সৌরভ মজুমদার
আজ আর কাল
আজ আর কাল নয় বিগত,
প্রতিদিন এই এক ভাবনায় আকীর্ণ যখন
সমস্ত মনন আর আশা আর আবিষ্ট শরীরI
আনত চোখের ভাষায় সামনে সহস্র প্রশ্নে
অপেক্ষায় সনাতন কাল,
অভিমুখ বদলে নদীর জেগে ওঠে তীরI
কালো থেকে ধূসর আর
সাদা থেকে পর পর রঙ এর বিস্তারে,
বদলের ই অপেক্ষায় অনিমেষ যাপন
আর আনন্দ গানের মীড়I
যত কথা যত ব্যথা আর যত রিক্ততার ডালি
পার হওয়া কঠিন কিম্বা অনায়াস অভ্যাসে,
যত আলো খুঁজেপাওয়া
আমার সমস্ত আমির II
আমি স্থির জানি
এখানে শব্দ ভীষণ, আওয়াজও বিষম
কোথা থেকে শুরু হল কোথায় বা শেষ!
জানা নেই মানা নেই শুধু এক চেতনার নিরন্তর, অবিরাম ক্ষরণ
উজান দরিয়ায় বা সহযোগী স্রোতে
চলার আনন্দে আত্মস্থ অভ্যেস
অজানা গন্তব্য,
ফিরে পাওয়া কালের হাত ধরেI
আমি স্থির জানি,
তুমিও ভাবছ বসে, সময় কোথায়
চুরি যায় অজস্র কজের ভিতর
কোথায় বা পরে ফাঁকি, কোথা রয় বাকি
আর এক বোধের সাথে সম্মুখ সমর –
বহুধা বিভক্ত জীবন, আহ্নিক গতিতে
আযোজন পথ শ্রমণ অবিনস্ত বেশে, একলা,
অবিরত বাসাবদল, স্থান কাল পাত্রের নানা হাতছানি
উত্সমূলে প্রবাল প্রাচীর
নিঃশব্দ ক্যকোফোনি, সুগভীর আলাপন, নিশ্চুপে ইরা পিঙ্গলা II
আমিও নীরব হবো
আমিও নীরব হবো, যেমন প্রতিটা সচল বিন্দু স্থিতিশীল, একদিন
অক্ষর বুনে বুনে শব্দ, শব্দ বুনে বুনে বাক্য
বাক্যের তানাবানায়, ঠাস বুনটে তৈরি ছবির ক্যানভাস্ সমস্ত
একদিন সিপিয়া থেকে ধূসর, রঙ্গিন থেকে রঙ্ হীন
তারপর আরো কিছু স্তর খোসে গিয়ে একেবারে সাদা প্রাণহীনI
তবুও নিস্তব্ধ নিকষ কালোয় জেগে থাকে অন্তস্থ সৃষ্টির বীজ,
থমকে যাওয়া শিকড়ের চলন, আর ধাবমান লাভাস্রোত যেদিন
জল পায়, আলো পায়, পায় প্রাণ, খোলা হাওয়া আর উন্মুক্ত প্রাঙ্গন
শুধু সেইদিন যত লেখা আর ছবি আর পাথরের বুকে বাইসন
শুধু সেইদিন নিশ্চিত মুখোমুখি, গত আর অনাগত ক্ষন II
দুঃখ-সুখ
তোমার মনে হঠাত্ করে মেঘ জমলে,
আঁ ধার ঘনায় ঠিক তখনই অন্য কোথাও,
তোমার মনে বৃষ্টি এলে ঝমঝমিয়ে,
উথাল পাথাল ঢেউ উঠেছে অন্য জলেI
তোমার মনের খুশির হাওয়ায় উড়াল দিলে,
রিদয় হয়ে পৌঁছে যাওয়া মানস কূলে
তোমার মনে কুসুম আলোর পরশ পেলে,
ভূবনজোড়া দাবানল ও থামতে পারেI
যখন তোমার দুঃখ যাপন আপন মনে
হলুদ ব্যথায় কাতর হয় এক অন্য সুজন
যখন তোমার খেয়ালি মন তারায় ভরে,
হাজার আলোর বাঁধ ভেঙ্গেছে অন্য মনেI
তোমার কাতর করুন নীল চোখের তারায়,
সহস্র নীল কান্না ভাসে অন্য কারো
তোমার সুখ উথলে ওঠা হাসির দোলায়
এক ছায়াপথ সুখী আমায় খুঁজতে পারো II
রক্তকথা
রক্তকথা লিখতে মন ব্যথায় ভ'রে
রক্তকথাই কাশ্মীর থেকে কুমারীকা
রক্তকথা মমার্ত আর কাচের দেশে
রক্তকথা আমার আকাশ বাতাশ জুড়েI
রক্তকথা পড়শী দেশে, এবং দূরে
রক্তকথা প্রলেতারিয়েত, এলিট জানে!
রক্তকথা ধর্ম পালন কারোর কাছে
রক্তকথা বিধর্মী মা'র শূন্য কোলেI
রক্তকথা বুনতে কেন হাত সরে না!
রক্তকথা রক্তলোভীর রক্তচোখে
রক্তকথাই তানা-বানা রক্তলেখার
রক্তকথা লিখতে বসে রক্ত ঝরেI
রক্তকথার ভাষা কোন মন্ত্রবলে
রক্তনেশার মাতন আনে রক্তবীজে
রক্তকথা ভ্রান্ত এক দৃশ্যকাব্য
রক্তকথাই অস্ত্র তোলে নবীন হাতI
রক্তকথা যদি এক ধর্ম মানে
রশ্মিরক্ত কেন ঝরে হিরোশিমায়!
রক্তখেলা নাগাসাকি, তিয়েনান মেন, চেরনবিলেও
রক্তকথা গ্রাউন্ড জীরোর শান্তিস্তুপেI
আরক্ত এই রক্তযাত্রার বিফলগাথা
শুনতে কি পাও তোমরা যত শোণিতপ্রেমী!
রক্তকথায় যতই ভরাও ভূবন ভূমি
রক্তকথাই সবুজ প্রাণ এর জন্মদাত্রীII
আমার আহ্লাদ
অবিরত সংঘাত,
অযুত সময় ধরে তোমাকেই খুঁজে ফেরা,
নরম সবুজ ভিজে ঘাসজমি,
অজস্র পাথরপথ পার হয়ে এসে,
আমার আহ্লাদI
অনন্ত আলো,
আর ঘোর লাগা ভোরের আশায়,
জেগে থাকা নিযুত রাত্রি,
তোমাকেই ভেবে ভেবে ক্লান্তিহীন শব্দের মিছিলে,
বিপন্ন বিষ্ময়I
সমস্ত অপ্রেম,
তোমাকেই জানাব বলে
পাড়ি দেওয়া অথইসাগর ডিঙ্গি নৌকোয়,
শিকেয় তুলে সুখযাপন সবটুকু,
আমার কষ্ট পরিচয়I
আনন্দ অপার,
তোমাকেই এনে দেব পারিজাত, অমৃত জল,
একাকী বিষপানে নীলকণ্ঠ হয়ে বারবার,
শুধু বোলো একবার, আমিও তোমারII