূরে যাবে, স্বপ্নটা কবে আর দেখা হবে
সেই ভেবে সাত হাত স’রে, জানি তুমি জেগেই ঘুমাবে ।
চোখ বুজে তাই মনে মনে, ব’লে যাবে মিলে জ’নে জ’নে
মজে গেছি, ভ’রে আছি আমি, গলিত সুখের রাশি কিনে
প্রশ্নকেই ছুটি দিয়ে তবে, কেন খুশী থাকো না’ক সবে !
উত্তর জটিল নয় মোটে, বৃথা খোঁজো কানামাছি খেলে –
সহজ করে নেয়া শিখেই, সুবিধার সাথে আঁত হবে
আপোষের কণা গায়ে মেখে, যতসুখ বুঝিনি ত আগে ।
বোধ তবু ধিকি ধিকি জ্বলে, সকলের থেকে দূরে ঠেলে
আমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে, সযত্নে আপোষকে ত্যাগে ।।
------------------------------
আগুনের উদ্দেশে
আগুন ঝিলে নেমেছিলাম ভিজব ব'লে আগুনজলে
ডুব সাঁতারে আগুনসময়, দেখব ছুঁয়ে আগুন তলে ।
কষ্ট আগুন নষ্ট আগুন, আগুনব্যাথার সন্ধ্যাকালে
আগুনশিশির জমিয়ে রাখা, আগুন কথায় ঋদ্ধ হ'লে ।
নিশি আগুন ডাকল যবে, আগুন রাতের গল্পবলায়
আগুনপ্রপাত পেরিয়ে এসেই, জীবন ঝাঁপ আগুনমায়ায় ।
আগুন জীবন পার করেছি, সূর্য আগুন, আগুন চাঁদে
আগুন আকাশঘর বেঁধেছি
অগ্নিতরল সরল ছাঁদে ।
আগুনসঙ্গী আগুন সঙ্গী, আমার অগ্নিজন্ম শেষে -
নতুন আর এক আগুনজন্ম, অগ্নিবীজের সঙ্গে মিশে ।।