শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

মনিকা আহমেদ



মনিকা আহমেদ

নিঃস্পন্দিত চোখের শূন্যতা

ভালোবাসে সুখ নেই কোনো
ভালোবাসায় অমরত্ম নেই যেনো
ভালোবাসায় ক্ষয়ে যায় পাহাড় অরন্য শুধু,
দুঃখ ছুঁয়ে থাকে পাশাপাশি
আধাঁর কালোয় রোদ্রছায়া মাখামাখি।
তোমার নিঃস্পন্দিত চোখের অতুল চাহনি
কাঁপুক, কাঁদুক, চাইনি আমি  ।

তোমার উতল ঢেউয়ের মায়ামৃগ ছিল ধূসরতায় জড়াজড়ি
তোমার অমন ভালোবাসার নোনাজলে
আমি দেইনি ডুবসাঁতার সুখের গড়াগড়ি।

ভালোবেসে সুখ কোথায় তুমি বলো?
নিরন্তর ভয়ের কাঁপন
প্রজাপতি হঠাৎ উড়ে যাবার মতন
ভয় হয় যদি ঘুমঘোর কেঁটে যায় হঠাৎ
সুখের কপাট যদি খুলে যায়!
জেগে উঠে তোমায় পেয়েও,যদি হারাই?

অস্থির আবছা আলো-ছায়া অহরহ
মৌনতার নদী হয়ে মিশে যায়,
আমাকে টেনে নেয় শূন্যের কাছাকাছি
অন্তহীন শূণ্যতায় ডুবে গ্রাস হবো কেন,মিছেমিছি ?

এতসব হারাবার ভয়ে,
ভালোবাসিনা ভেতরে-বাহিরে
ভূমিকম্পের কাপঁন ওঠে হৃদয়ের কোণে
খুঁজিনা তোমায়, নিঃসূর্য নির্জনে;
অফুরান জলে কঠিন আবেগে অথবা নীলিমার তলে-
স্পর্শের আড়ালে;
কিংবা ভীষণ অভিমানে ।


পুড়তে চাইনা আলোড়িত জোৎস্না রাতে
তোমার অস্থির নিমন্ত্রণে  ।


অভিমান

জানোই তো,
হেরে যাওয়া শুধু করুণাশ্রয়ী মানুষের পক্ষেই সম্ভব।
আমি হারতে শিখিনি কখনো,
গহীন জলেও ডুবিনি কোনদিন।

এ জীবন আমাকে যা দিয়েছে
আমি দু'হাত পেতে নিয়েছি।
আমার চাওয়ার ঘর পূণ্য,
প্রতিক্ষার দু'টি চোখ যদিও শূণ্য_
তবু শোনো,
আমার দু'চোখে অজস্র ধূলোবালি ভেদ করে করুক।
গাছপালা ভেঙ্গে আটকে যায় যাক।
আমার মায়াভরা চোখ হোক অন্ধ;
তবু'তোমাকে আমি দেখতে চাইবে না কোনোদিন!
আমার ভিজে যাওয়া,
অতলজলে ডুবে যাওয়া অভিমানী চোখ তোমাকে খুঁজবেনা আর ।

তুমি অতুল আঁধার কালো রং
তোমার'ই হাত ধরে বহুদূর পাড়ি দিতে গিয়েও,
এখানেই থেমে গেলাম বরং



বৃষ্টি বিলাস

বর্ষার নিঝুম কালো রাতে
চলো বৃষ্টি মাখি দুহাতে
শুরু হোক আমাদের বৃষ্টি বিলাস
ভরা বৃষ্টির ছাঁটে ভেসে যাক
কিছু বানভাসি অভিলাষ
আমরা হয়ে যাই দুজনে
প্রকৃতির লাশ ।


ভেতরে বাহিরে বর্ষণ
কাছাকাছি দুজন
চুম্বনে কম্পন?এ কি সর্বনাশ!




অপেক্ষা

তুমিই বলো তোমাকে কি ভোলা যায়?
তবু তুমিই হবে,শেষ যুদ্ধের রক্তের মত লাল,সবচে' প্রিয় পতাকা আমার।

বেঁচে থাকবার তীব্র আর্কষণে  দ্বিতীয়বার স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠেছিলাম,
কিন্তু এ আমি কোথায় এলাম!
এখানেও সেই একই যন্ত্রণা;
দিগন্ত জোড়া ঘনহীন,মেঘহীন
চারিদিকে আমি ছাড়া কেউ নেই_
তাহলে!
তাহলে, এ যন্ত্রণা কিসের?
ক্রমশঃ যন্ত্রণাটা তীব্র বেগে বাড়ছে....

আমি আর কতকাল নিজের মনকে বহন করব?

অপেক্ষা.........!!



তুমি কি এখনো নির্লিপ্ত?
আমি জানিনা তোমাকে কোন শিশু বাবা বলে ডাকে কিনা! জানিনা,তোমার কোলে সমুদ্র আর নদী, সাগরের উত্তাল ঢেউ হয়ে হুটোপুটি খেলে কিনা।তুমি বাবা হয়েছো, নির্লিপ্ত মানব? খুব জানতে ইচ্ছে করে। প্রকৃতির জলতরঙ্গের শব্দ তুলে ওরা তোমায় অপার আনন্দে ভাসায় কিনা, আমি জানিনা। একমুঠো রোদেলা জীবনের স্পন্দন পেয়েছো কি-না, তা-ও জানা নাই আমার। চারিদিকে যখন মরুভূমি.. শীতের জানালায় কারো ছায়া কুয়াশার ফাঁকে_ ধোঁয়াসা ভেবে,মন নীলাভ হয় কিনা খুব জানতে ইচ্ছে করে, জানো? মাছরাঙা পাখির মতন তোমার স্বপ্নের নদী আজও জলছায়া ভেঙ্গে অনন্ত আকাশ আর ক্ষমাহীন কঠিন আবেগে তুমি কুয়াশার দ্বীপে একখন্ড শিলা হয়ে আছো কিনা, কে জানে! বলো, তুমি কি বাবা ডাক শোনো?সমুদ্র আর নদী কি সমস্ত কোলাহল ভেঙ্গে শ্রান্তির মায়াময় ছায়াতে, শব্দ তুলে হাসে না? ওরা কি তোমায় 'বাবা' বলে ডাকে?বলো,বলো----


সমস্ত দিন শেষে গভীর রাত্রি ভেঙ্গে যখন তুমি নীড়ে ফেরো আর ঘুমন্ত শিশুর বন্ধ চোখের ভেতর অপলক চেয়ে থাকা দেখো, নিজেকে কী খুব বেশী অপরাধী মনে হয় না, বলো?
আচ্ছা, তুমি কেন এতটা নির্লিপ্ত?