শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

আল মামুন



আল মামুন

তোমায় মনে পড়লে

মহানগরের বুকে কখন ঘুম নামে?
জনপদ কি জেগে থেকে ক্লান্ত হয় না
না কি ওর বুকের মানুষগুলোর শ্রান্তিতে
ক্রমশ নুয়ে পড়া মনোভাবে
রোবট মানবে পরিণত হওয়া দেখতে জেগে থাকে।
.
আমার শহরে যখন ঘুম নেমে আসে
তোমার শহরে কি জেগে থাকো তুমি?
তোমার শহরেও চাঁদের ক্রমেই গোল হতে থাকা
কোমল রুপালি তরলে  ভেজে না তোমার মন?
.
আমার বারান্দায় ও গ্রিল ছোঁয়া চাঁদেরকণা
ঘুমন্ত শহরে আকাশ নিশ্চুপ প্রহরী
তারার তারায় আলোর খেলা
এই শহরে শিয়াল ডাকে না
যার যার প্রহর নিজেই ঘোষণায় অভ্যস্ত সবাই
এক একটি আয়তাকার ডিসপ্লে বন্দী জীবন!
আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে
এই ঐ শহরের মেয়ে, ' তুমি কি বুঝ?'
.
তোমায় মনে পড়লে আমার সব এলোমেলো হয়,
মেয়ে, ' তুমি কি জানো?'
ক্রমশ গোল হতে থাকা পলাতক চাঁদের ফিরে আসা
আমাকে গৃহত্যাগী জোছনায় ভিজতে প্রলুব্ধ করে
আমার তখন তোমার কথা বড্ড মনে পড়ে!
তোমাকে নিয়ে রুপালি তরল জোছনায় নুয়ে যেতে
তোমার শহরে ছুটে যেতে ইচ্ছে হয়!
মেয়ে, 'তুমি কি অনুভব কর?'
.
আমার শহর তোমার শহরের মত নয়
এখানে সময়ের বড্ড অভাব
তাই চাঁদ-জোছনা কিংবা তুমি-আমি
টাইমিং এ ও বড্ড হেরফের!
মিলে না সময়.. তাই তোমায় মনে পড়লেও
ইদানিং যাওয়া হয়ে ওঠে না
তোমার শহরে।
.
তোমার কথা মনে পড়লে
আজকাল বড্ড কষ্ট হয়..
ইচ্ছে হয় সব ভেংগেচুরে একাকার করি!
তোমার কথা ভেবেই আবার নিশ্চুপ..
মেয়ে! তোমার শহরও কি জেগে থাকে?
তুমিও কি.. জেগে জেগে ভাবো আমায়!
.
মেয়ে! তোমায় মনে পড়া এখন বিষম দায়!
তারপরও মনে পড়লে তোমায়
মন তোমার কাছেই ছুটে যেতে চায়!
'তুমি কি বুঝ মেয়ে, কতটা ভালোবাসি তোমায়?'





একদিন বিভুর সনে

বিভু! আপনি তো কিছুদিন
সুন্দরবন এলাকায় ছিলেন?
খুলনা আপনার তাই ভাল-ই দেখা আছে।
আপনার অবস্থানের সময়
শিল্পাঞ্চলের ভরা যৌবন!
মানুষ-যন্ত্রের মিলিত রসায়নে
আনন্দে ভারী এক বাতাসে ভেসেছেন আপনি।
.
আমার শৈশবে গিয়ে দেখে আসি চলুন...
হৃদয়গুলির রক্তাক্ত হয়ে ওঠার ইতিহাস
একটা জনপদের ইতিহাসের আগেই লেখা হয়ে যায়।
হৃদয় আর জনপদের রক্তক্ষরণের
বীজ কিন্তু বিভু
পেছনের সেই কাঁচা রাস্তার মাথা থেকেই শুরু।
.
ছিমছাম এক মহল্লা
ছবির মত সাজানো এক গ্রাম যেন!
আসলে জায়গাটা ছিল
বিভাগীয় শহরের অন্যতম কেন্দ্র বিন্দু।
ইটের সলিং বিছানো প্রসস্ত রাস্তার পাশ দিয়ে
চওড়া ড্রেণের কাজ শুরু হবে বলে শুনছিলাম।
আমি তখন কলাপাতার ঘোড়ায় চড়ে
ইটের রাস্তা দাবড়িয়ে বেড়ানো বালক
আত্মহারা.. নিঝুম নিমগ্ন সুখে!
নিতান্ত এক বালকের
আলোয় ঝলমলে বাল্য জীবন!

