রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

বিনতা রায় চৌধুরী



বিনতা রায় চৌধুরী
ভালোবাসার সমাধি

অনন্ত সীমাহীন আকাশে পাখির ডানায়
পাঠালাম একটা চিঠি তোমার ঠিকানায় ।
তোমাকে চিঠি লিখিপড়ন্ত সন্ধ্যায়
যখন আকাশের তারা যায় নিভে ।
পাঠালাম সঙ্গে আমার কাছে পড়ে থাকা
কিছু স্মৃতি যা আজ এখন শুধুই অতীত ।
আর আছে কিছু চিঠির পাতা ,
ধুলো মাখা জমে থাকা কিছু ব্যথা ।
যা আমার কাছে আজও কস্তুরি সুবাস
তবু ভাঙা ভালবাসা আর থাকে কতদিন !
যদি পারো নিজে হাতে ছিঁড়ে ফেলে
ছুঁড়ে দিও সাগরের জলে !
ভালোবাসা ছেঁড়া ফুল হয়ে ভেসে যাক ।
তোমার আমার ভালোবাসা আজ স্তব্ধ সমাধি ।
যদি ভুল করে মনে পড়ে যায় কোনোদিন -
একটা পুষ্প স্তবক রেখো সমাধিতে সেদিন
ভালোবাসি লিখে - মিথ্যে হলেও ।



আমাদের গ্রাম

আমাদের গ্রামের রাস্তাটা
ঘন সবুজ ঘাসে ভরে থাকতো তখন -
এখন সেখানে ইঁট বাঁধানো সিমেন্টের কংক্রিট ।
দোলমঞ্চ দুর্গাদালান যদিও শেষ পরমায়ু নিয়ে
এখনও স্মৃতির রঙ নিয়ে টিকে আছে
মানুষগুলো বদলে গেছে আগাগোড়া -
চেনা মুখ আজ হয়েছে অচেনা ।
চাটাই পেতে বসতে বলে না এখন কেউ
চিবুকে আদর মাখিয়ে বলে না কেউই
কতোদিন দেখিনি তোকে !
কেমন আছিস ?
এখনও নারকেল গাছের সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে
রেকাবিতে নাড়ু আর কাঁসার গেলাসে জল
বাড়ি গেলে কেউ আর সামনে রাখে না ।
তবু তো সেখানে আছে মায়ের গন্ধ মাখা
আমাদের সেই গ্রাম -
আমাদের সবুজ শৈশব তাই তোমায় ভুলি কেমন করে !
এঁকে রেখেছি তাই ভালোবাসা দিয়ে একটি সবুজ গ্রাম
আর কিছু পুরনো মানুষ ।




নীরব ভালোবাসা
অসংখ্য ভিড়ের মাঝে
খুঁজে বেড়াই যে তোমাকে ।
জানা নেই তা কোন অধিকারে ?
নাই বা ভালবাসলে তুমি আমায় ।
জানবো এ ভালোবাসা শুধুই আমার
উঠানে শাড়ির আঁচল বাদল হাওয়ায়
ছুঁতে চায় আকাশ
জানি না কিসের আশায় ।
ব্যর্থ ভালবাসার গরল
নীরবে করলাম না হয় একাই গ্রহণ
অমৃত তোমায় দিয়ে ।
অসীম উদ্দাম স্পর্ধার ভালোবাসা
ভয় করতে জানে না ।
তুমি না চাইলেও -
এ ভালোবাসা শুধু থাকবে আমারই ,
আমার ভালবাসা থাকুক
নদীতে ভেসে থাকা ওই পদ্ম পাতায়
বাদল ভরা জলের মুক্ত ফোঁটায় ।




শিশির বিন্দু

মনের কথা লিখতে গিয়ে
কলমের কালি যায় ফুরিয়ে ।
তাতে ভরে ওঠে একটু একটু করে
আঁখি পল্লবিত তুষার শিশির বিন্দু -
যা ফোঁটা ফোঁটা করে ঝরে পড়ে
মিশে যায় সবুজ ঘাসে ।
অসংখ্য মানুষের পায়ের ধুলো তার শরীরে
আঘাতের চিহ্নে রক্তক্ষরণ ৷
পথযাত্রীর দোষ নেই
পথ চলাই তাদের কাজ
হয়তো মাড়িয়ে যাওয়াও -
তবুও লজ্জা অপমান ভুলে দাঁড়াতে হয় মাথা তুলে ।
ভরসা থাকেই- ফুলের সমর্পণ থাকলে
ডাক পড়বেই পুজোয় ৷
তাই দুঃখ ভুলে শিশির বিন্দুগুলিকে
রাখলাম মালা কোরে ।




মেঘলা আঁচল

পরনে তোমার নীল শাড়ি,
খোঁপায় রঙ্গনের থোকা ।
তোমার শাড়ির আঁচলে
রামধনু ঢেউ খেলে যায়
মায়াবি বাতাসে ।
পাখির ডাকে ঘুম ভাঙলেই
তুমি রক্তগোলাপ -
শুভেচ্ছা ছড়িয়ে দাও ভোরের উঠোনে ।
আবার তোমার ওই রূপে -
যখন রাত্রি নেমে আসে
শাড়ির রঙ যায় বদলে
পূর্ণিমা জ্যোৎস্নার আলোয় হয়ে উঠো এক রহস্যময়ী !
আরও আকর্ষণীয় ।
আকর্ষণ করে আমার শরীরের রক্তস্রোতে
অনুভবের প্রতিটা বিন্দুতে বিন্দুতে
রাতের মেঘলা আঁচল

আমার ক্লান্ত চোখে ঘুম এনে দেয়।।