রিয়া রিয়া
প্রতিচ্ছবি
আজকাল গভীর রাত পর্যন্ত তারাগুনি।
চিনে নিতে চেয়েছি বারবার নিজেকে।
আমার আমিকে আমার কাছে মেলে ধরে
সবটাই বুঝতে চেয়েছি,হয়তো যুঝতে চেয়েছি।
ঝড়ের আগের রাঙা মেঘের মতো
শব্দেরা একে একে নেমে আসে
হৃদয় চিরে আঙুলের রেখা বেয়ে।
কবিতারাও অনেকটা আমারই মত
স্বচ্ছ, নির্মল,আর অনায়াস অভিমানী ।
বেশি কিছু চাওয়া ছিলোনা কখনো,
হতাশাও নেই, কোন প্রত্যাশাও নেই।
আজকাল আমি হঠাৎ করেই শব্দ হারাই,
বাক্যেরাও মাঝ পথে চুপ করে থেমে যায়।
তবুও আমি চেয়ে থাকি,প্রায় মিলিয়ে যাওয়া
আলোর রং স্বচ্ছ করে অপেক্ষা করি,আর
খুঁজে বেড়াই আমার আমিকে গোচরে, অগোচরে।
মেঘ সাম্পান
হিম হিম রাত আর রাতচরা পাখি,
নিরিবিলি খুঁজে নিক চারকোন এঁকে
আকাশের কুচি কুচি তারা গোনা যাক।
এক ফালি তুলে নেবো মেঘ ভাঙা চাঁদ।
পথ জুড়ে পাতা জালে মরণ ফাঁদ।
আনমনা সেই জন মনে শুধু থাক
আলো চোখে এক টানে তার ছবি এঁকে
বাদ বাকি আর কিছু সব ফিরে যাক।
মিটমিটে আঁধারের টিমটিমে ভালো
মন পেতে তুলে নিই সকালের আলো।
একাবোকা সেই জন কোল কাছে পাক
সুর তুলে বাতাসের আনাগোনা বাড়ে
আধো সুরে ভেসে আসে মন ফেরা ডাক।
অংবং-এ মেঘেদের টমটম গাড়ি
গুটি গুটি হাঁটি দিক শব্দেরা বাড়ি।।
ফুলেদের যত রেনু আঁজলায় ভরে
ঘুরেবেড়াই মেঘেদের রামধনু চড়ে।
শুনে
চলি রিমঝিম কুয়াশার গান,
বয়ে যায় তিরতির মেঘ সাম্পান।
মুক্তি
কাগজের নদীতে শব্দের জোয়ার উঠুক
ছিঁড়ে যাক যত শব্দের শৃঙ্খল,
সমস্ত বন্দী শব্দদের আজ মুক্ত করে দিলাম।
উড়ে বেড়াক তারা আপন খুশিতে,
এতো বছরের জমানো শব্দগুলো হয়তো
উড়াল দেবে সমস্ত বায়ু স্তর পেরিয়ে
স্বর্গের সীমানা ছাড়িয়ে
কিংবা ওই কুকুর ছানাটির মতো ভয়ে
নিজের জীবন
নিংড়ে দেবে আর্তনাদ করে।
আচ্ছা এই সিদ্ধান্তে কোথাও কি কোন
পাহাড় ভেঙে পড়বে অভিমানে?
স্থির হয়ে যাবে কি কোনো খরস্রোতা নদী?
সুনামি আসবে কি? ভুমিকম্প ?
না কোথাও কিছুই হবে না, হয়তো
শেষ বারের মতো জ্বলে উঠবো আমিই!
আর কোনো এক কুয়াশা মোড়া সকালে
কোনো এক পথের বাঁকে হয়তো
দেখা হবে মৃত্যুর সাথে,
জানি চেটে পুটে খাবে সে
আমার রক্ত -মজ্জা - মাংস
এই পৃথিবী নিশ্চল হয়ে
দেখবে আমার মরন দৃশ্য ...।.
মন খারাপ
এই শব্দ এক্ষুনি তাকে ছুঁয়ে যাক
আজ যার সবচাইতে মন খারাপ,
অযথা শব্দবাণ ভুলে যাওয়া যাক।
সাতকাহনের ঘুর্ণিপাকে বয়ে যাওয়া,
মনকুচি উড়ে উড়ে ঘর-জুড়ে বেড়াক।
হাবিজাবি কত জনা কত কথা বলে ।
জানা অজানা মন ভাসে অশ্রুজলে
রাতচরা সব কথা ভুলে যাওয়া যাক।
আনাচকানাচে থাকা আনন্দকুচি যত,
নেমে আসুক ফুরফুরে হাওয়া ঘর-জুড়ে,
এককুচি তুলে রাখি মন পরাগ মুড়ে।।
শব্দ চিতা
শব্দের সৃজনে, ছন্দে,বিষাদে, অভিমানে,
অভিশাপের অলঙ্কারে ক্ষত বিক্ষত আজ,
পূর্বরাগের খড়-কুটো দিয়ে,
সাজিয়ে নিচ্ছি আমার চিতা।
হাজারো শব্দবাণের আঘাতে,
দগদগে হয়ে ওঠে গোপন ক্ষত।
সাধ হয় আবারও ইচ্ছে ডানায়
ভর করে উড়ে যেতে সেই স্বপ্নের
পাহাড়ী গ্রামে। সেই স্বপ্নের কুঁড়ে ঘরে।
শেষবারের মতো আগুনের আলিঙ্গনে
পুড়ে যাক যত ইচ্ছে, অভিশাপ,অপবাদ।
চিতার আগুনে মুছে যাক শেষ দাগ টুকু।
আগুন তার শিখায় লিখে দিক আকাশে, স্বহা ..
জ্বলে যেতে যেতে তবু একটা হাত খুঁজে,
তুলে দিতে চাইবো আমার শেষ ছাইটুকু।
আর বলে যাবো আমার শেষ
প্রেমিকের নাম ছিলো আগুন।।