বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মেঘনা চট্টোপাধ্যায়




মেঘনা চট্টোপাধ্যায়

বেতারবার্তা

হে ঈশ্বর,
ঠিক তোমার মত দেখতে যে আজ কড়া নাড়ছিল দরজায়,
বন্ধ দরজার এপাশে পিঠ দিয়ে আটকেছি তাকে।
তোমার যে আলো অযথা ছাইছিল চরাচর......
আমার বিশ্বস্ত দুহাতে আড়াল করেছি দৃষ্টি ।
ঘ্রাণে, শ্রবনে, স্পর্শে , মননে যে যে ছলনা পাঠিয়েছো
সযত্নে প্রত্যাখ্যান করেছি সব ।
এখন আমি সবকিছু মেঝেয় ছড়িয়ে ফেলে
তা থেকে বেছে নিচ্ছি কিছু ভালোলাগা ,
একান্ত ইচ্ছে, রুচি আর পছন্দ।
আমার সুখের সংজ্ঞা আজ আমিই বাঁধি।
তুমি শুধু তালিকা পাঠিও বোধের, বোধির, ব্যাধির।
দরজায় পিঠ দিয়ে তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেবো।
মান্যতাকে দুত্তোরবলে জলসমাধি দেওয়া যাবে,
ফলবান কোন লহমা জন্ম নেবে বলে।




প্রকল্পিত

মনে কর গভীর অসুখ এক ছেয়েছে আমার দিনরাত,
রোগশয্যা ঘিরে থাকা মৃত্যুশীতলতা.........
তীব্র বিষাদঘ্রাণ নিঃশব্দে শ্বাসরোধ করে,
অন্ধকার, শূণ্যগর্ভ একা দিন
কফিনে পেরেক ঠোকে নির্মম অনবার্যতায়।
মনে কর আবার তুষারযুগ বসন্তসন্ধ্যা জুড়ে
সাজিয়েছে দিব্য রাজ্যপাট।
হিমরক্তবাহে ঝোড়ো উত্তাল শীতের উল্লাস
 মনে কর ঢেউ এসে থমকেছে চিড়ধরা বাঁধের কানায় ।
ভাসাবেই ডোবাবেই ঠিক হয়ে গেছে শেষমেশ।
করজোড়, নতজানু এ হৃদয় প্রার্থনায় লীন।
মনে কর সুতাশঙ্খ কালস্রোত জড়িয়েছে বোধে ও বিবেকে।
তোমাকে ডাকতে পারি দুমুঠো আগুন চেয়ে এ মৃত্যু প্রদেশে ?
আসবে কি রাজসূয় ফেলে , প্রেমহীন ছেলে !




আরোগ্যসূত্র

অসুখটা বেড়েই চলেছে দিনকে দিন।
তাক থেকে টেনে নামালুম হোমিওপ্যাথির বাসকো ।
মা শিখিয়েছিলেন ছড়িয়ে গেলে গুছিয়ে রাখতে।
শিখিয়েছিলেন, ‘ ওটুকুই আরোগ্য গৃহীর
গোছালুম, সাজালুম, বসালুম খোপে খোপে।
যেসব অনাস্বাদিত সুখ আর আসবে না কোনদিন,
তার কষ্টে সান্ত্বনা থার্টি পাঁচফোঁটা তিনবার।
যেসব উৎশৃঙ্খলা আমার ছেকলে দিয়েছে টান,
তাকে নির্মূল করতে শাস্ত্রকথা টুহান্ড্রেড দুবার একফোঁটা।
আমার বুক দলেমুচড়ে ওঠা রক্তের দলা দলা,
নির্লিপ্তি মাদার টিংচারই কাফি তাকে ঢিট করতে।
কেবল আর্সেনিকই রইল ভালোবাসার জন্য
ও যে মানে না মানা......... ।




সূর্যশ্লোক

ধরা যাক পথটির নাম আকাশগঙ্গা,
গাছগুলির নাম পলাশ, আর মেয়েটির নাম কৃষ্ণচূড়া।
মেয়েটি পলাশের ছায়াহীন রোদ্দুরে ভিজতে ভিজতে
হেঁটে যাচ্ছে আকাশগঙ্গা ধরে ।
তার কন্ঠে স্ত্রোত্রপাঠের মত ধ্বনিত হচ্ছে,
তোমাদের দৃষ্টি আমার দৃষ্টি নয়”,
তোমাদের ইচ্ছে আমার ইচ্ছে নয়”,
তোমাদের জীবন আমার জীবন নয়
সেই অলৌকিক উচ্চারনের অভিঘাতে
আকাশে ঘনাচ্ছে মেঘ, বাতাসে মিশছে শিহরন,
দুলে ঊঠছে পাহাড়, সমুদ্র যাচ্ছে উথলে ।
কৃষ্ণচূড়ার রক্তে ভেসে যাওয়া পা দুটি
শত আলোকবর্ষ জুড়ে সারস্বত ছাঁদে লিখছে লক্ষ্মীর পদচিহ্ন ।
ধরা যাক এ হেন কৃষ্ণচূড়াকে আর ধরা যাবে না কখনোই।
মুঠোয় চাঁদ পুরে সে রওনা হয়ে গেছে সূর্যের দিকে ।




বাজারী

তুমিও নাকি আমায় নিয়ে কবিতা লিখছ !
মরা মাছের কানকো তুলে আলতা ঢালছো বিস্তর।,
কুঁকড়ে যাওয়া গলদা সিধে রাখছো কাঠির ফোঁড়ে ।
বসছো বাজারের মুখেই ,যাতে সহজে চোখে পড়ো।
আদ্দি,মটকা, সোনার ছেকল,দুহাতে বন্দী নবগ্রহ-রা
উলটে পালটে দ্যাখে তোমার ভাস্কর্য টিপেটুপে,টেনেটুনে ।
তারপর......দেদার বিকোয় চড়া দামে । বাতাসে ওঠে জয়ধ্বনি।
জয় সেঁচে ধ্বনিটুকু নিয়ে আমি কবন্ধের ছবি আঁকি ।
এঘরে আলো ঢোকে না ,তাই ঘুলঘুলিই সূর্য ।
তুমিও মিথ্যে, আমিও।
তবু একগোছা নিরর্থক বেঁচে থাকা সাজিয়ে
এসো বসি বাজারে.........আবারো।