বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সৌরভ মজুমদার



সৌরভ মজুমদার

সেই সব কথারা...

সেই সব কথারা
যারা উড়াল দিয়েছিল আমায় ছেড়ে -  
যায়নি কোথাও তারা... অদৃশ্য
চলেছিল আমারই সাথে । হাওড়া ব্রিজের ট্রাম লাইনের মত
উপড়ে ফেললেই কি আর মুছে ফেলা হয়... আমূল

যত ছবি ভেবেছিলাম
গাঁথা হয়ে আছে সমূল, গভীর মানবজমিনে –  
দেখি আবছা থেকে হয়েছে আবছাতর... ফিকে
সরে সরে গিয়েছে পুরনো ছায়ার মত, নতুন কায়াসঙ্গে         
রাখব বললেই কি আর ধরে রাখা যায়... আঁকড়ে   

যত্ন তবু করেছি সময়ের...
ছবির...
কথার...
আরও যত কিছুর... প্রাসঙ্গিক সমারোহে 
ফিরে আসছে যারা বহুদূর থেকে, আসুক আবার
যারা যাবে, চলে যাক তারা ধীরে ধীরে... মানুষের অভয়ারন্যে ।           





বৃষ্টি-তীর্থ

বৃষ্টিশুধুই জলের হবে ! বৃষ্টি খুঁজে ফিরি    
ভুবনডাঙ্গার জলস্রোতে কোথায় অন্য বৃষ্টি-পরী !   

শ্রাবণ রাতের নিষেধ মেনে যদি ইচ্ছাবৃষ্টি থামে  
পুণ্যভূমের কোন বিধিতে পুণ্য বৃষ্টি নামে            
 
বোধবৃষ্টি বাঁধা তোমার তুমুল হিংস্র বৃষ্টি-গাছে, জানি 
ভিন্নবোধের আমার জন্যে, তোর দুসরা দাওয়াই আছে         

অঝোর গোলা-বৃষ্টি দিয়ে তীর্থে পাঠাস চির ঘুমে -     
মনের জোরের বৃষ্টিধারায় মানুষ আবার পথ-আশ্রমে  

প্রলয় পাহাড় পার হয়েছ পদ বৃষ্টির বাণে 
ধর্ম এসে থমকে গেছে বিরাট ডুবন্ত ময়দানে  

বাসচালকের যুক্তি-বৃষ্টি যদি যাত্রী বাঁচাওহয় -     
সেলিম শেখের ধর্মপালন তার কোন নাড়িতে বয় ! 

ধ্বংস-সুখের বিকট দৃষ্টি ছলকে ওঠা ভয় -  
অনন্তের এই মৃত্যুবৃষ্টি... কিছুতেই শেষের কথা নয় ।  





শেকড়

ওপড়ানো শেকড় - দুটো একটা নয়, সারে সারে - বৌদ্ধ স্তূপের আকারে 
পাতাহীন, কাণ্ডহীন, জড় করে রাখা ! মাটির ওপরে - শুকনো শেকড় শুধু  

শুধুই ওপড়ানো শেকড়গ্রীসে যেমন, লিবিয়ায় সিরিয়ায়, সোমালিয়ার রাস্তায় 
তেলেঙ্গানা হয়ে তেমনই বাংলা, ত্রিপুরায় রুদ্রে, ধূলায়, সোনাদায় -       
পুর কালিম্পং আর গড় কলকাতায় !  বিশ্বাসের । 
  
বিশ্বাস তবুও রাখি প্রকৃত মানুষেই ।  প্রকৃতি তে বারে বারে ।    






নীতাকে...

নীতাকে সেদিন আবার দেখেছি - ভিড়ের ভেতরে  
শিয়ালদায়  ।  একটু থেমে, দম নেওয়া, চেনা মুখে 
দমদম, গড়িয়া, আহিরিটোলায় লেকটাউনে ।   
অন্য শহরেও ! ঝাঁসি-ব্যাবিনায়, কচ্ছের রানে । চেরাপুঞ্জির ভেজা     
সন্ধেবেলায়  ।  দিল্লীতে ফিরে পাওয়া অচেনা সিমলায়...      

নীতাকে এখনও দেখি -
সময় কাটাতে, অন্যের জন্যে বুনো ব্যস্ততায়  ।       
নিজের না চেনানো পৃথিবীর সচেতন আবডালে
টুকরো টুকরো আকাশ - আর ঝুরো ঝুরো অবুঝ কবিতায়...      





রাত্রি

রাতের চেসুস্থ সময় আর কিছু নেই । হয়না কিছু - 
রাতের কালো জলছবিতে, অল্প আলোয়, সমান্তরাল
রাস্তাগুলোর সন্ধি হলে - ঘটনা হয় অন্য কিছু ।
আকাশভরা নিরাভরণ তারার মাঝে নিঃস্ব মানুষ
নিজের ছবি খুঁজে বেড়ায়, নিজের কাছেই ঘুরে ঘুরে -
নিংড়ে দিয়ে অস্থিরতা, সবটুকু তার, অন্ধকারের আদিম তীরে ।          

মনমুখোশের আড়াল টেনে সযত্নে সরিয়ে রাখা
ভুলেই থাকা, খারিজ হওয়া এক অবয়ব - রাতের বেলায়
যাচ্ছে ধুয়ে - নষ্টপ্রেমে, কষ্টপ্রেমে, দুঃস্থ সবাক বস্তুপ্রেমের
প্রলেপ ফেলে । রাতের চাইতে উষ্ণ সময়, পাও কি তুমি !  
পেতেও পারো - অন্য দেশে । আমার দেশে, আমার রাত্রি – 

দিনের চেআলোয় ভরে - এক নিমেষে ।