প্রণব বসুরায়
যাপন চিত্রাবলী
এক
পোস্টম্যন চিঠি দিয়ে গেলঃ
বন্ধ খামের ভেতর একটা হলুদ পাতা
ও তার বিবর্ণ ইতিহাস...
#
আসন্ন হেমন্তে,কুয়াশার মধ্যে
তার ঝ'রে যাবার কথা--ঠিক ছিল
কথা ছিল পুজোয় হিল্লি-দিল্লি ঘুরে আসার
কাউকে শুভেচ্ছা, কাউকে আদর পাঠাবার
#
এ-ও ঠিক, ইচ্ছে আর অনন্তের মাঝে
অসীম শূন্য আকাশ সীমানা
#
হন্তদন্ত পোস্টম্যান চ'লে গেল ঘন্টি বাজিয়ে---
খামের ভেতরে এক মৃত্যু-সংবাদ ছিল--যা
স্থানীয় কাগজেও ছাপা হ'বে না
দুই
এখানে ঢাক নেই, নেই স্রোতস্বিনী
পাতার মর্মর-- সেও যে কোথায় !
#
বসে আছি সরযূর কোল ঘেঁষে
নদী এত শব্দহীন বয়?
#
মানুষেরা জাঙ্ক ফুড ও পানীয়ের সাথে
কেঊ হাঁটে ঢাল বেয়ে, কেউ বসে পাথরসঙ্গমে
শাটার বন্ধ করে, কারো কারো
এ সময়ে ক্রয়ের কথা আবশ্যিক মনে পড়বেই...
#
এখানে ঢাক নেই, নেই স্রোতস্বিনী
এখন মহুল বনে পাতাও পড়ে না
তিন
যাপনের চিত্রগুলি হারায় কোথায়? সিন্ধু নর্মদায়?
প্যালেটে শুকনো রঙ, পাশে রাখা না ধোয়া বুরুশ...
পেয়ালা-পিরিচে স্তুপ ছেঁড়া কাগজের
#
চিত্রকর গেলো যে কোথায়---দূর ব্যাবিলনে !
#
#
জানি, জানি এ প্রকার নিষ্ক্রমণ
প্রথাসিদ্ধ নয়
চার
পাথর-বাগানে ঈশ্বর নেমে আসে
ভাঙা আয়নায় উজ্জ্বল মুখ ভাসে---
#
উজ্জ্বল মুখে কলুষ লেগেছে নাকি
কিছু জানা আছে, কিছুটা এখনও বাকি
#
তারারা তবুও সেখানে ফেলেছে আলো
বহুদূরে আজ বিদ্যুৎও চমকালো
#
চমকালো, তাই এখানেও আলো-ভাষ
আঁধিতে লেগেছে সূর্যের অবকাশ
পাঁচ
ধরা যাক সব ছিলো বিলকুল ফাঁকা
আমি তাও ঢুকতে পারি নি অক্লেশে--
অক্লেশ শব্দটি খুবই প্রাচীন, তাও
খসে পড়া কোন তারা বলেনি,'এসো,
আমার ঘরেতে আজ অন্নভোগ খাও--
একটু জিরোও তার আগে, পা ধোওয়ার জল
এই দিকে আছে, শীতলপাটি রেখেছি বিছিয়ে...'
#
দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছি কোন ঝঞ্ঝা আছে কিনা
অথবা বখাটে গোয়েন্দা কোনখানে সাপ-লু্ডো খেলে,
শিক্ষক কিভাবে শিখিয়ে দেয় অন্তর্ঘাতের কলা কৌশল
আর ধরা-মাছ নিচু জলে খাবি খেতে থাকে
#
এইসব নিরীক্ষণে, আমিও কিছুটা বদলাই
ওয়াচ টাওয়ারে উঠে কে আর আগ্রাসী বাঘের দিকে
সমর্থনের পতাকা নেড়েছে !
#
বন ভেসে যাচ্ছে চাঁদের বন্যায়
এখন একাই আছি --সেই জলে সাঁতার কাটার...