শীলা বিশ্বাস
স্বতোবৃত্ত তুলির টানে
পঁচিশ বসন্ত মুখ ফিরিয়ে চলে গেলে অবহেলায়
নিবিড় ভালোবাসায় আঁকড়ে ধরেছি এবারেও বসন্তকে
অন্যঋতু এসে নাড়া দিলে শক্ত করেছি হাতের মুঠো
কেবল বসন্ত থেকে গেছে তার নিজস্ব ভঙ্গিমায়
অচেনা ভেলার মতো ভেসে চলা জীবনও জাহাজের মাস্তুল ছোঁয়
হেরে যেতে যেতে নাছোড় জীবনও মাথা উঁচু করে দাড়ায়
স্বপ্ন হীন আক্রান্ত মস্তিষ্কও বেগবান অশ্বের মতো ধুলো ওড়ায়
বসন্তের স্বতোবৃত্ত তুলির টান রূপবন্ধে আমার উঠোনে ।
-
অন্ধগলি
একই আকাশ পরিধিতে নক্ষত্ররা
সীমানা চিহ্নিত করা নেই
আলো নিয়ে বিবাদও নেই
তবে মনোমালিন্য ছায়া নিয়ে
ছায়ার ভাগীদার কেউ হবে না
শূনের ভিতর গভীর অন্ধকার
কেউ কাউকে চেনে না
ঈষাণ নৈঋত জানে না
বিস্তারে শুধু অন্ধগলি ।।
-
নীল সখ্যতার খোঁজে
হেমন্তের নির্জন সন্ধ্যায় নীলকণ্ঠ ফুল
নীল সখ্যতার খোঁজে
স্মৃতিমেদুর পদধ্বনি শোনায়
হিমেল হাওয়ায় নিবিড় উষ্ণতা
আগুনের কাছে জানতে চায়
কার হৃদয় সে পোড়ায় অকারণ
গায়ের ওম ভাগ করে নেওয়া রাতসঙ্গী
গ্রীষ্মঘুমে যাওয়া লেপ কম্বল
সূর্যস্পর্শা হয় বারান্দা- রোদ্দুরে
ক্ষেতের নতুন ফসল গন্ধে মাতোয়ারা
শিশিরস্নাত সবুজপাতা ভোরের আবেশে
গা শুকায় নরম রোদের আদরে ।
-
ফাঁকা জলচৌকি
তবুও তো আমি ভাবতে পারি
তুমি আমার আলপনা দেওয়া
উঠোনে এসে দাঁড়াবে
জলচৌকি পেতে বসতে দেব
নারকেল মুড়ি সহযোগে চলবে গাল গল্প
তুমি সাম্রাজ্যবাদে বিশ্বাস করো না
আকাশকে পৃথিবীর সঙ্গে মেলাতে চেয়েছিলে
তা কখন হয় না
আকাশ দিগন্ত রেখায় এসেও
পৃথিবীর সঙ্গে মেলে না
আমার আলপনা আমি নিজেই মুছে দিয়েছি
নারকেল আর মুড়িও তাই আর
উপাদেও হল না, মিশলো না
জলচৌকিও ফাঁকা,একা পড়ে রইল ।
-
অরণ্যকুটীর
অনেক পথ হেঁটেছ
অরণ্যও তোমার সাথে
তাকেও পথ চিনে নিতে হচ্ছে
শহর এসে নিঃশ্বাস ফেলছে তার ঘাড়ে
তুমিও নিরালা খুঁজে অরণ্যের কাছে যাও
সে ছোটো হচ্ছে সময়ের কাছে
সবুজবন্ধু পাখিগুলোও মন মরা
প্রাচীন বৃক্ষ বুঝেছিল সময়ের ঝোঁক
অমল মাটিও পেয়েছিল আততায়ীর খোঁজ
কুঠারে কাটনি কাঠ,চিরেছ ধরিত্রী
হৃদয়
সময়ের সন্ধিক্ষনে মাটির কাছে ঋণ স্বীকার
মাটি মা আর বৃক্ষ পিতার অরন্যকুটীর হোক আশ্রয় ।
-