রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

সুমিত রঞ্জন দাশ




সুমিত রঞ্জন দাশ
বেজন্মা
আজ নৈশব্দের সাক্ষী শুধু সফেদ ঢেউ
যাকে ছুঁতে চেয়েছিলাম 
পারিনি কোনদিন;
বিষন্নতা দিগন্তরেখায় পরিশ্রান্ত,
আকাশ মিশেছে বালুকাবেলায়

সেও ছুঁতে পারেনি
সাগরের অশান্ত রূপ
থাক এসব কথা,
আমার দুদন্ড সময় -
জাবর কাটা শব্দের দ্যোতনা, অঙ্গীকার,
ব্যাথা বেদনা
সব কাগজে চাপা পড়ে জমছে
স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে
কবিতায় পান্ডুলিপি হবার আশায়

আর আমি লিখে যাই কাগজে
         তার জন্মের পরিচয়।

সন্ধিক্ষনে 
এখনো আটকে আছে লোকটা
ছেলেবেলার দোলাচলে...

রাস্তা চলায় কতো চরাই-উৎরাই
আসা যাওয়া,
অথচ তর্জনী এখনো কপালে
স্মৃতির হিমঘরে
ছাড়পত্রের আশায়।

জানি
শ্রাবনের বৃষ্টি ধুয়ে দিয়ে যাবে
জিহ্বায় হড়কানো ক্ষুধা,
অভিশাপ, নষ্ট চরিত্র,
উদ্ভ্রান্ত শব্দ, নগ্ন সেক্সপিয়ার
সূর্যের রূপটান, সবকিছু।

অথচ দেখো -
এখনো আটকে আছে লোকটা
স্মৃতি বিলাসের স্বপ্নে
উদ্দাম বালিয়ারীর হাওয়ায়;

আমি কিন্তু ওই লোকটা না।

সমান্তরাল 
রেললাইনের দু'পাশে কত পাথর
সম্পর্কের খাদানে
    পাথর ভেঙ্গেই বড় হই,
গোছানো থাকে ভাঁজে ভাঁজে,
বেহুদা জোৎস্না খনির লোভ দেখায়
    তবু হ্যাংলামি যায় কই;

এখানে একটা সেমিকোলন
ঘটনার ঘনঘটায়,
এভাবেই শেষ হয় -
    আমার ছায়াবেলা
    প্রেম
    বাৎসায়ন
    পাথর বুকেই চাপা পরে রই,
ঝুরি নামার গল্পটা কিন্তু থেমে থাকে না
বিকেলের সাথে দুরত্ব ক্রমশঃ কমে আসে
    এবারে নিজেই পাথর হই;

স্বপ্ন দেখি
প্ল্যাটফর্মে ছুটে চলেছে জীবন
হুস্-হাস্ শব্দে থেমে যাচ্ছে প্রেম,
রেললাইন ধরে হাঁটলে
শুধুই সমান দুরত্বে কাঠের গুড়ি
দুটো লাইনের মাঝে
                  জমে থাকা কষ্ট কই?

অথচ দেখো
সরলরেখায় চলা
দুটো লাইনের দু'পাশে শুধুই পাথর ।।

আমরাই পুরুষ 
পরিখার কাছাকাছি এসে -
    পিছিয়ে যাই,
নিকষ কালো অন্ধকারের শরীরে ...

মন বলে - ওদিকে যাস নে,
ওদের অন্তর্বাসে লুকিয়ে থাকে
বিষাদভেজা ঝরাপাতার কাহিনি,
নিয়ন আলোয় বরফকুচির আবদার;

ফেরিওয়ালা ওরা,
শরীরের বাসায় লুকিয়ে রাখে অস্তিনের সাপ ...

তবু যাবার আগে
    কিনে নিই বেল ফুলের মালা
    দেখে নিই চারিদিকটা একবার ,
আর ফেরার সময় -
মুখটা মুছে নিই সভ্যতা আর সাম্যবাদের আলোয়।

স্বপ্নভঙ্গ
ওই যে লোকটা ৩৮এ বাসে চড়ে
কুয়াশার বুক চিড়ে চলে গেল
তার সাথে
    আর কোনদিন দেখা হবে না,
তবুও সে আছে
এ মহাবিশ্বে,
    আমার হাতের বাইরে
    আমার দৃষ্টির বাইরে...

এইসব অলীক কল্পনায় সওয়ারী হয়ে
কত রাত আমি অন্ধকারে থেকেছি,
যদি মনে পড়ে যায় এই সব রাতের মানে
যদি দেখা হয়ে যায় একটিবার
    তার সাথে ...

তখন মনে হবে
    স্বপ্ন একটি হোটেলের নাম
যেখানে রাত্রি যাপনের পর পড়ে থাকে
বিছানায় ঝড়ের চিহ্ণ

    না কি রুক্ষ বাস্তব ?