জব্বার আল নাঈম
জিকির
গুলবদন,
তোমার রূপে অন্ধ হয়ে পথ হারায় একবিংশ শতাব্দী।
এশিয়া- মেরিকায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
পুড়ে গেছে জাপান ধ্বংস বোমে
ফিলিস্তিন উদ্ধাস্তু শিবির
আদর্শহীনতার খরায়
বেপথে আফ্রিকা
মরছে আদিবাসী অস্ট্রেলিয়া
ভেঙে পড়ছে মানুষের শির
আজও পত্র পল্লবে গুলবদন গুলবদন জিকির।
ছুরি
সব হারিয়েও যদি একবার দাঁড়াতে স্রোতের বিপক্ষে
কামারশালা গ্রামের কাছে
যারা ধরে এনে আগুনে পুড়িয়ে
নীল জলে ডুবিয়ে
মস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে ছুরি;
জীবাত্মা থেকে দূরে বহুদূরে; আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁদছে রমণী।
সেদিন ক্ষতের অতলে ডুবে গেছে জলের সমস্ত আয়োজন;
স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শ্যাওলা লতা-পাতা
জড়িয়ে
বিলকুল হলো না স্থির;
অথচ, পাড়ার বখাটে তোমাকে ঢেলে
ধুয়ে নেয় রক্তমাখা ছুরির শরীর।
অপেক্ষাগুলো ছুড়ে ফেলেছি
সদরঘাটে শহরের মরা নদী বাঁকা হয়ে শুয়ে আছে-
মালবাহী জাহাজ অদৃশ্য প্রবল রক্ত স্রোতে
সদরঘাটের কলাবিক্রেতা কুলি ও কামলা মানুষ
ওপারে প্রিয়জনের অপেক্ষা- ঢাকা টু চাঁদপুর
পরিত্যক্ত নদীর উপর ছোট ব্রিজ; ব্রিজে গাড়ির বহর
আমি ধনাগোধা দুপুর রোদের মতো নিঃসঙ্গ
মা অথবা অন্য কেউ অপেক্ষার নিঃসঙ্গতায়
হাঁটাহাঁটি করেন।
অপেক্ষার ঘাড়ে আয়-রোজগার, বিয়ে, মায়ের সুখ
স্বামী-ফেরত ফাতেমার দ্বিতীয় বিয়ে
অসুস্থ আব্বার চিকিৎসার খরচ
অতি মেধাবী ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি
প্রিয় শিশুমেলা স্কুলের সভাপতি
দীর্ঘ কবিতা লেখা আঁকা কাগজ
আর চাকরির বিনিময় কয়েক লাখ টাকা।
অনেকগুলো নান্দনিক অপেক্ষা একত্রে এক জুম্মাবার
শহরের ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলেছি- হয়তো তোমাকেও।
বর্ণবাদ
একজন কালো মানুষের সামনে প্লেটভর্তি শাদা ভাত!
কালো কালি লিখে শ্বেত ইতিহাস;
মানুষের পাত্রে রূপ পাল্টায় প্রকৃতি!
কালো চোখে সুন্দর বর্ণনা লিখি।
বৈষম্য
তিনবন্ধু চিড়িয়াখানার ঝোপঝাড়ের সামনে আড্ডা- আলাপে মগ্ন। হঠাৎ একজন চিৎকার করে বলল, পাঁচ হাজার টাকাসহ আমার ম্যানিব্যাগ হারিয়েছি। চিৎকার শুনে চিড়িয়াখানার টোকাইদল খোঁজাখুঁজিতে নামল। প্রথমজন টোকাইদলের উদ্দ্যেশে, যে ম্যানিব্যাগ খুঁজে পাবে তাকে ৫০০ টাকা বখশিশ দেবো!
দ্বিতীয় বন্ধু আড়চোখে তাকিয়ে বলল, যে হারানো ম্যানিব্যাগ খুঁজে
পাবে তাকে ১০০০ টাকা বখশিশ দেবো।
তৃতীয় বন্ধু নির্বিকার ভঙ্গিমায়; যে ম্যানিব্যাগ খুঁজে পাবে
তাকে সব টাকাই দিয়ে দেয়া হবে!
এরপর থেকে আলাদা হতে থাকল জাত, ধর্ম ও বর্ণ! বাড়তে থাকল
মানুষে মানুষে বিদ্বেষ!