অলভ্য ঘোষ
ইন্দ্রজাল ছিড়ে
মায়াবী পালকের ছোঁয়ায়
মহাশূন্যে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
যখন মাধ্যাকর্ষণের বাইরে বের হয়ে যাচ্ছিলাম
রুঢ় বাস্তবের চোখ গেল খুলে।
এক লহমায় নেমে এলাম
সেই চেনা প্রেমহীন প্রেমিকের ছদ্মবেশে
ইন্দ্রজাল ছিড়ে।
একটা বাঁশি আছে সাথে ।
সুর নেই।
ঈগলের থাবার মত এই গনগনে মধ্যান্নে
কেউ ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে না
মেষ শাবকের মত আমাকে উড়ানে ।
আমার ডানা নেই উড়বো কেমনে।
প্রেমের ডানা ধার দিতে পারো
আমার বাসনার অলিন্দে।
আমার প্রেমিকা আছে অনেক
কেবল প্রেম নেই।
মরীচিকা নয় তা কুয়ার পাশে ঘরা
পিপাসার আহবানে দেওয়া সাড়া।
সত্তা
আমরা কেউ কাউকে জানি না।
জানা সম্ভব নয়।
মক্কার ছবি দেখলে যেমন হজ যাত্রা হয়না।
তেমনি লেখকের ভাবের গভীরতায় না পৌঁছাতে
পারলে লেখক কেও বোঝা যায় না।
সমুদ্রের উপরটা দেখে যেমন বোঝার উপায় নেই;তার গভীরতা।
মানুষের চেহারা দেখেও বোঝার উপায় নেই তার
প্রজ্ঞা বা যন্ত্রনা।
সমুদ্রের উপরটা যেমন চঞ্চল ভেতরটা তেমন শান্ত।
মানুষের ভিতরে যদি ঢুকতে পারা যায় একটা সুকুমার
সুশীল মন
অতি বড় নৃশংস খুনির ও মেলে।
সত্তা একটাই
বাহ্যিক পরিবর্তনে সত্তার পরিবর্তন হয় না।
বরফ আর জল দুটো আলাদা নয়।
একি উপাদান দেব আর দানবে।
উষ্ণতার পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করে
বাহ্যিক রুপান্তর।
ভিতরটা একি থাকে
তার কোন পরিবর্তন নেই।
লাশ
ঠাণ্ডা হিম ঘরে পড়ে আছে আমার দেহটা ।
কেউ আমাকে সনাক্ত করছেনা ।
আমার পচাগলা হৃদপিন্ডটা
কামড়ে খাচ্ছে একটা ধেড়ে ইঁদুর ।
আমি নগ্ন ।গায়ের আধ ময়লা
পোশাক টাও ডোম অতি যত্নে খুলে
নিয়েছে ।হাতের সোনার আংটিটা
তুমি যে আমাকে দিয়েছিলে সেটা
প্রেমের চিহ্ন না কি রতির তৃপ্তি জানি
না ;পুলিশ অনেক আগেই পকেটে
পুরেছে।আমার কপাল ফাটিয়ে
ডাক্তার ঘিলু ঘেঁটে পটাশ না ফসফরাস
নিয়ে চলে গেছে ।
তুমি এখনো কেন এলে-না !
পোস্টমর্টেম করা বেওয়ারিশ লাশ গুলো
একটা একটা করে ভ্যানে তুলছে ডোম ।
এর পর একসাথে গাদা করে টায়ার জড়ো করে
কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বেলে দেবে
কোন রকম রীতি রেওয়াজের ভনিতা না করে ।
লাশের জাত কেউ জানে না ।
হিন্দু -মুসলিম-খ্রিষ্টান- শিখ-জৈন
একসাথে পুড়বো আমরা ।
কিন্তু একি আমার পাশে ছত্রিশ
নম্বর ডেডবডি টা মেঝেতে ফেলে
তার উপর কোলাকুলি করছে কেন ডোম !
ওকি ওর নিকট আত্মীয় ?
ও দুলছে দুলকি চালে ; হাঁপিয়ে বিরতি নিচ্ছে।
ও । আত্মীয়তা শিশ্নের !
