ইন্দ্রাণী সরকার
শ্রাবণের আসা যাওয়া
যতবার এই পথে সে আনাগোনা করে
জলভরা মেঘ হয়ে জাপটে ধরে
পা দুটো অবশ হয়ে যায়
নিজে কাঁদে আমাকেও কাঁদিয়ে দিয়ে যায়
চোখের পাতায় রেখেছে শ্রাবণ
অতিথি বাতাস হয়ে ফিরে ফিরে আসে
নির্বিবাদে ছড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি সুবাস
তমিস্রা রাত্রে করতলে কিছু স্বপ্ন ফিরিয়ে দেয় |
সীমারেখা
পাখিদের সিম্ফনি ক্রমশঃ দূরে মিলিয়ে যায়
একটু দূরে ঘাটের ধারে নৌকোর ছলাত ছলাত
বাতাসের মৃদু স্পন্দনে কাঁপে ইউক্যালিপটাসের
ছায়া
কিছু কিছু জোনাকি হারিয়ে যেতে যেতে আঁকড়ে ধরে
হাত
জনপদের দূর সীমারেখা ধীরে ধীরে আবছা হতে থাকে
তারার মালা দুলতে থাকে শহরের প্রতি কিনারায়
নৈসর্গিক প্রতিভাসের প্রতি ছত্রে স্মৃতির দাগ |
আকাশ দেবতা
ভোর রাতে ফুল তুলতে যাওয়া মেয়েটি দেখে
সকালের নরম স্নিগ্ধ আলোয় ভরেছে আকাশ
কুয়াশা হেঁটে আসে ঘাসের পায়ে পায়ে
সবুজে মিশে আছে শিশিরের দ্যুতি
পাথরের গায়ে গায়ে আবিরের কাঁচা রং
ঠিক সেই মুহুর্তেই উপচে পড়া আকাশভেদী আলোয়
ঝরনার কোল বেয়ে নেমে আসে
এক শ্বেত শুভ্র আকাশ দেবতা |
মাত্র অনুলিপি
পূর্ণিমার আলোয় ঋষি তাকিয়ে থাকেন সুদূর আকাশে
সেই দৃষ্টিতে ত্যাগ আর বৈরাগ্য পরিস্ফুট
পাশেই স্বাতী, অনুরাধা, পুষ্যা, রোহিনী আদি
বৈরাগ্যময় ঋষি একটি ঠিকানা দেওয়া পাখির চিন্তায়
মগ্ন
পাশে তার শুষ্ক ইউক্যালিপটাস
সে রাতের শিকারী পাখিটির আশ্রয়স্থল
সামনে তার যেন একটি আয়না
সেই আয়নায় চোখ রেখে তিনি দেখেন
ঠিকানা না দেওয়া একটি দন্ডায়মান মোমবাতি
রাত জাগা নক্ষত্ররা ভেড়া গোনে
পাঁচ, চার, তিন, দুই, এক
চরাচর ভেসে যায় এক অপূর্ব গরিমায় ||
তোমার বসে থাকা
শুকনো পাতার মধ্যে তোমার বসে থাকা
টুপটাপ শব্দে খসে পড়ে এক একটা পাতা
তোমার চুলে লেগে থাকে উদাসীন মায়া
সৃষ্টি ভেসে যায় দিগন্ত ছাড়িয়ে সুদূর
নীলিমায় |
গানের সুরে ভেসে যায় সারা চরাচর বিশ্বনিখিল
সেই সুরের আবছা আবেশে ভরে থাকে মন
একদিন তুমি পাখা মেলে উড়ে যাবে বহুদূর
শুধু রঙগুলো লেগে যাবে দু' চোখের পাতায় ||