শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
নিঃশ্বাসে ফেঁপে ওঠা অক্ষর
মা ও তার কন্যারা বেরিয়ে আসবে,
হাতে হাত রেখে, প্রকাশ্য দিবালোকে, অচেনা
পুরুষের সঙ্গে
৩৬ নং কবিতা লাল দিয়েদ (চতুর্দশ শতকের কাশ্মিরী শৈব
সাধিকা-কবি)
রঞ্জিত হসকোটে কে
১
আমি কি আচমকা
কোনও কাগজের স্তূপ থেকে দূরের শহর খুঁজে পাবো? যেখানে শহর বলে আসলে কিছু নেই শুধু মেরুদণ্ড-শীতল রাস্তার
চিহ্ন ঘাম বেয়ে শুধু জিভ ও আমার স্বাদ অভ্যস্ত শরীর ঘেঁসে সেরে ওঠা বিয়েদের গন্ধ
খোঁটে
শুনতে পাওয়া
বলতে শুধু ধুলো – এতকাল আওয়াজ
শুধু ঝলসে উঠতো দিনের বেলা – কাল বলে যে জড়তার মধ্যে থাকি, সেখানেই সঞ্চারের ডানা – বন্ধুকে খুঁজে বের করার ছলে শব্দ ধরে বেড়ানোর খেলা – অজানা ভাষার কাছে মাথা রেখে শুধু কুকুরের
ডাকে সচকিত আবিষ্কার করে নেওয়া এক তালা খোলা দরজা – এই ঠিকানাই তো ছিল শেষ চিঠিতে – কীকরে এসেছিলে এই অসাড় জিভের ভাষায়?
২
এভাবে যদি
কবিতাকে এনে ফেলো এই নষ্টের মধ্যে এই রাস্তা এই ক্রমাগত ধারালো সভ্যতায় – তুমি অপেক্ষার
গায়ে ফোটা দীর্ঘ বৃষ্টিবাষ্পের দিকে দেখো,
তেমন
কিছু নয় অথচ অন্য কেউ বুঝে নেবে বলেই তো এই দাঁড়ানো – এইসব ভঙ্গি ও চলমানতার ঢঙে বিস্তার করে রাখা বিরক্তি রঙের
মাটি – আর কিছু নয় এই নিহত স্বরে একধরণের আক্রোশ ছররা গুলির সামনে
পেতে দিচ্ছে সকালের ফ্যাকাশে অগাস্ট – যেখানে শরীর বলে কিছু নেই ক্রমাগত নিঃশ্বাসে ফেঁপে ওঠা ছাপা
অক্ষরগুলো কতদূর যায়?
৩
আর যেখানে শরীর
বলে কিছু কিছু নেই স্পষ্টতা মানে এই রাস্তা,
আমি
আচমকা আবিষ্কার করছি আমার এই মৃত সংখ্যা পতঙ্গের ছোট উড়ানে ভরে আছে ¬– সন্ধান বা বাড়ির
নম্বর নেই শুধু এই দীর্ঘ এক সন্তানকামনাহীন নদীপথ, বাঁকে কিছু তন্দ্রা লেগে থাকা
৪
নদী ও
শুষ্কতাজাত কিছু ফল পাথরে সাজাই – এই যে নিরবচ্ছিন্ন ধ্বংস, দীর্ঘ বালি,
তুষারপথ, জিভ,
মাটি
ও নিজস্ব কিছু তোতলামি সহ বীজ ছড়িয়ে রেখেছি শ্বাসকষ্টে, বাড়ি নেই – শ্বাসাঘাতপ্রিয়
কিছু ধ্বনি প্রতীক্ষার সময় জুড়ে জেগে থাকা
আলস্যের দীর্ঘতম অর্গল ভেদ করা এই চেয়ে থাকা ভারি বুটের দলবদ্ধ অচেনা আওয়াজের কাছে
ঋণ রাখে – আমার নিজস্ব তেমন কোনও
শবদেহ অভিজ্ঞতা নেই শুধু এই স্থিত ঊর্ধ্বগামী রাস্তা ধারালো স্প্রিং – কিছুদূর যেতে
গিয়ে নিঃশ্বাস হারায়
৫
তাহলে জেগে ওঠা
মুহূর্তের? ধুলো ও বরফে
মোড়া দুনিয়া কি আসলে পাথর? আমার চাওয়া ও
তোমার অচেনা শরীর ঘেঁসে সামান্য যে প্রতিরোধ ছিল সেও তো জাগরণ! জিভের রঙে ফ্যাকাশে
ছড়িয়ে এই যে যাওয়া সে তো দিকনির্দেশহীন – না-জন্ম ঘেঁসা আমাদের ক্রমাগত কামড় গুছিয়ে রাখা সন্ধেগুলো জ্বর সাজাতে কেটে যায়
৬
যে নিজে আচমকা
ক্রোধে বুঝেছে মাংস ছিঁড়ে নেওয়া
রাস্তা বা সহজ
কোনও শীতবোধ নয়
শুধু বেঁচে
থাকবার জন্য যে ধন্যবাদ দেওয়া
তার সামনে পড়ে
থাকছে পুরনো শব্দের খেলা
দূতের ফুসফুস
জুড়ে ছড়িয়ে থাকা যোগাযোগ বাতাস
৭
এ ঘরে তেমন কিছু
নেই শুধু দীর্ঘ উত্তাপের ডানা যখন দখল নিচ্ছে শহর ও বৃষ্টিপাতহীনতার ছাই জুড়ে জেগে
উঠছে আমার বর্ণনাহীন অতীত, ইতিহাসস্পৃষ্ট
পশ্চিম আমি বারবার পরাজয়গুলোর মাপ নিতে গিয়ে তালুর জলে দেখে নিচ্ছি অবয়বের শ্রান্ত
চোখ, তখন কতটা দূরে তোমরা? কতটা বিশ্রাম থাকবে এই নিরক্ত অক্ষরে? এখনও লিখিনি ঠিক কীভাবে আমরা তুষারহীন
হিমাঙ্কের নীচে থাকা পাথর স্পর্শ করে ফিরেছি,
শুধু
এভাবেই বারুদ ও অন্যান্য বাক্য ভেঙে দেওয়া গন্ধকে সজীব রাখতে বলছি!