শাকিলা তুবা
বর্ণচোরা
রোদে বদলে যায় মুখোশগণ
চুপি চুপি বলি, একটা
খোলস পেয়েছি রঙচঙে
সাপটা লেজ খসাতেই ঢুকে
পড়েছি
দাঁত দেখে আমায় ভয়
পেয়েছে যারা, বলে দিও না যেন
বুকে হেঁটে পাড়ি দেব
শিষমহল
চাকতি রে চাকতি গড়িয়ে
গড়িয়ে চল---
নীচের অংশে বেশ জমে উঠছে
তাড়ির ঝাঁঝ
এক ফোঁটা গলায় পড়তেই
মধুদর্শন
অন্য ফোঁটায় মেঘের জলে
রেলগাড়ী ঝমাঝম
খোলসের রকমফের আছে
বাঘের ছাল, হরিনী
লেবাস আরো কত!
লেজের শেষ মাথায় আর কিছু
নেই
একটা বিন্দু দূরের আলো
হয়ে জ্বলে যাচ্ছে
সাদামাটা আবরণ পুড়ে যেতে
পারে যে কোন ভাবেই
সোনায় মোড়ানো মুখোশে বরং
বিপদ বাড়ে
পাল্টাতে চাইলেও সাপের
খোলস ছেড়ে আর হরিণ হওয়া যায় না।
নীলাঞ্জ
নীলাঞ্জ তোমার ত্বকের
কোষ গহবরে
নয়নাভিরাম সাপ নড়েচড়ে...
অন্তহীন রূপে কেঁপে উঠছে
দালানকোঠা
তুমি যেও না দূরের ঐ
গুহায়
পাহাড়ি মেয়েদের সমবেত পা’য়ের
নৃত্যে
কি অবাধে তুলে দিচ্ছ
নূপুরের বোল কিংবা
চুলের ফুলে হয়ে যাচ্ছ
ভ্রমর গুঞ্জরণ।
যেও না নীলাঞ্জ, বলো না
কথা ওদের সাথে
সুরঞ্জনাকে যেভাবে থামতে
বলা হয়েছিল
চাইছি না থামাতে
শুধু জানাতে চাই, নীলাঞ্জ
তুমি ছিলেনা কোথাও
মাকু’র ঘষায়
কারুকাজ ফুটছে,জানাতে চাই
জানাতে চাই,লেডিকেনি
গুছিয়ে রাখছে অন্য কেউ
সুরকন্যা কিংবা তারো
অধিক জন।
শবাধারে শুয়ে থাকা
নীলাঞ্জ জেগে ওঠো
ঘেমে ওঠো আরেকবার
তোমার বুকের লোমকূপে
শ্বেতশুভ্র সুগন্ধী ফুল দেখতে চাই
ত্বকের মরাকোষে জীয়নকাঠি
রাখতে চাই
এখানে নারীরা মাতৃময়ী
হোক অথবা
কুমারীরা লোভ জাগাক
যদিও নীলাঞ্জ তোমাকে
নির্লোভ দেখতেই ভাল লাগে খুব।
সত্যময়
পূর্ণিমা
বোধিবৃক্ষের নীচে টুপটাপ
ঝরে পূণর্জন্ম ফলার
প্রবল পূর্ণিমার নিশুতি
ফেলে পালানো পুরুষ
কোথায় চলে গিয়েছিলো
সেইরাতে?
আমরা কার কাছে যাই?
এইসব মানুষ কে কার কাছে
যায়?
পৃথিবী জুড়ে সত্যজয়ী
আলো।
সমুদ্র খুলে অফুরান পথ
বেরুলে
সর্বগ্রাসী ঢেউ চাঁদ
ছুঁতে চায় উত্তাল হাত বাড়িয়ে
ছোঁয়া যায় না কিছুই এমন
রাতে
সবাই নির্জিব তবু আলো
জ্বেলে রাখে মহাপুরুষের জন্যে
একজন গৌতম বুদ্ধ নির্বান
পেয়ে সত্যিই হারিয়ে গেছেন
আমরা তবু অপেক্ষায় থাকি
তাকে ফিরে পাবার।
মগডালে বসে চাঁদ পাতলা
জোৎস্নার মদ ঝরায়
আকন্ঠ ডুবেও মানবজন্মের
তৃষ্ণা মিটলো না
ঘর ছেড়ে পালাতে পালাতে
মানুষ সমুদ্র হয় নির্বান আশায়
ঢেউ আর ঢেউয়ে চরাচরে
জেগে থাকে শুধুই কোলাহল
পৃথিবীর মেরুবন্দি মানুষ
কি চেয়েছিল মানব জীবন?
