সৌমিত্র চক্রবর্তী
নিজকিয়া
----------
দুপুর দুপুর হলে দরজাও
ঢুকে পড়ে ছায়ার কবলে
চৌকাঠ ছিলো সেই মান্ধাতা
যুগে, আজ তারা কল্পকাহিনী
নিজেকেই চিরি ফাড়ি
এই অবসরে নিঃশ্বাস বন্ধ করা নিঃশব্দ দুপুরে
আশ্চর্য! আশ্চর্য
সেই রোবটের অখিল পোস্টমর্টেম
স্নায়ু কই! রক্ত কই!
হাড় - মাংস - মন! ত্বকের গভীরে জ্যান্ত মরীচিকা!
তারকাঁটা ঘেরা এক
রহস্যজাল, কুয়াশায় নির্লিপ্ত নোম্যানসল্যান্ড
হাড় নেই, মাঝেমাঝে কালাশনিকভ
খুনির আইবল ঘুরিয়ে তাকায়
খানায় খোঁদলে যত বৃদ্ধা
প্রতিশ্রুতি পচা শব ভাসিয়ে গন্ধ ছড়ায়
শুদ্ধ কিছু আছে নাকি, হে রিক্ত সময়!
নীলামে উঠেছে দুপুর, শান্ত ছেলেবেলা, নরম মননের পরিত্যক্ত
পাললিক মাটি।
*****
রিংটোন
----------
রিংটিং শব্দটা কানে
গেল সবারই
কোথাও মোবাইলে কল
এলো
সবাই নড়েচড়ে বসলো,
হাতের মোবাইল দেখলো
কিন্তু সবার মোবাইলের
স্ক্রীন কালো;
আলপিনের ছুঁচলো ডগায়
একদল আপাদমস্তক বিবস্ত্র
মানুষ
পিএনপিসিতে ভয়ানক
ব্যস্ত,
ওদের প্রত্যেকের হাতে
শুধু
চায়না মেড শস্তার
মোবাইল
ওদের প্রত্যেকের মস্তিষ্কে
বুদ্বুদ্;
সবার মোবাইল নিস্ক্রিয়
নিস্প্রভ
অথচ কোথাও রিংটোন
বেজেই চলেছে
একটানা, ছেঁড়া ছেঁড়া
মাঝে মাঝে মিলিয়ে
যাচ্ছে
তারপরেই ফিরে আসছে
ঈথারের টানেলে হামাগুড়ি
দিয়ে,
মানুষগুলোর পরচর্চার
টকঝাল
ঘটিগরম স্বাদলবণ এদিক
ওদিক
খেই হারিয়ে সুতো উড়ছে
কাদাগোলা আকাশে;
কোথাও মোবাইল বাজছে
-
নিরবিচ্ছিন্ন সতর্কীকরণ।
*****
একদিন
--------------
একদিন সব ভূমি ভরে
যাবে
ছোট ছোট পায়রার খোপে
ছোট ছোট মানুষের পরমানু
বাসা
ছোট ছোঁয়া, ছোট সুখ,
ছোট ভালোবাসা।
একদিন মানুষের হাত
থেকে নদী
হারাবেই অনবধানে,
পরিজন পরিষেবা আকাল
গ্রস্ত
ছোটবেলা নির্ভার হাসিমুখ, অভিমানে
দুর্লভ, গতির দাপটে।
সুখে থেকো, ভালো থেকো আশীষ বেরঙ
ভোগবাদী ঝড়ে
একদিন গৃহকোণ সরাইখানা
-
কালো রঙ আলো হবে
আইনী নিগড়ে।
*****
এবং রোদ্দুর
----------------------
যতই লম্বা হোক
সব পথই শেষ হয়
শেষ হলে রেখে যায়
দাগ।
আয়োনোস্ফিয়ারে
অন্দরে বাহিরে
চেরা জিভ ফণা তোলে
নাগ।
যতই লাইন টানো
আদিগঙ্গার থেকে
বৃত্তেই মিলে যায়
গোল।
মিশরের রানী সাজে
কাড়া ও নাকাড়া বাজে
রঙ চটা মমিদের
ঢোল।
যতই ক্লান্তি বাস
দুঃখ ও শোক শ্বাস
এগোয় অপরাজেয়
আয়ু।
সুতোরং রোদ্দুরে
কোমা র হাত ছেড়ে
ফিরে আসে দক্ষিণী
বায়ু।
*****
অসময়ের ট্রেন
----------------------
শিল্পশহরের পাঁচ প্ল্যাটফর্ম
পেরিয়ে ছুটে গেল মেট্রোপলিটন অভিজাত
এখন আর সেই নাইটহুড
নেই, ট্রেনও কুঝিকঝিক করে না
রেল লাইনের পাশে অশোকবনে
বন্দী দামোদর লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
মুখ লুকোয় কচুরিপানার
খোলসের সাত বাঁও অন্দরে।
প্রত্যেক মৃত্যুর
খবরে নিজের ছায়া কড়া নাড়ে...
নির্দোষ মস্তিষ্কে
ক্ষরণকালের রক্তের বিচলন দুপুরের রোদ্দুরকে গুডবাই বলে,
কখনো দুপুর শুরুর
আগে জীবনকেও সাইলেন্ট মোডে চার্জে দিতে হয়
যদিও এখন আর তৃতীয়
ব্যক্তির অস্তিত্ব আমার ডায়েরি তে নেই
প্রত্যেকের স্বত্বাধিকার
তার নিজেরই, মানুষ কেনাবেচা এখন আইনত নিষিদ্ধ।