.
কিন্তু কি জানেন বিভু?
শত আনন্দ মাঝেও নিরানন্দ ঠিক-ই
আনন্দের হাত ধরে ধরে হেঁটে চলে.. বিষন্ন করে তোলে মন।
আমাদের ঐ জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে
খেলার ছলে দেখার মত করেই
আচমকা সামনে হাজির হল পরিবারতন্ত্র!
নেতৃত্ব দিচ্ছে মানুষের খোলসে অমানুষ!!
তখন আমাদের মানুষ-ই বুঝে আসত না বিভু
অমানুষ বুঝব কিভাবে?
.
শেষে মানুষ- অমানুষ মিলেমিশে
এক বিচিত্র সমাজে বড় হয়ে উঠতে লাগলাম।
যখন বুঝলাম একটু
শিখলাম ঢের বেশী

পেতে হলে ছিনিয়ে নাও
অন্যের নেবার আগে।
কোনোকিছুই কারো জন্য স্থির হয়ে
অপেক্ষায় থাকে না চীরকাল'
.
আপনার কি মনে আছে বিভূ
দেশে পলিমার দানা ইম্পোর্টের শুরুর দিকের সময়ের কথা?
একটা দেশের প্রধান নির্বাহীর অদূরদর্শিতায়
কিভাবে একের পর এক
পাটকলগুলি বন্ধ হয়ে যেতে লাগল!
আদিগন্ত বিস্তৃত ইমারতগুলির নি:সঙ্গ ছায়ারা
কায়া হারিয়ে নির্বাক মৌণতায় মৃতপুরী!
আর সেখানে আরেক আধাঁরের জগতে
কিছু নব্য ইম্পোর্টারদের নগ্ন উল্লাসমুখর দৃশ্য
এখন কারো চেতনায় একটুও কি ভাসে, বিভু?
.
মিলগুলির শ্রমিকদের পাওনা টাকা বুঝে নেবার সময় এলো..
কেউ পুরো কেউ আংশিক পেলো
কেউ কিছুই পেলো না
পাশের অন্য আরো পরিবারগুলোর মত
আমরাও বিভু পথে বসে গেলাম!
এক মৃত শিল্পাঞ্চলের
হাহাকারের শব্দে
আমার অনেক রাত ঘুম ভেংগে গেছে
আমি শব্দ শুনেছি কেবল.. কানে বেজেছে
কিছুই করতে পারিনি সে এক দু:সহ সময় ছিল বিভু।
.
এরকম অনেকগুলি পরিবার
তাদের হাহাকারগুলো নিয়ে এক হল
বাঁচতে হবে বাঁচাতে হবে
প্রয়োজনে ছিনিয়ে নিতে হবে
না খেয়ে থাকা বড্ড কষ্ট বিভু!
দিনবদলের কিংবা পরিবর্তনের নি:শব্দ শ্লোগানে
রাতের ঘুম ভেংগে গেলে তাই
এই পরিবারগুলোর কোমল যুবকেরা
হিংস্র হয়ে উঠতে থাকে..
ব্যবহারকারীরা ওদের ইচ্ছেমত ব্যবহার করে
তাই যুবকদের চরিত্রগুলি ক্রমশ: মিথে পরিণত হয়।
এক সিনেম্যাটিক জীবন পর্দার বাহিরে
ক্ষমতাধর অন্য পুরুষে রুপান্তরিত করে যুবকদের!
'ফাইট না সাইট' আহবানে
নীরবে সরে যাওয়া ঐ সময়ের প্রশাসনের নত মুখ
যুবকদেরকে আরো উদ্ধত অহংকারী করে তুলেছিল।
কিন্তু একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কখনো
বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকা যায় না
বুঝে আসেনি কারো।
.
তারপর.. বিভু?
কেবল-ই ইতিহাস! বলির.. খুনের..ক্রোধের!
না পাওয়ার বঞ্চনায় অক্ষম ক্রোধে তাড়িত হয়ে
অন্য এক সমাজের বাসিন্দা হয়েও দেখেছি-
কোথায়ও সত্যম শিবম সুন্দরম এর মূল্য নেই।
.
অনেক কথা বলে ফেললাম কি বিভু?
যাবার আগে আরেকটু তবে বলে যাই-

