বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ইন্দ্রাণী সরকার




ইন্দ্রাণী সরকার

পরিক্রমা

যখন তুমি ঘুমালে আমি উঠে গেলাম
ইদানীং চুপকথা তোমার মর্জি
তুমি দরজা খুলে দিলে কিন্তু বসতে বলো নি
আমি পায়ে পায়ে একরাশ কথা নিয়ে
তোমার দিকে অবাক চেয়ে রইলাম
দেখতে দেখতে তুমি একটা শিরদাঁড়া হয়ে গেলে
চুন পলেস্তারার মত গা থেকে মাংস খসে খসে পড়ল
তোমার শরীরে কি রক্ত নেই?
শুধুই কাদা মাটির প্রলেপ আর হাড় কখানা
অপরিচিতের মত মিলিয়ে যায় তোমার ছায়া
আর সাবেকী দুটো শিরা বের করা হাত
একদিন ওই জানলায় আমার চোখ রেখেছিলাম
কোনো কনক ভোরে কে যেন খুঁজেছিল আমায়
তারপর পোড়া চিঠিটা শুধু জীবাশ্ম
তোমার চোখ থেকে উড়ে যায় সবুজের টিপ
তুমি এক মৌনপথে পৃথিবী পরিক্রমা করো ।




সহজতা

সহজতা চাইতে নেই বিশেষত: জটিলতা যেখানে শাস্ত্র
যেখানে একটা শব্দ খুঁচিয়ে হাজার শব্দের সৃষ্টি হয়,
যেখানে একটা কথা জিলিপির প্যাঁচে নিক্ষেপিত হয় |
যেখানে দিন মানে চব্বিশ ঘন্টাই দিন, রাতও তাই,
যেখানে সন্ধ্যে মানে শুধুই গোধূলি আর কিছু নেই |
যেখানে রোবটেরা এক জায়গায় প্রহরীর মত জাগে |
যেখানে দিন অভিনেতা নয় শুধু এক পায়ে দাঁড়ানো
একটি উট যে নিত্য সাহারা বালুতে হেঁটে চলে যায় |
যেখানে ভালোবাসা মানে অভিনেত্রীর সত্য অভিনয়
যেখানে বীরপুরুষরা অভিনয় না করেই কিংবদন্তি হয় ||




শ্মশানবিলাস

কবিতায় জীবন, জীবনে কবিতা
জাগতিক বলে এখানে কিছু নেই, সবই অসার,
কি করা যাবে এই ভবিতব্য, এই নিয়তি,
এখানে থাকা মানে মৃত্যুই পরিণতি
মন বেঁচে থাকলে মেরে দেয়
মরে গেলে শ্মশানযাত্রী হয়
জীবনে শুধু কবিতা আর হা হুতাশ
ডুকরে কাঁদে শ্মশানবিলাস
কারো ভালো দেখলে পরাণ জ্বলে যায়
খারাপ দেখলে অধিক আনন্দ হয়
এরা মানুষ নয় দেবদূত আর দেবদূতী
যত কাছাকাছি থাকে ততই ধনে মানে উন্নতি ||




নেই-আঁকড়া

তুমি রোজ এ দিকে তাকিয়ে কি কথা বলে যাও ?
পাতাল থেকে খুঁড়ে আনো জল
বাতাসে ছড়াও বিদ্বেষের বাষ্প
তোমার কি জীবন নেই,
জীবনে কোনো সাধ আহ্লাদ নেই ?
কি ভাবে তুমি কবর থেকে তুলে আনো
মৃতদেহের সম্পত্তি ?
দুহাতে শুধু ছাড়াও গরল
বরং একটু ঘুরে বসো অন্যভাবে
সব কিছু এতটাই মন্দ নয়
যে ভাবে তুমি এন্যাটোমি করো |
তুমি ত একজন মানুষ
কোনো ভদ্র পিতামাতার সন্তান
কিছু ভরসার কথা দাও
একই টার্গেটে তীর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ক্লান্ত হও না ?
তোমার মুখের সেই বরাবরের
উজ্জ্বল হাসিটা নীলিমায় ছুঁড়ে দিয়েছো ?
দাঁড়াও একটু, কার গায়ে রোজ ঢিল মারছো ?
নিজের, হ্যাঁ নিজের, কিছু অজ্ঞ আর অন্ধ মানুষের কাছে
নিজেরই রোজনামচা আর নেই-আঁকড়া স্বভাবের গান গাও ||




নতজানু সত্তা

অনন্তকাল শুকনো বাঁশপাতার মত
কাঁপে মনের এলোমেলো চিন্তাগুলো,
যে ভাবনাগুলো কেউ যেন গুঁড়িয়ে
পায়ে দলে গিয়েছিল আদিম ইচ্ছেয়,
কেন জানিনা তারা আবার ফিরে এল |
সুদূরপ্রসারী দুটি ধ্যানস্থ চোখ নতজানু,
স্তব্ধতা ছুঁয়ে যায় রাতের সহস্র তারা |
তুমি কি এলে? মায়া না কি স্বপ্নছায়া ?
শত শত ঢেউ আছড়ে পড়ে সমুদ্রতটে
তুমি কি করে একটি ঝিনুকই কুড়োলে?
তোমার ইচ্ছেগুলোকে মুঠোয় রেখে
আমি একা হেঁটে যাব সামাজিক পথ
তবু আঁচড় লাগতে দেব না তার গায়ে
যে দ্বিখন্ডিত সত্তাকে সযত্নে জুড়ে দেয় ||