সেটা মনুমেন্টের মত খাড়া হয়ে আছে ।
মেশিন গানের মতো তাক করে একটা
মৃত নারী শরীরের দিকে ।
কে ও ? আরে এ তো তুমি ।
আমার অন্তরের আত্মীয়া ।
আমি ওকে ঠিক-চিনেছি ।
ওকে সনাক্ত করে নিয়ে যাব এই নরক থেকে ।
কিন্তু হায়!আমি কেন উঠে বসতে পারছি না ?
লোকটা আবার দুলছে পাগলের মতো ।
এই থাম ...
এই লাশ কাটা ঘরে
আমার কণ্ঠস্বর প্রতিবাদী হয়ে
উঠতে পারছে না ।
রেপের অনিয়ন্ত্রিত ঝড়ে
ওর উদ্ধত ঔরস ছিটকে এসে পড়েছে আমার মুখে।
কি বিচ্ছিরি গন্ধ !
আমি যা পারিনি পেরেছে একটা ধেড়ে ইঁদুরে ।
ওর বীর্য মাখামাখি লিঙ্গটাকে কামড়ে ধরেছে সে ।
ডোমটা ছটকাচ্ছে ।
আর ইঁদুরেরা সমবেত হয়ে
ধেড়ে টার দেখাদেখি খাবলা খাবলি করছে
ডোমের তাজা শরীরটা নিয়ে।
হয়তো এও লাশ হবে আর কিছুক্ষণ বাদে ।
বেওয়ারিশ না হতে পারে লাশতো ।
হে ভগবান যদি কখনো ভুল ক্রমেও কোন পূণ্য করে
থাকি
তিল সমান ;আমার পুনঃ-জন্ম দাও
মর্গের ধেড়ে ইঁদুর করে ।
ভার্চুয়াল প্রেম
তুমি আমায় পছন্দ কর ?
ক্লিক করে দাও লাইকে ।
উপহার পাঠাতে চাও ?
পাঠিয়ে দাও একগাদা
গোলাপ ফুলের ছবি ।
আমি গন্ধ খুঁজবনা দু চোখ
ভরে শুধু দেখব তোমাকে ।
তুমিও আমাকে দেখতে চাও;
চাও উষ্ণতা নিতে ?
কল কর ভি ডি ও চ্যাট অপশনে ।
তুমি আমায় ভালবাস ?
একটা ছোট্ট ম্যাসেজ করে দাও
আই লাভ ইউ ।
আমি বুঝে যাব তোমার
ভালবাসার গভীরতা ।
কিন্তু প্লিজ রক্ত মাংসের আমাকে
দেখতে চেও না ।
আমার অনেক
কদর্যতা আছে ।
এক তরফা
দেখলে তুমি শুধু আমাকে ওপর
ওপর দেখতে পাও ।
থ্রি ডাইমেনশনে বুঝবে
আমারও অনেক জটিলতা , অজ্ঞতা ,
খামতি আছে ।
তোমার ও কি তাই ?
কি বলছ ; পুরু মেকআপ করা মুখে ;
ধুর পাগল ঘামে আর আকাঙ্ক্ষায়
কোন আস্তরণয়ই থাকে না ঘনিষ্ঠ
মুহূর্তে ।পেঁয়াজের খোলার মত
একটা একটা পাপড়ি ছাড়িয়ে
নিজেদের বুঝে ফেলার পর যদি এ
প্রেমের ঝাঁজ না টেকে ! তার চেয়ে
ভালো তুমি থাকো শুধু একটা ইমেজে
বাঁধানো ছবির ফ্রেমে । হৃদয়ের
অ্যালবামে তোমার পাতা উলটে দেখব ;
যখন ওয়েব লিংক খুঁজে পাব না ।
নিঃস্ব
তুমি আলো চাইলে আমি গোটা সূর্যটা তোমায় দিলাম।
তুমি জল চাইলে
আমি সাত সমুদ্র তেরো নদী দিলাম।
তুমি বাতাস
চাইলে আমি মহাকাশ ধরে এনে দিলাম
তোমাকে।
তুমি ভালবাসা
চাইলে হৃদপিণ্ডটা উজার করে তুলে দিলাম
তোমার হাতে।
আর কিছু
চাওয়ার থাকে না তোমার!
আমারও আর কিছু
দেওয়ার নেই।
ভালবাসায়
নিঃস্ব ত্রিভূবন।