অলভ্য
ঘোষ
পরম
আত্মা
পৃথিবীতে প্রকৃত বন্ধু
কি নিঃশ্বাস এর মত ?
নিঃশ্বাস রুদ্ধ হলে দম
আটকে আসে।
যেদিন নিঃশ্বাস সাথ
ছেড়ে দেয়;
জানি অনিবার্য মৃত্যু।
না চাই না এমন বন্ধুতা।
পৃথিবীতে সত্যিকারের
বন্ধু কি ছায়া সঙ্গী?
সারাক্ষণ নেউটা হয়ে
ঘোরে।
গভীর অন্ধকারে সেও সঙ্গ
ছাড়ে।
সেতো শুধু লাইমলাইট
খোঁজে।
আমার গায়ে আলোক যদি
থাকে সেও আছে।
আমাকে নয় সে
আলোকরঞ্জনকে ভালবাসে।
না চাই না এমন ভণিতা।
একটি বন্ধু চাই খাঁটি, সাচ্চা, নির্ভেজাল, আদি ও
অকৃত্রিম!
কে সে?
চেয়ে দেখি এতকাল যাকে
অবজ্ঞা করে বন্ধু খুঁজেছি মানুষের দ্বারে;
আজ সে ছাড়া আমার আর কেউ
নেই।
কত বার কত অন্যায় কাজে
বাঁধা দিয়েছে সে বিবেকের সাজে।
কতবার কত সততায় জেগে
উঠেছি পুণ্য আত্মায় ।
অন্তরেতে বসত তার
মৃত্যুর পরেও সে থাকবে আমার।
সে আমার পরম আত্মা।
ক্যানিবালিজম
কয়লা খনির ভূগর্ভে আটকা
পড়া মানুষেরা
কয়েক দিনের মধ্যে যেমন
নরখাদক হয়ে ওঠে
সতীর্থকেই খুবলিয়ে
খুবলিয়ে খায় ।
আমরাও কোথায় যেন তেমনি
হয়ে পড়ছি ।
বেরোজগার, ভ্রষ্টাচার, দুর্নীতি
এসবের মধ্যে
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র
মানুষের বেঁচে থাকার
কোনো অধিকার আমাদের নেই।
আছে সব ভুলে থাকতে
জিও সিম।
আটকা পড়ে গেছি আমরা।
ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে
পরছি।
বন্য যৌনতা, আদিম
রিপুগুলো উসকে দিতে
অনবরত বিজ্ঞাপনের আলো
এসে পড়ছে
আমাদের ঘিলুর ভিতর।
সস্তা বিনোদনের
সুড়সুড়ি দিতে দিতে
গভীর ভাবনা চিন্তাগুলো
অবৈধ পুকুর বোজাই এর মত
বুজিয়ে চলেছে।
একটা উলঙ্গ বাজার।
ক্যানিবালিজম।
অদৃশ্য এক শিকলে বাঁধা
জ্যান্ত নরমাংস ভক্ষণ।
বেঁচে থাকার তাগিদে
দিনগত পাপক্ষয় করে চলেছি ।
এর মধ্যে সৌন্দর্য
খুঁজতে নামাও বাতুলতা।
পাপ কিসের!
জীবনের মূল কথাই বাঁচার
সংগ্রাম।
এ কঠিন সত্যের মুখে আমি, আপনি, আমরা।
সব ভুলিয়ে বাস্তব থেকে অতিবাস্তব, more than reality!
নৈস্বর্গ লোকে যে কবি
ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় আমায়
সে রিলায়েন্সর মতো
আনলিমিটেড ডেটা।
বাস্তবে দুই মিনিটে
স্খলিত হয়ে যাবে,পানু ছবিতে
পড়ার নামই নেই।
অ্যান্ড্রয়েড
মাল্টিপ্লেয়ার গেমস!
আমাদের সব জয় Modern Combat !
দুঃস্বপ্নেরা
এখানে কেবল খাওয়া ঘুম
আর মৈথুন
বাকি কিছু নেই। এর জন্য
যত আয়োজন।
আত্মার জন্য কিছু নেই।
মানুষগুলো পিশাচের মতো হয়ে যাচ্ছে
এখানে কেবল দুঃস্বপ্নেরা
ঘোরা ফেরা করে ক্লেদাক্ত জীবনের হাহাকার নিয়ে।
স্বপ্ন একমাত্র সুন্দর
হতে পারে জীবনের সুচারু যাপনে।
এখানে আমি সুন্দরের
পিপাসু। কঠোর সত্য সুন্দর করে চলেছি পান।
প্রস্ফুটিত জেসমিন
নিকড়ে যেমন সুগন্ধি তেমনি স্বপ্ন জীবনের নির্যাস।
জীবন সুন্দর হলে স্বপ্ন
গুলোও সুন্দর হতে বাধ্য।
চিৎকার
সারাদিন যে কত চিৎকার
ঘুরে বেড়াচ্ছে
কান পাতলে তা বোঝা যায়।
মনোনিবেশ করলে দেখি
আমিও একটা চিৎকার।
হুংকার মাত্র।
মাথা ফেটে যেতে চায়;...
