বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ইমেল নাঈম




ইমেল নাঈম

নিঃসঙ্গতা আর তুমি...

বিষণ্ণতার লুকোচুরি খেলায় উড়িয়ে দিই ধোঁয়া
চশমার লেন্স জুড়ে খেলছে এক সমুদ্র নিঃসঙ্গতা
উড়ে যাবার প্রাক্কালে কার চোখ দেখেছিলে?
পুরোটা দেখাইনি, কিছু আছে অপ্রকাশিতভাবে।

মেঘের ভাজে জমাটবদ্ধ আনন্দ... চুইয়ে পড়ছে
নগ্নতার আলিঙ্গন বাঁধার প্রাচীরে আঁকছি
নিঃসঙ্গতার ক্যানেস্তারা। উড়ে যাচ্ছে পরিযায়ী...
প্রান্তিক স্পর্শেও বিষাক্ত চুম্বন থাকে লুকিয়ে

খুলে দেখিয়েছো সবটুকু, মনের ভেলায় ভাসছি
ওল্ড মংকের শূন্য বোতল, আর জ্বলন্ত সিগারেট
This is not the proper time to get you
How much time, I'll waiting for...

শরৎ খেলছে বাহিরে, ভেতরে বসন্তের আঁচড়
ক্ষতবিক্ষত সময়ের প্রলাপ, রাসায়নিক বিক্রিয়ায়
ফলাফল শূন্য, ক্লান্ত দাগের তীব্র অবসেশন
পিচ্ছিল সময়ের হিসাবে কে কতটা অপরাধী!

প্রশ্ন করে যাচ্ছি নিজেকে, নগ্নতার উপাখ্যানে
তুমি হয়তো অভিজ্ঞ, অন্যদিকে আমি আনাড়ি
বিষণ্ণতার গল্পের শেষে তুমি ভুলে যাও স্পর্শ।





সভ্যতার জীবাশ্ম

দুটো পা, দুটো হাত, বুকের বাঁপাশে টাটকা হৃদয়
মাথায় আলসে মগজ নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনাদরে
ব্যথা উপশমকারী মলমের প্রতিটি স্তরে অবক্ষয়
বাসা বাঁধে পুরো শরীরে, মুছে যাচ্ছে মানুষের নাম।

বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার ছিলো।
তারা মুখবইয়ের পাতায় আবদ্ধ, আত্মমর্যাদা
টিকিয়ে রাখতে গিয়ে সরীসৃপ জীবন কাটাচ্ছে।
মানুষ হারাচ্ছে তার চলার স্বাধীনতা, মুখের বুলিতে
যতটা বাক্য শুনি তার পুরোটাই মিথ্যে, বানোয়াট।

চাইলে মুছে দিতে পারিনা নিজেকে তাদের থেকে
সুযোগ, নৈতিকতা, অবক্ষয়, কীসের অভাব তাড়া
করছে রাতদিন। দাঁড়াতে ভুলেছি। অন্যায় দেখে
পালিয়ে যাচ্ছি, সততার বিজ্ঞাপনে আমিত্ববোধ।

দিনকে দিন বলতে ক্যালকুলেটরে হিসাব করি
রাতকে রাত বলিনা ভয়ে, নারীকে ভাবি মাংসপিণ্ড
সুযোগ পেলেই নিজের ভিতরের পশুটা জাগে
মগজটা নিষ্ক্রিয় হয় আর বুকের বাঁপাশে কোনো
সংকেত নেই, ম্রিয়মাণ সময়ের পথে হাঁটছি মাত্র।

বিশ্বাস নেই প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার ওপর।
বদলাতে চাওয়ার মন্ত্র কেবল ভাসে শূন্যতায়
বাধার প্রাচীর ঠেলে মানুষের অদৃশ্য মৃত্যু আঁকি
মানবহীন পৃথিবীর দিকে এগুচ্ছি ক্রমশ
দুপেয়ে জীবের এতোটা অহংকার কী সাজে!
সে সভ্যতার জীবাশ্ম নিয়ে মুছে যাচ্ছে অবেলায়...






