বিনতা রায় চৌধুরী
ভালোবাসার সমাধি
অনন্ত সীমাহীন
আকাশে পাখির ডানায়
পাঠালাম একটা
চিঠি তোমার ঠিকানায় ।
তোমাকে চিঠি
লিখিপড়ন্ত সন্ধ্যায়
যখন আকাশের তারা
যায় নিভে ।
পাঠালাম সঙ্গে
আমার কাছে পড়ে থাকা
কিছু স্মৃতি যা
আজ এখন শুধুই অতীত ।
আর আছে কিছু
চিঠির পাতা ,
ধুলো মাখা জমে
থাকা কিছু ব্যথা ।
যা আমার কাছে
আজও কস্তুরি সুবাস
তবু ভাঙা
ভালবাসা আর থাকে কতদিন !
যদি পারো নিজে
হাতে ছিঁড়ে ফেলে
ছুঁড়ে দিও
সাগরের জলে !
ভালোবাসা ছেঁড়া
ফুল হয়ে ভেসে যাক ।
তোমার আমার
ভালোবাসা আজ স্তব্ধ সমাধি ।
যদি ভুল করে মনে
পড়ে যায় কোনোদিন -
একটা পুষ্প
স্তবক রেখো সমাধিতে সেদিন
ভালোবাসি লিখে -
মিথ্যে হলেও ।
আমাদের গ্রাম
আমাদের গ্রামের
রাস্তাটা
ঘন সবুজ ঘাসে
ভরে থাকতো তখন -
এখন সেখানে ইঁট
বাঁধানো সিমেন্টের কংক্রিট ।
দোলমঞ্চ
দুর্গাদালান যদিও শেষ পরমায়ু নিয়ে
এখনও স্মৃতির রঙ
নিয়ে টিকে আছে
মানুষগুলো বদলে
গেছে আগাগোড়া -
চেনা মুখ আজ
হয়েছে অচেনা ।
চাটাই পেতে বসতে
বলে না এখন কেউ
চিবুকে আদর
মাখিয়ে বলে না কেউই
কতোদিন দেখিনি
তোকে !
কেমন আছিস ?
এখনও নারকেল
গাছের সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে
রেকাবিতে নাড়ু
আর কাঁসার গেলাসে জল
বাড়ি গেলে কেউ
আর সামনে রাখে না ।
তবু তো সেখানে
আছে মায়ের গন্ধ মাখা
আমাদের সেই
গ্রাম -
আমাদের সবুজ
শৈশব তাই তোমায় ভুলি কেমন করে !
এঁকে রেখেছি তাই
ভালোবাসা দিয়ে একটি সবুজ গ্রাম
আর কিছু পুরনো
মানুষ ।
নীরব ভালোবাসা
অসংখ্য ভিড়ের
মাঝে
খুঁজে বেড়াই যে
তোমাকে ।
জানা নেই তা কোন
অধিকারে ?
নাই বা ভালবাসলে
তুমি আমায় ।
জানবো এ
ভালোবাসা শুধুই আমার
উঠানে শাড়ির
আঁচল বাদল হাওয়ায়
ছুঁতে চায় আকাশ
জানি না কিসের
আশায় ।
ব্যর্থ ভালবাসার
গরল
নীরবে করলাম না
হয় একাই গ্রহণ
অমৃত তোমায় দিয়ে
।
অসীম উদ্দাম
স্পর্ধার ভালোবাসা
ভয় করতে জানে না
।
তুমি না চাইলেও -
এ ভালোবাসা শুধু
থাকবে আমারই ,
আমার ভালবাসা
থাকুক
নদীতে ভেসে থাকা
ওই পদ্ম পাতায়
বাদল ভরা জলের
মুক্ত ফোঁটায় ।
শিশির বিন্দু
মনের কথা লিখতে
গিয়ে
কলমের কালি যায়
ফুরিয়ে ।
তাতে ভরে ওঠে
একটু একটু করে
আঁখি পল্লবিত
তুষার শিশির বিন্দু -
যা ফোঁটা ফোঁটা
করে ঝরে পড়ে
মিশে যায় সবুজ
ঘাসে ।
অসংখ্য মানুষের
পায়ের ধুলো তার শরীরে
আঘাতের চিহ্নে
রক্তক্ষরণ ৷
পথযাত্রীর দোষ
নেই
পথ চলাই তাদের
কাজ
হয়তো মাড়িয়ে
যাওয়াও -
তবুও লজ্জা
অপমান ভুলে দাঁড়াতে হয় মাথা তুলে ।
ভরসা থাকেই-
ফুলের সমর্পণ থাকলে
ডাক পড়বেই
পুজোয় ৷
তাই দুঃখ ভুলে
শিশির বিন্দুগুলিকে
রাখলাম মালা
কোরে ।
মেঘলা আঁচল
পরনে তোমার নীল
শাড়ি,
খোঁপায় রঙ্গনের
থোকা ।
তোমার শাড়ির
আঁচলে
রামধনু ঢেউ খেলে
যায়
মায়াবি বাতাসে ।
পাখির ডাকে ঘুম
ভাঙলেই
তুমি রক্তগোলাপ -
শুভেচ্ছা ছড়িয়ে
দাও ভোরের উঠোনে ।
আবার তোমার ওই
রূপে -
যখন রাত্রি নেমে
আসে
শাড়ির রঙ যায়
বদলে ।
পূর্ণিমা
জ্যোৎস্নার আলোয় হয়ে উঠো এক রহস্যময়ী !
আরও আকর্ষণীয় ।
আকর্ষণ করে আমার
শরীরের রক্তস্রোতে
অনুভবের প্রতিটা
বিন্দুতে বিন্দুতে ।
রাতের মেঘলা
আঁচল
আমার ক্লান্ত
চোখে ঘুম এনে দেয়।।