যদি সব চিৎকারগুলো তুমি
শোনো।
কানে হাত চাপা দিতে হয়
তবু কাঁপতে থাকে কানের
পর্দা।
লাউড স্পিকারের মতো।
আসলে আর একটুও জায়গা
নেই
এই পোড়া দেশে;
যেখানে পার্লামেন্টের
কচকচানি নেই।
অলি গলি পেরিয়ে; রান্না
ঘরে
ভাতের হাঁড়ির ভেতরে
ঢুকে পরেছে।
একটুও শান্তি নেই এ
পৃথিবীতে।
নেই স্বার্থের
দাপাদাপিতে কমতি।
খাঁটি
সোনা
খাঁটি সোনায় খাদ নেই।
কিন্তু যখনই তা দিয়ে
ইচ্ছা মত গয়না গড়বে লোকে।
স্যাকরার হাতে পড়ে
সোনার বিশুদ্ধতা হারাবে।
মানুষের ও দশা সোনার মতো;
যখন সে কারো ছেলে কিংবা
কারো বাবা,
কারো প্রেমিক কিংবা কারো
স্বামী
অথবা কারো বন্ধু কিংবা
শত্রু হয়ে ওঠে;
এই সংসার স্যাকরার
টুংটাং হাতুড়ির বারি খেতে খেতে
গড়ে ওঠে একটা মানুষেরই
হরেক রূপ।
যেমন একটা সোনার তাল
থেকেই হরেক গয়না হয়।
সেই ছোটবেলার মানুষটি যত
বুড়ো হয়
ভার্জিনিটির ততো রোজ
ক্ষয় হয়।
বিশুদ্ধতা হারায়।
স্যাকরা যতবার গয়না ভেঙে
অন্য গয়না গড়ে খাদ
মিশিয়ে চলে।
আমরাও আমাদের প্রতিটি
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে
অপ্রিয় সত্য কথাগুলো
লুকিয়ে কত যে মিথ্যের আশ্রয় নিই
তার হিসেব নেই।
-হ্যাঁ আমি তোমাকেই ভালবাসি; পৃথিবীর
আর কাউকে নয়।
এ যে কত বড় মিথ্যে কথা
আমরা যখন যার প্রেমে পড়ি
বলে বসি তাকে। তা আমাদের
ছাড়া ভালো
আর কেই বা জানতে পারে।
-তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
এ যে কত লোককে বলা হয়ে
যায় সমগ্র জীবনে
তার হিসেব নেই। অথচ মরে
গেলে চিতাটুকু পুড়তে যেটুকু সময়
কেউ মনে রাখবে না। মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, প্রেমিকা, আত্মীয়,
বন্ধু কেউ না। অথচ সারা
জীবন ভর
আপন আপন করে গেলাম
সকলকে।
গরুর সাথে গরুর গাড়ির
গাড়োয়ানের যে সম্পর্ক
আমাদের সাথে সংসারের
সম্পর্কও তাই।
মাল বওয়া এ সংসারের তাই
সংসার ও আমাদের সেবা
শুশ্রূষা করে একটু
জলপানি খাবার ও বিশ্রামের সুযোগ দেয়।
এটুকুই।
গরু মরে গেলে গাড়োয়ান
যেমন কাঁদবে এই ভেবে ;
কে এবার তার গাড়ি টানবে
। সংসারও তেমনি কাঁদে
প্রত্যাশার পাত্র
হারালে।
তারপর মরা গরুর যে দশা
ভাগাড়ে। মানুষের দশাও বেটার
কিছু নয় আগুনে পুড়ে
ছাই হবে কিংবা কবরে গলে পচে মাটি।
এ সংসারে মুনি ঋষি থাকেন
জলের মধ্যে তেলের মত।
কখনো তেলে জলে মিশ খায়
না।
তারা যে তেল না জল বোঝার
উপায় নেই।
জলে মিশলে দেখবে ভাসছে।
ভাবখানা এমন আহা সবাই
যেন কত আপন।
অন্তরেতে তেল জানে তাকে
পুড়ে আলোকিত হতে হবে
একমাত্র সলতের সাহায্যে
কুপিই তার আধার।
কুলঙ্গিই তার স্থান।
বাকি কুপি নিয়ে অন্ধকারে তুমি বাঁশবনে
এখানে সেখানে যেখানেই
ঘোর না কেনো; সবটাই অস্থায়ী।
এ সংসারে যাদের গাত্র
কচু-পাতার মত তৈলাক্ত পিচ্ছিল
শোক, তাপ, ভাব, ভালবাসা
কিছুই গায়ে মাখে না।
একমাত্র খাঁটি তারাই
খাকতে পারেন।
বাকিদের কোন উপায় নেই
মৌলিকতা টিকিয়ে রাখার।
আপস না করে থাকার।
মৌলিক মানুষ পৃথিবীতে
নেই বললেই চলে।
আর মানুষ যত খাঁটি হয়
সত্য উচ্চারণ করে
মানে ব্রহ্মা জিভে
অধিষ্ঠান করেন।
সেই প্রকৃত ব্রাম্ভণ
হয়ে ওঠে যে সদা সত্য কথা বলে
সত্যের পথে চলে। বাকিরা
চণ্ডাল। বিশুদ্ধতা রহিত।
ব্রাম্ভণ, চণ্ডাল
কোনো জাত নয় এত জীবন অভ্যাস
যেমন মানুষ অমানুষ
আচরণেই সহজে ধরা পরে
এও তেমনি প্রতিফলিত হয়
কাজে ও কথায়।