চাঁদের আলোয় আমরা কেবল
সত্যর চাবি খুঁজি।
বৃষ্টি
সকালের কালো আকাশ ভেঙ্গে
রূপোলী জরি-বুটি-
অবলীলায় নামছে তো নামছেই
গাছের পাতা চুঁইয়ে
মাটিতে,
দিনের শুরুতেই অন্ধকারের
এই আলো ছায়া খেলায়
ভিজে যাওয়া পাখিদের
উল্লাস ছাপিয়ে এবং
আকাশে বিজলী চমক
আঁকাবাঁকা ছড়িয়ে যেতেই
হেসে উঠল শিশুরা খিলখিল,
বৃষ্টিটা থামছে না
কিছুতেই---
আজ আমাদের মন ভাল নেই
কিংবা
আজ আমাদের মন খুব বেশি
ভাল,
গাড়িগুলোর মন আসলে বেশি
খারাপ,
অন্ধকার বেজমেন্ট থেকে
ওরা আলো দেখেনা,
দেখেনি বৃষ্টিও।
আমরা কতিপয়
বাবা-মা-সন্তান
গাড়িতে চড়ে বৃষ্টিময় শহর
দেখতে বেরুলে
ছিটকে আসা পানিতে রাস্তা
দেখি না-
খানা-খন্দে জমে থাকা
পানি, আহা বৃষ্টি! বৃষ্টি সবখানে!
ছেলেমেয়েরা বোরড হলে
আমরা এএন্ডডব্লিউ যাব,
ইংলিশ রক এন্ড রোলের
সাথে রুড বিয়ারে গলা ভেজাব,
সিডি প্লেয়ারের সুরে গলা
মেলাবে এই জেনারেশন,
‘দ্য রেইন দ্যাট বিগান টু ফল
ডিজলভস ইন টু দ্য ড্রাই এসফল্ট’
কতিপয় বাবা-মা চোখে চোখে
তাকালে
মন ভিজবে পুরনো দিনে, ‘রেইন
ড্রপস কিপ ফলিং অন মা হেড...।‘
আহ আজ সবার বৃষ্টি বিলাস
দিন
ঘরে ঘরে বৃষ্টি, মনে
মনে বৃষ্টি অঝোরে ঝরছে তো ঝরছেই।
বৃষ্টি ঝরছে মনের
আঙ্গিনায়,
এক কিশোরী একদিন আশরীর
ভিজেছিল কাদা-মাটি-জলে,
এক কিশোরী রমণী হয়ে
হারিয়ে ফেলেছে বৃষ্টি,
কাচের ঐপাশের একটানা
ঝিরঝিরে জল কি দুর্বোধ্য! কী দুর্বোধ্য!
সংবৃতা
আমাদের এদিককার আকাশটা
আজকাল
বেজায় কালো। তোমাদের?
তোমাদের তো শুনেছি নাকি
সুনীল আকাশ
তোমরা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখো
রোদ
পরবাসী মেঘ উড়ে আসে না
এখানে
আমরাও পারি না যেতে আর
কারো আকাশে।
জোড়াতালি দেয়া নেট
বার্তায়
চালাচালি করি চিরকুট শুধুই
রাত বেশী হলে পরে
বলি---ঘুমুতে গেলাম। শুভরাত্রি।
দরজা বন্ধ করে দিলে যেমন
তেমনি তোমরা চলে যাও
অফলাইনে
উভয়ের ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমে
চলে স্বপ্ন চালাচালি।
তোমাদের-আমাদের হয় মন
দেয়া নেয়া
চলে তথ্য আদান প্রদান
প্রযুক্তির শত উন্নতি
নিয়ে তর্ক-বিতর্ক
রাজনীতির কথা কিংবা গল্প, কবিতা
আমাদের দুই আকাশ জুড়ে
অদেখা ঝুম বৃষ্টি
ভাল বা মন্দ লাগায় মন
ভিজিয়ে যায়।
আমরা যখন কাছাকাছি যাই
তোমাদের দরজা বন্ধ থাকে
তোমরা এলে অসময়ে আমাদেরও
জানালা বোজা
শুধু আকাশ মেলে দিলে
দুয়ার, সব একাকার হয়ে যায়
তোমাদের সুনীল আকাশে
এদিককার মেঘ জড়ো হয়
আমাদের মেঘলা আকাশ
রোদ্দুরে শুকায় অসংযত বৃষ্টি।