শাকিলা তুবা
এই হাত আমার নয়
তোমাকে খুন করেছি আমি
নিঝুম রাত্রির পথে
আঁকাবাঁকা হয়ে তুমি চলে যাচ্ছিলে
সাপ ভেবে আমি লাঠি চালিয়েছি
তোমাকে রক্তে স্নান করাচ্ছি
জঠরে কেঁপে উঠেছে ক্ষুধা
তোমাকে না হারাবার ব্যাকুলতা
অথচ আজ রাতেই খুন হচ্ছো তুমি
নিরুপায় আমার হাতে।
এই হাত রক্তমাখা
এই হাত জলের মতো ভেজা
হাতও কাঁদছে ব্যাকুলতায়
সুরমার রঙ লাল হয়ে উঠেছে
তুমি কাঁদছো কোন শোকে?
মৃত্যু তো এমন নয় রিফিউজি হয়ে উঠবে!
পলিগামী তোমাকে আমি ছেড়ে রেখেছি
বারবার মরেও তুমি মরো না
আমিই খুন করে বারবার ফিরে যাই
তোমার নিহত ভাবনারা
আমাকেও খুন করে রেখে যায় অকাতরে।
প্রেম চাইনি আমি অপ্রেমের দিনেও
এই দেখো আয়নায়
একটা ট্রেন হুঁশ করে চলে গেল
গন্তব্যের ইশারায়...
চোখ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে কাশবন
নির্দ্বিধায় পার হল
সিনাইয়ের চূড়া;
কয়েকটা খাঁড়ি।
ট্রেনটা ফিরে এল না অথচ
রেললাইনের স্লিপার থেকে পাথরগুলো
পায়ে পায়ে হেঁটে হেঁটে এল
কাশবনের কাছে
এবং অতঃপর...
আয়নার পারদটুকু
খেয়ে ফেলল দ্বিধাহীন।
কয়েকটা কথা
১
আঙ্গুল জুড়ে দেখো
জরীর খরতাপে
পুড়ছে ক’জনা
আঙুল খুলে দেখো
কিভাবে তারা উজানে যায়
পরস্পরের জড়াজড়ি
সম্প্রীতিতে।
২
বদলে গিয়েছে এই শরতের গতি
দৌঁড়ে চলে গেছে আকাশ
ছোট সাম্পানে ভেসে
টুকরো মেঘগুলোই এখন সঙ্গী শুধু
মার্বেল রঙা গণিকালয়ে
হুড়মুড়িয়ে বাড়ছে ভিড়।
৩
কিছু কিছু মানুষ নিঃশব্দে খুন হয়,
খুন হয়েও খুশবুদার হয়ে বাঁচে
নিরাপদ দূরত্ব নিয়ে খুনী
ভাব করে ভালবাসে।
জাজ্বল্যমান মিথ্যার উপর
একটি মানুষ মৃত্যুমুখি
আলোর নীচে সহসা পাখার ক্ষয়, অথচ
নির্বিঘ্নে চলে ঘাতক ও নিহতের মুকাভিনয়।
সহিষ্ণু
কে আর বলো ভাবাবে এমন
যখন এখানে তুমি নেই
কে আর এমন কাঁদবে বলো
অবেলায় উড়ে গেছে
যত শামুক চিলের ডানায়
কে জানে নাম তার?
কে জানে ব্যথা!
এখানে তবু অনেক মানুষ
রঙতুলি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
বিষণ্ন বিকেলের পাশে
এক লেকের স্থির জলে
তুমি তবু না থেকেই রয়ে যাও।
ভুল আর ভালোর বাসরে
সমাহিত হয়ে আছে চেনা পানির ঘ্রাণ
আমাকে রেখে তুমি কতদূরে যে যাও
ফিরে আসো বারবার ফিরে ফিরে যাও।
উভচর নিদ্রা
ঘুম ছুঁয়েছিল যে, সে নাকি হারিয়েছে দিশা।
মাঝরাতে হঠাৎ কোকিল ডেকে ওঠে
সাগর, পাহাড় ডিঙিয়ে সে তখন
ক্লান্ত
মধুতে পিঁপড়ে জমে না, সে রাতে জমেছিল
কুট কুট কুট সারারাত—
অতঃপর ভোরের আলোয় সে যেন কোথায়।
ঘুম ছুঁয়েছিল যে, সে হয়েছে আরো সাহসী
ঘুম হারানো জন তখনো নেশায়।
আসলে কাল রাতে চাঁদটার হয়েছিল কি?
সে নাকি বিছানায় শোয়া দুই মানুষকে
তিনজনে দেখেছিল!