প্রতিটি সময়ে এক রক্তাক্ত জনপদে
নীলচে স্বয়ংক্রিয় ধাতব ক্ষমতাবান যুবকেরা
একের পর এক বাতাসে মিলিয়ে যেতেই
অন্যরা হিংস্র হয়ে উঠেছে..
একসময় তারাও হারিয়েছে সুদূরে..
তখন আরো একদল জায়গা দখল করে
মারে আর মরে.. আবার জন্মায়!
এ ভাবে জড় থেকেই যায়..
বিপ্লবীরা কখনো-ই মরে না
তাই না, বিভু?




তুমি পাশে থাকলেই

আমি যখন তোমার থেকে দূরে থাকি
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায়
নিজেকেই নিজে আঁকি।
ইদানিং কল্পনা-প্রবন মন বেজায় দুষ্টু
তোমার বেলায় অনুভবহীন কেন বলতো?
রুষ্ট কি কোনো কারণে তাই দিচ্ছে ফাঁকি!

এভাবেই দিনগুলি বুড়িয়ে যায়
রাতগুলিও থুথথুরে
এরই মাঝে ক্ষীণ জোনাক জ্বলা রাত তুমি!
দিন-রাত আসলেই এখন আর
অর্থ রাখে না কোনো
সময়ের প্রভেদ ভুলে যাই সপ্তাহের ঐ দিনটিতে আমি!
তুমি পাশে থাকলেই এমনটা হয়।

আমি যখন সবার সাথে
নিরন্তর ভালোলাগা মন্দলাগাদের
নিয়ে লাগালাগি করে করে ক্লান্ত
কখনো বড্ড হতাশ ও হই,
তুমি তখন কিভাবে যেন
তোমার বাসা থেকে প্রচুর ট্রাফিক ঠেলে
ষাটটি সিঁড়ি ভেংগে
আমার জীর্ণ চৌকিতে আলো হয়ে বসে থাকো!

তুমি কতটা কাছে আছ
কিংবা আমার কতটা পাশে থাকা তুমি চাও
সে চায়, তিনি চান, ওরাও..
আমি-তুমি-সে দের কাছে দূরে থাকা
ইদানিং তেমন অনুভবে আসে না।

তুমি পাশে থাকলেই কবিতা শিশুর জন্ম হয়
অণুগল্পরা কৃষ্ণচূড়ার লালে নিজেকে সাজায়
সেখানে সবুজের চেয়ে লাল বেশী
জীবনবোধের পাতায় পাতায়
রং ঢংয়ের চেয়ে বোধ বেশী।
তুমি পাশে থাকা মানেই
ভালোলাগাদের পুড়ে পুড়ে প্রেম হওয়া
তোমার একটুকু ছুঁয়ে দেয়া যেন
উপন্যাসের পরতে পরতে
উল্লাসের শিহরণে চরিত্রগুলির অবাক আন্দোলন!

তুমি পাশে থাকা আমার বর্ণান্ধতার মুক্তি
রংয়ের আলোকচ্ছটায় থেকে থেকে বর্ণীল হওয়া
তোমাকে পাশে নিয়ে মাত্র একটি সুর্যাস্ত
কারো হাজার বছর ভালোবাসার দায় শোধাতে সক্ষম!

