জাফর পাঠান
সত্যাদর্শ
এমন এক যুগের বাহনে- করেছি
আরোহণ
মসৃণ পথ রেখে- অপথে যার
নিত্য বিচরণ।
বলি যদি চালক ভাই- এপথেনা
ওপথে যান
চালক ছুটে দ্বিগুণে, যায় যাক আরোহীর জান।
এমন এক যুগের সমাজে- করছি
বসবাস
ডানে-বামে অনৈতিকতার ফণাধর
ফিসফাস।
নীতিকথা বলতে গেলে- অট্টহাসির
উপহাস
বায়বীয় অভিযোগে জুটে-
কারাবাস উপবাস।
এমন এক যুগের সৌরবলয়ে-
ঘুরছে ধরা
শুধু অমানিশার নিশুতি, দিনের আলোর ক্ষরা।
সৌরজগতের সৌর থাকলেও
হারিয়েছে আলো
যত আছে গ্রহ-উপগ্রহ- হয়েছে
নিরেট কালো।
কালোয় কালোয়- জগতে সমৃদ্ধ-
অন্ধ মতাদর্শ
দলবেধে করছে বন্দি প্রমিত
সত্যের সত্যাদর্শ।
আজব চরাচর
যাকে করার কথা ডর ভয়-
করছিনা তাকে
বিলিয়ে দিচ্ছি নিজকে
ভোগবাদের মোহবাঁকে,
আছি আজ থাকবোনা কাল- ভাবিনা
আজকাল
করি শুধু স্বার্থান্বেষণ-
বিকাল আর সকাল।
এত-ই বিভোর বেহুশ, অপরে নাই খবর
নিজে কুকর্মের নটবর; বিপরীতে কবর,
চোখে পড়েনা দুখী আর
অসহায়দের ব্যথা
কি করুণ যন্ত্রণা আর গুমট
কান্নারা হেথা।
অন্ধ-বধির-মুক ক্ষমতা, শুধু হাঁকি হুঙ্কার
দেখি স্তুতি, দেখিনা নিরীহের ঘৃণিত ধিক্কার,
লুটের নেশায় লুটেরা তোলে-
তৃপ্ত বুঁদবুঁদ
নিজে খাই চাল, অভুক্তদের জন্য পঁচা খুদ।
অপরকে মেরে গড়ি নিজের অট্টালিকা
ঘর
আপনকে করি পর, আজব এক চরাচর।
ইচ্ছাধীন
সৌর বলয়ে ঘুরছে মেদিনী-
একটু নয় বাঁকা
ঘুরছে এই মানব চক্র-
গাণিতিক সুত্রে আঁকা,
প্রতিটি প্রাণ বুনে-
সৃষ্টির নতুন নকশি কাঁথা
ভিন্নভিন্ন তাঁতি হলেও একই
তাঁতে মাল্যগাঁথা।
প্রাণের প্রাণেশ্বর- অগনন
রূপে করে ধারণ
দেহে দেহে তিনিই করে দেন
সময় নির্ধারণ,
খেলারাম খেলছেন দেহে দেহে
প্রাণ বিতরণ
আর নশ্বর শরীর নিয়ে- আমরা
ভুলি মরণ।
মনকে করেছে স্বাধীন-
দেহধারীর ইচ্ছাধীন
নিজস্ব সুরের সুরলহরী তুলে-
বাজাচ্ছি বিন,
প্রাণের অধিপতি- নিবেই
প্রাণধারীর হিসাব
নিষিদ্ধ পথে হেঁটেহেঁটে যতই
এড়াই কিতাব।
স্রষ্টার সৃষ্টি জগতে-
সৃষ্টির আছে মহা রহস্য
ভাবুকমনা ভাবুকেরা- বুঝেন
তার উদ্দেশ্য।
উম্মুখ
হৃদপিন্ড এফোঁড়-ওফোঁড়
ছেঁদিয়া ত্রিশূল হানে
কত দুর্বহ দুর্গতি মননে-
মন-ই তাহা জানে,
অক্সিজেন বিহীন পবন-
সূর্যবিহীন গগন
দমবন্ধ অন্ধ কুঠরে- অযাচিৎ
ত্রস্ত মগন।
রক্তাক্ত সমাজে- আহত
মুমূর্ষু বিলাপেরা কাঁদে
দেখে ফোঁসায় জড়গ্রহ-
বক্ষবিদীর্ণ আর্তনাদে,
লেলিহান অগ্নিশিখা পৌঁছায়-
সপ্তাকাশ শিখর
শোষিতের অগ্নি, বিস্তৃত যন্ত্রণার- দন্ত নখর।
সত্যাসত্যের দেহ ভাসে নদে-
সীসার খন্ড নিয়া
তটিনী কোলে বীর সেনানী
ফুলেল বিছানা হিয়া,
গহীন বনে জীবাস্ম হয় ভস্ম-
নিত্য সন্তর্পণে
তরু-লতা-পাখি সাক্ষী, মনুষ্যত্বহীনতা অর্পণে।
কত আশার নক্ষত্র ঝরে-
নিরাশার বিভীষণে
নিশ্চুপ বিদ্রোহের মনে ভয়-
বিশেষ বিশেষণে,
খুঁজে পথ-হাতায় মুক্তি-
বিধি বিধানের নয়নে
অপেক্ষার প্রহর গুণে গুণে-
ইচ্ছা রাখে চয়নে।
মুখিয়ে থাকে মুখরেরা- গাইবে
মানবিক গান
দলান্ধের বন্ধ কপাট ভেঙ্গে-
করবে খান খান।
শান্তির কেতন
মানুষরূপে জন্মেও- নিজকে
বলতে পারিনা মানুষ
যদি কর্মে আর চিন্তায় উড়াই-
কুটবুদ্ধির ফানুস।
ঘুমন্ত বিবেক জাগিয়ে কর্মে
যদি নাইবা দেই স্থান
পশুতে পশুতে হয় বসবাস-
মানুষ করে প্রস্থান।
মানবের নেই অপকর্ম, বলাটা সত্যের অপলাপ
কাঁটাযুক্ত ঢালেতে বাস করে
শুভ্র সুবাসিত গোলাপ।
মানুষ-ই যদি হই, বিবেক হবে আমার মতাদর্শ
দলদাস হয়ে বেঁচবোনা নিজ
বিবেক বুদ্ধি আদর্শ।
পাপীকে পুরস্কৃত করে- যদিবা
বলি আমি পয়মন্ত
নিঃসন্দেহে তবে আমি এক কপট
দুর্বৃত্ত জলজ্যান্ত।
বিশ্বের সব মানুষের জন্য-
সমভাবে কাঁদলে মন
তবেই পাবো খুঁজে- শান্তির
রাজসিক সিংহাসন।