শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

চন্দ্রাণী বসু



চন্দ্রাণী বসু

দীর্ঘায়িত

কারফিউ ভাবনায় বোনা বিষণ্ণ মাদুরে
অচল ঘড়িটা রোদ পোহায়
ইকেবানায় সাজানো আদুরে কথারা
প্রজাপতি জীবনচক্রে যাপিত আজ
ঢেউয়ের মাথায় গাঙচিলের শিকারি চোখ
তাসের ঘর ধূসর পালকের ছোঁয়ায় তছনছ
সময় অকারণ বড় দীর্ঘায়িত হয়।



একটা ঋণী গল্প

পরদিন সকাল:
বাসি ফুলে মেয়েবেলার গন্ধ
এলোমেলো ছাদনা তলা
লেপ্টানো খড়িমাটি আলপনা ও
কপালের লাল সিঁদুর।
আহ্লাদী লাল বেনারসী আর
গাঁটছড়া,গাছকৌটো সামলানো ব্যস্ততা।
:
এরপর:
বাবার শার্টের বুকের অংশ ভেজা
পাঁজরের ভেতরে  অদৃশ্য কাঁপুনি
ল্যাপ্টানো কাজল,চন্দন
চালের মুঠো মা'র আঁচলে।
ঋণ শোধের স্টেজ রিহার্সাল।
পাড়ার লোকের দীর্ঘশ্বাস:
'মেয়েটা বাড়িটা বড় শূণ্য করে গেল'
:
একটি বার্ষিক গতি :
বর্ষা থেকে বসন্ত ।
মধ্যের গল্পটা দেওয়ালের আড়ালে।
:
তারপর:
লাল পাটভাঙা বেনারসী
কপালে চন্দন,ফুলের সুবাস
লাল কপাল ,পায়ে আলতা।
বাবার ছেঁড়া শার্ট সম্পূর্ণ ভেজা
পাঁজর গুলোতে কাঁপুনি  নেই আর।
মায়ের আঁচলে ছেটানো খইয়ের দু চারটি।
ঋণ শোধের মঞ্চাভিনয়।
পাড়ার লোকের একই দীর্ঘশ্বাস
'সতীলক্ষ্মীটা  বাড়িটা ফাঁকা করে গেল'
:
মরাল অব্ দ্য স্টোরী:
এই বার্ষিক গতিতে বাবা নামক মানুষটি
 টাকা যোগাড়ের লক্ষ্যমাত্রা
বহু চেষ্টাতেও ছুঁতে পারে নি।




শীতের ছবিকল্প

ছড়ানো কমলা খোসায় রোদ্দুরের ওম
শুষ্ক সম্পর্কে বনভোজনের আমেজ মাখে।
ফাটা ঠোঁটে তোর ভেসলিনীয় আবেগ
পোকাকাটা পুরোনো শালের স্মৃতিগুলো
সযত্নে লালিত হয় চন্দ্রমল্লিকার শিশির ভেজা শরীরে।
আমলকীর ডালে ডালে,পাতার নাচন
কুয়াশার ক্যাসমিলনে জবুথবু করে মুড়ে রেখেছি
আমার অমলতাসের প্রেম এখন পর্ণমোচী।
উলের কাঁটায় হলদেটে ভারী বিকেল।
দক্ষ হাতে বুনে চলি  মধ্য ঋতুর উষ্ণতা
তেল হলুদ মাখা আঁচলের অভ্যস্ত গল্পেরা
ঝুপ করে নামা সন্ধ্যেতে বড় এলোমেলো।
রোদ পোহানো আচারের তেল মাখা দুঃখগুলোকে
ছাদ থেকে নামাবার জন্য অকেজো ব্যস্ততা দেখাই।
অন্ধকার সিঁড়ি হাতড়ে নামতে গিয়ে চোখে পড়ে
নৈঋত কার্ণিশে আট পেয়ে বুনছে হিম ধরা ফাঁদ
ফুসফুস-পুস্তকে আঁকা পৌষের সর্বনাশের শেষ ছবিকল্প।




"থিম"

অচলায়তন ভিড়ে এক পা মেপে এগোনোর আগে,
হাজার চোখ মেপে নেয় শরীরের থিম স্ট্যাটিস্টিক...
গাঢ় লিপষ্টিকের আড়ালে লুকোনো থাকে,
কত শত অপাঠ্য  ইন্ডাস স্ক্রিপ্ট...
অ্যালকোহল আর পারফিউম দুইই উদ্বায়ী হয়,
ছুঁয়ে যাওয়া নেশার ভাসমান ধূলিকণায়...
ওয়াটার প্রুফ কাজলে ঢাকা পরেছে সব সর্বনাশ,
চড়া ফাউন্ডেশনে এ চিবুকের নোনা দাগ...
ভক্তির ব্যভিচারে পুণ্য অর্জনের ভড়ং আঁকা হয় সযত্নে,
মেক-আপের আড়ালে শুধুই আধুনিক থিম"সতীত্বের"আদিম নগ্নতা...




অসম্পূর্ণ থাক

ইচ্ছে করেই বৃত্তের পরিধিটা সম্পূর্ণ করি নি
ক্লিভেজ দূরের ফাঁক রেখেই
বরাবর ভেঙেছি পেন্সিলের শিষ...
পরিধির যাবজ্জীবনে বড় ভয়
বাসরের ফাঁক গলে
পঞ্চভূতের বড় নেশা  আমার...
ভরা জ্যোৎস্নার টাপটুপ ন্যাকামিতে
নষ্ট শরীর ভেজাতে চাই নি কখনো

পারলে আমায় বরং কৃষ্ণাএকাদশীর এঁটো চাঁদ দিস..