তুমি আমার দায় নও
তাই তোমাকে নিয়ে আরো হাজার
সুর্যাস্ত দেখতে চাই
অস্তরাগে ভানু বিসর্জনের রক্তিমতায়
আমিও ক্রমশ লাল হতে চাই
অধিক থেকে অধিকতর.. যা দেখে
এক সময় লালেরা আকাশের নীল থেকে
কষ্ট খুঁজে নিয়ে লজ্জায় মুখ লুকোবে।

জীবন কতগুলি?
সবগুলি জীবন দরকার নাই আমার
আগামি একটি জীবন তুমি পাশে থেকো আর
মাত্র একটি জীবন ... শুধু কাছে থাকলেই চলবে।





হুমায়রা
**

পিচ ঢালা পথটি ধরে হাঁটতে হল দীর্ঘক্ষণ
মোড় ঘুরতেই সামনে একটি চার দোকান
বেঞ্চে কজন খদ্দের অলস সময় কাটাচ্ছে বেশ
শুনছে সিডি প্লেয়ারে তপনের গান।

গান শুনে একটু অবাক হলেম যদিও
দুরন্ত এই সময়ে পড়ন্ত বেলার টান!
পছন্দ-অপছন্দের টানাপোড়নে আজ
কথা আর সুরে ভরে না মন-প্রাণ।

নিজের দৃষ্টিসীমায় সর্পীল পথটি চলে গেছে বহু দূর
দু'পাশে ইউক্যালিপটাস গাছের ঝাঁঝালো পাতার ঘ্রাণ
বাউরি বাতাসে ভেসে বেড়ানো ঝরা পাতাদের গান
নিমেষে ছুঁয়ে যায় সিক্ত হৃদয় হয়ে একমুঠো রোদ্দুর।

চার কাপ হাতে একাকি নিজের সাথে দৃষ্টি নিবদ্ধ দূরে
শেষ বিকেলের মায়াবী আলোয় মৌণবিভোর আপন সুরে
চেয়ে দেখি সেই পিচ ঢালা পথ সবুজ আলোয় হাসছে
ঝরাপাতা মাড়িয়ে অচেনা তরুনী এক ধীর পায়ে হেঁটে আসছে।

সামনে পিছনের পথ দুটি হায় মুহুর্তে হারায় ভরা নদীর বাঁকে
স্মৃতির টানেল জুড়ে এক নষ্ট অতীত হিরণ্ময় দ্যুতিতে কাঁপে
মনে পড়ে যায় হুমায়রার কথা ভুলিনি আজো যাকে
অপেক্ষার প্রহরগুলোয় বিরক্ত হতে হতে ওর ভ্রু-গুলো কি এখনো কুঁচকে থাকে?’

প্রথম কোথায় দেখেছিলেম ওকে পড়ে না মনে বিস্মৃতি দানা বাঁধে
লাইব্রেরির সিঁড়িতে কি ক্যাফেটেরিয়ায় নাকি ঝুপড়ি দোকানের একটাতে
ভিড়ে চিরে চ্যাপ্টা শাটল ট্রেনে ভালবাসার টানে মুখরিত গানে
তারুণ্যের উদ্দামতায় হঠাৎ বড্ড নরম লেগেছিল কি তাকে?
  
নরম  কোমল ফুল! ওটা কি কদম ছিল না ওর হাতে?
তিনটি পাতায় ছাওয়া দৃশ্যমান বর্ণীল  বৃত্তাকার জীবন
ঠিক হুমায়রার নিজের মতন যে এসেছিল এক প্রাতে
প্রতিটি আঁধার রাতে দ্বিপ শিখা হাতে জ্বলেছিল সর্বক্ষণ।

হুমায়রা একটি ফুল যে ছিল আমার হৃদয়ের গন্ধে ব্যকুল
কত নিশ্চিন্ত ছিল ঐ জীবন ভেবে মন আজও হয় আকূল

এক ঘন বরষায় হেঁটেছিলেম পথ রেখে হাতে হাত প্রহ্লাদে মেতে মেতে
কামনায় পুড়েছি বাসনায় ভেসেছি  হেসেছি জল-জোছনায় ডুবে যেতে যেতে।

স্মৃতি পলাতক হলে বড্ড জ্বালায় পোড়ায়
সিগ্রেটের মত নিজে পুড়ে ছাই হয়ে বাতাসে মিলায়
রেখে যায় মরণব্যাধি ভালোবাসার উপহার
ধীরে ধীরে চুমু দেবার!
স্মৃতি- ব্যাধি- মরণ- হারানোর বেদনা- কষ্ট
সব শেষ হতে হতে শেষে নি:শেষ হয়ে বাতাসে মিলায় বিশ্বাস
হুমায়রা পলাতক স্মৃতি হলেও আজও সে রয়েছে হয়ে কারও
ভালোবাসায় জড়ানো নি:শ্বাস!





