শ্যামলী
বন্দ্যোপাধ্যায়
বৃষ্টিমাসের পদাবলি-১
‘সদ্য:পাতি
প্রণয়িহৃদয়ং বিপ্রয়োগে রুণদ্ধি’-পূ.মেঘ।
প্রথম দেখায় শুধলে যেদিন আমার কী নাম,
বৃষ্টিজলের ধারায় সে নাম লিখেছিলাম।
প্রথম যেদিন হাত ছুঁল মোর চোখের পলক,
বৃষ্টি হয়ে ছড়িয়েছিলাম ভূলোক দ্যুলোক।
প্রথম যেদিন স্পর্শ দিলে পায়ের পাতায়,
বৃষ্টিফোঁটা উছলেছিল চোখের কানায়।
প্রথম যেদিন বললে সবই কথার কথা,
বৃষ্টি ভিজে বলি এ মন জানত এটা।
পাখির ডানায় ভর করে ওই উড়লে যেদিন,
বৃষ্টিতে কই বন্ধ হয়নি উড়ান সেদিন!
মেঘ জানেনা জলটাকে তো রাখতে ধরে,
ছাড়াছাড়ির এই খেলাতেই বৃষ্টি ঝরে।
মহাকবির সৃষ্টি আমিই মালবিকা,
মেঘদূত নেই বৃষ্টি ছাড়াই মোর অলকা!
____________________
বৃষ্টিমাসের পদাবলি-২
শ্রাবনী আকাশে হায় চাঁদ বানভাসি!
আকাশ বিরহী হয়
অঝোরে অশ্রু বয়
এসএমএস মুঠোফোন
হৃদয়-অবাধ্য মন
চাঁদের পিছু ধরে
কবিকে একা করে
নক্ষত্ররাও গেল বুঝি বৃন্দাবন কাশী!
___________
বৃষ্টিমাসের পদাবলি-৩
না হয় একটু বৃষ্টি রাতে এসেইছিল
মৌন রাতের স্তব্ধতা সে ভেঙেইছিল
বৃষ্টিমাসের প্রশ্রয়ে সে বেড়েইছিল
তাই বলে তার মনে মনে এই ছিল!
সেরসায়রী কবির পিছে নাছোড় হল
অশ্রুনদী অকারণে রাত জাগাল
রাতপথেরা তেরোনদীর জল বহালো
নাহয় বৃষ্টি একটু ঝেঁপেই এসছিল!
না হয় বৃষ্টি বাঁধ ভেঙে রাত বইয়েছিল
বৃষ্টিভোরের ওম নিয়ে কেউ ঘুমিয়েছিল
তার খেসারত কম দিলনা মানুষগুলো
বৃষ্টিফোঁটার শর্তাবলীই এই ছিল!
কোর্টকাছারি আপিস কলেজ থমকে গেল
স্কুলপড়ুয়ার ব্যস্ত রুটিন ত্র্যস্ত হল
হাতটানা ওই রিকশাওলার পৌষ এল
সব্বোনাশীর এইটুকুনই পয় ছিল!
_________
বৃষ্টিমাসের পদাবলি-৪
কাব্যলোকে একচেটিয়া কবিই প্রজাপতি।
বৃষ্টিমাসে খুঁটে বাঁধেন মনের মতিগতি।।
কবির সাথে যেমন দশক তেমনি জড়ায় বর্ষা
বৃষ্টিমাসের পঙক্তিমালায় মনখারাপই ভরসা।।
প্রতি ফোঁটায় ছিটকে আসে চুম্বনেরই ক্ষত।
স্বেচ্ছাচারী মেঘপিওনই দোষ করেছে যত।।
রবির আছে মালবিকা জয়ের শ্রীরাধিকা।
শহর আছে জলছবিতে হারিয়ে পথরেখা।।
বৃষ্টি যদি রামগিরিতে বৃষ্টি অলকায়।
বৃষ্টি মানে কাজের মেয়ের তোষক ভিজেও যায়।।
পদাবলি বৃষ্টি জোড়ে বৃষ্টি ভাঙে টালি।
বাঁশ বাখারি ধার কর্জ মিস্ত্রি রিপু তালি।।
বীজবোনা ধান জলকে গেল একশো দিনের কাজে।
দুমুখো সাপ কবির পাতেই দুধকলা সে খাবে।।
____________
বৃষ্টিমাসের পদাবলি-৫
কদিন আগেই হয়ে গেল বাদবিতণ্ডা।
যা পেরেছে বলেছে আমায়,
আমিও ছাড়িনি তাকে, করেছি পণ-
কাজে রোজ আসবে যখন,
থাকব আমি শোবার ঘরে
দোর লাগিয়ে দিয়ে-
পোড়ারমুখি মেয়ে!
গ্রীষ্ম গিয়ে বর্ষা আসে,জল জমে রাস্তায়-
পোড়া কপাল !চটি জোড়ার
একটা ছিঁড়ে মায়ের ভোগে যায়!
রিকশা খুঁজি এদিক ওদিক,একটাও নেই হায়-
এমন সময় দেখা দিল সে দূরের রাস্তায়।
হাত নেড়ে সে ডাকল আমায়-
‘বউদিদি গো! কোথা
থেকে?’
মুখে কুলুপ দিয়ে চটি হাতে নিয়ে
ভাবি,দেখা হবার এই কি সময়?
পোড়ারমুখি মেয়ে!
তরতরিয়ে জল পেরিয়ে এল আমার পাশে।
খুলে দিল নিজের পায়ের চটি,
বুঝলুম বেশ, ও দুটোই আজ
বাড়ি ফেরার গতি! মাত্র দু মাস আগে-
এই জোড়াটাই দিয়েছিলুম ওকে !
পরের দিনই বলল এসে-
‘বউদিদি গো!
মাইনে বাড়াও
যা ছিল তার চেয়ে।’
এই ছিল তোর মনে?
তোর বাড়ির তো আধা জিনিস
আমার থেকে নিয়ে,
পোড়ারমুখি মেয়ে!
__________