বিনিময়

লালমাটি। চুপচাপ নেমে আসে সন্ধ্যা। প্রলেতারিয়া সময়। ফেরারি আসামী হয়ে ঘুরছি। ছদ্মবেশে লুকোনো ছায়া দেখে শিউরে উঠি। প্রশ্নের সামনে দাঁড়াই। ব্যথার অনুবাদ করি ভুল বাক্য বিন্যাসে। জীববিজ্ঞানের নানা অধ্যায়ের শেষে ডারউইন ঘুমোয়, পরে থাকে চার্চের অলস ঘণ্টা। যিশুও তাকিয়ে আছেন নিশ্চল।

পাখির ঠোঁটে ঝুলছে আকুতি। প্রণয়ের ভাজে রূপকথা। ডানা ভাঙা পরীর গল্প মধ্যরাতে ডেকে ওঠে। প্রহরীর হুইসিল আর রাস্তার মোড়ের ল্যাম্পপোস্ট লিখছে যাবতীয় ব্যস্ততার শেষ ঘুম। প্রায়শ্চিত্ত করছি পুনর্জন্ম'র। মখমলি ঘাসে মুড়েছি হাটু। নিঃসঙ্গতার বিনির্মাণে আমি ঈশ্বরের বিপরীত আবার শয়তানের আদিম প্রতিদ্বন্দ্বী।

আয়নায় নিজেকে চিনতে পারিনা। মায়া, ভ্রান্ত বিশ্বাস... কীসের মোহে আহত হচ্ছি রাতভর। ক্লান্তিকর যাত্রা জিপসি জীবন। মুঠোফোনে ভেসে আসে ব্লুজ অ্যান্ড জ্যাজ। সেক্সোফোনে কেবল হাহাকার। নিকোটিনকে জ্বালাই, বিনিময়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি নিজেই।

হাহাকার লিপিবদ্ধ করি কবিতার খাতায়। পাখিজীবন কল্পনা করে হতাশায় পুড়ি। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিই, হাতের ভাজে খেলছেন ডেভিড কভারফিল্ড। পিয়ানোর সুরে ইয়ান্নি। ভ্যানগঘ  কান কাটা চিত্রশিল্পী, গণিকার দাম দিয়েছিলেন নিজের কানের বিনিময়ে।

আমার দেয়ার কিছুই নাই, আধ্যাত্মিকতায় নেই কোনো বিজ্ঞাপন। কেবল শূন্যতায় তাকিয়ে থাকি... আমাকে সঙ্গ দেয় আমার ভিতরের সবটা কালো। বিড়বিড় করে বলতে থাকি, আফ্রোদিতি... আফ্রোদিতি... আফ্রোদিতি... আমাকে গ্রহণ করো... বিনিময়ে লিখে দিবো এক সাগর পরিমাণ পাপ।





কাল্পনিকতা

ভাবছি লিখবো। কিছুটা লিখা দরকার। জ্বলছে সিগারেট। ক্ষয়ে যাচ্ছে হতাশা। তুমি কথার মাঝেই চুপ হয়ে যাও। যেনো কল্পনায় ভেসে যাও গভীর থেকে গভীরে। বাধা দিওনা। কবিতায় প্রকাশিত আবেগটুকু মুছে দিবো ইরেজারে। ইমেজারি শব্দের বুনটে লিখে নিবো কবিতা।

পেগাসাসে ভেসে যাবে স্বপ্নের আয়োজন। রোদ চশমায় টুকে রেখেছো বিষণ্ণতার আদি সূত্র। কবিতার খাতা থেকে মুছে দিচ্ছি আমাদের চলাফেরার মুহূর্তগুলো। ক্ষয়িষ্ণু সময়ের কল্যাণে। অলিম্পাস পর্বত কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়েছি আমি, প্রমিথিউস চুরি করে পালিয়ে গেছে আলোর মিছিল।