সকল বর্ডার খুলে দাও

আমি একাত্তুর দেখিনি
গল্প শুনেছি
বাবার কাছে, আমার মায়ের কাছে!
আমি মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনে বেড়ে উঠেছিলাম।

আমাদের সেই সময়ের বসার ঘরে, বঙ্গবন্ধুর এক বিশাল পোর্ট্রেইট ছিলো
বাবা আমাদের সব ভাইদেরকে অনুভব করিয়েছিলেন-
পোর্ট্রেইটের মানুষটা-ই একটা দেশ!
বাবারা কখনো মিথ্যে বলেন না বাবুদের কাছে
তাই পাইপ হাতের মানুষটিকে এক আলাদা ভূখন্ড বলে মনে করা শুরু করেছিলাম।

পনেরই আগস্ট, তিন নভেম্বর কিংবা একাশি'র সার্কিট হাউসের নৃশংসতা
আমার বালক বেলায় সেভাবে অনুভবে আসেনি
তবুও বুঝেছিলাম নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে কোথায়ও।

মৃত্যু আমার কাছে সাদা কাফনে মোড়ানো
আগরবাতি আর লোবানের ঘ্রাণে প্রকম্পিত কিছু বিষন্ন প্রহর বলে মনে হতো!
তাই বুলেটে ছিন্ন জনকের দেহ কিংবা সবুজ বিপ্লবের কর্ণধরের ঝাঁঝরা হৃদয়
মৃত্যুর কোনো সংজ্ঞায়-ই পড়তো না আমার কাছে।

আমি একাত্তুর দেখিনি
নুর হোসেনকে দেখেছিলাম হৃদয়ে বাংলাদেশ আর গণতন্ত্রের মুক্তির বারতা নিয়ে
স্বৈরাচারীর উদ্যত বুলেটকে সামনে থেকে হৃদয়ে টেনে নিতে
তখন  আমার অনুভবে মৃত্যু একটু একটু বুঝে আসছিলো কেবল!

আমি একাত্তুর দেখিনি
তবে কানসাট দেখেছিলাম
ততদিনে আমি পূর্ণ অনুভবে অনেক কিছুই বুঝতে শিখে গেছি
আমি কৃষকের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখে মৃত্যুর যন্ত্রণা অনুভব করতে চেয়েছি।
একুশে আগস্ট দেখেছি
রমনা বটমূলের ছিন্নভিন্ন অংগপ্রত্যংগ আমাকে চিৎকার করে করে মৃত্যুর কথা বলেছে!
সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা কিংবা চার্চ গুড়িয়ে দেয়া বোমার বীভৎসতা
আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে!

আমি একাত্তুর দেখিনি
পিলখানার নারকীয় হত্যাকান্ড কিংবা হলি আর্টিজানে রক্তাক্ত মানুষ দেখেছি
আমি একাত্তুর দেখিনি
তবে ইদানিং রোহিঙ্গা জেনোসাইড দেখছি
সেখানের লাশের স্তুপ আমার ভিতরে কোনো অনুভূতির সঞ্চার করছে না
মৃত্যু দেখে দেখে কি আমি নির্বোধ হয়ে গেছি?

একাত্তুরে দাদারা বর্ডার খুলে দিয়েছিলেন বলেই আজ আমি লিখতে পারছি
হে বাংলাদেশ!
তোমার জন্মের কথা স্মরণ করে হলেও রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াও
আজকের রোহিঙ্গা শিশুকেও আমার মতো অনুভবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করো।
আর, মৃত্যু!
তুমি আসবেই যখন ওদের জন্য আরো একটু শান্তিপ্রদ হও!

বাংলাদেশ!! তোমার
সকল বর্ডার খুলে দাও।।