মশাল নিভেছে সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিতেমেঠো পথে অবহেলায় পরে আছে অজস্র ভাঁটফুল। আকুল দৃষ্টি বিনিময়ে চলে যাচ্ছি অনেকপথ দূরে। অর্থ খুঁজতে খুঁজতে চুপ হয়ে গেছি। পরের গল্পে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন আঁকা। গুহাচিত্র লিখে রাখি পৃথিবীর আদিম সভ্যতা। যেখানে প্রথম চুম্বনে জন্ম নিয়েছিলো কসমস।

এরপর পেরিয়ে গেছে সময়, ক্লিওপেট্রার সময়টুকু পেরিয়ে গেছি। বিনোদনে আক্রান্ত হচ্ছি ভুল সময়ে। কল্পনার রস মুছে গেছে। প্রিয় সামান্থা, আমাদের দেখা হয়েছিলো ভুল সময়ে। পর্যটকের বেশে আমিও ছিলাম নীরব ঘাতক। কেবল হত্যা করেছি নিজেকে।

হলি বুকসে বিজ্ঞাপনে কোথাও তোমার নাম নেই। বন্য মদের নেশাটুকু চেড়ে উঠলেই ভুলভাল বকতে বসি। নিজেকে খুঁজতে বসে বুঝি প্রান্তিক সময়ের ঋণে প্রাপ্তি কেবল শূন্য। সামান্থা, এরচেয়ে বেশি কিছু দেয়ার নেই তোমাকে আমার।






বিভুই পাখির গান

হাজার মেইল দূরে তীব্র শীত কিংবা গরমে আজো ফোটে ফুল। ক্লান্তি মুছে সামনে তাকালে দৃশ্যমান হয় কেবল সিমেন্টের কংক্রিট। রাস্তার পাশে সাজানো গোছানো সবুজ। কত সুন্দর পরিপাটি আয়োজন। অথচ উপভোগ করার সময় নেই, সময় থাকলেও শূন্যতা অনেক। শুধুই সবুজ মাঝেরটায় লাল নেই, তাই অধিকারও নেই। মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়েনা লালবিহীন সবুজ।

হাড় ভাঙা পরিশ্রমে নেমে আসে মধ্যরাত। রাস্তার পাশে মূকাভিনেতা শিল্পীটিও কানে কানে গ্রাম্য বাংলায় জিজ্ঞাস করে বাড়ীর খবর। তাকিয়ে দেখি অশ্রু ছলছল। সেটিকেও লুকোনোর কী প্রচেষ্টা! ব্যস্ত অফিস পাড়ায় সাদা চামড়াই নয়, দেখা মেলে স্বদেশ পাখির। তাকে জীবনানন্দ শুনিয়ে দেখো সেও গুণগুণ করে শোনাবে "আবার আসিব ফিরে...

উপভোগের জীবন দেখেনি সেসব প্রাণ। একমুঠো অবসর কেড়ে নেয় প্রযুক্তি। তার কল্যাণে দেখতে পারে বাবা মা'র মুখ। ভাই বোনের আবদার নীরবে শোনে। শূন্য পকেটে বুকের ভিতরে পাথর চাপা দিয়ে রাখে। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখতে বলে আর নিজে ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস।

তুমি কোন বেনিয়া ব্রিটিশদের আত্মা ধারণ করে শেখাও দেশপ্রেম। ভাদ্রের ভ্যাঁপসা গরমে শরীর থেকে বের হয় পচে যাওয়া অবক্ষয়। মুছে দাও পাপ, পাখিদের কাছে গিয়ে শেখো ভাতৃত্ববোধ, নদী কী শেখায়নি ভালবাসার সব সূত্র। প্রকৃতিও কী ব্যর্থ শিক্ষাদানে... থামো! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখো পলেস্তারা খসে ঝুলছে তোমারই কংকালসার দেহ।