উম্মে হাবীবা
জোনাকপাড়া
______________
অযুত কোটিবার বলি- ওটা নয়, এইটা তুমি। এই
হলো তোমার জীবন এবং সে জীবন নিয়ে বাঁচা। কাজে দেয়না, যত সময় ধরে বলি
তারচে' কম সময়ে ভুলে যাই। অন্ধ চোখে দেখা অন্য ভুবন নিয়ে মেতে
থাকি। সেখানে সব এখানকার মত নয়, আমিও। সেখানে
এক প্রাণের ভেতর লক্ষ কোটি প্রাণ নিয়ে চলা। বারমাসি সংযম নেই, অন্ধকার ধরে
আনা রাত্তির নেই। চোরা সুখে মত্ত হবার মহাজন নেই।
সেখানে সমুদ্রের কারণে আকাশ নীলাভ। নক্ষত্রপথ চুলের সিঁথির
মত। হাঁটুজলে রক্ত কুমুদেরা দল মেলে ডাকে। সবে দশ তেমন বালকের চোখে অকাট্য প্রেম।
জলের নীচে ছুঁই ছুঁই করে, ছোঁয় না। কানামাছি সম্পর্কে দূরে ধায়, নিকটের হয়।
সেখানে দুঃখের পর সুখ আসার নিয়ম নেই। অঢেল সুখেও পানসে হয়না সুখবোধ। দেয়ালের ওপাশে
বৃষ্টি বরফ ঘন হয়ে ঝরে। যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা আবেশ জমাট বাধায়। চিত্রা হরিণের
ধাওয়ায় খেলার বিকেল নামে। শাড়ি ছেঁড়া শোক ভুলিয়ে দেয় বাজিগর পুরুষ। যার ঘর, আমার দুই চোখের
দূরত্বে জোনাকপাড়া হয়ে জ্বলে।
আমাদের ঘুম বাড়ি
_______________
আমিও ঘুমের দিকে মুখ ফেরাই
সেদিকেই খোলা কবাটের বুক নিয়ে
আমার মুখের দিকে ফেরানো তুমি
তোমার আমার চোখ
আমার তোমার চোখ
ছুটোছুটি করে ঘুমের ছড়া গান খোঁজে
কপালের ভাঁজে থরে থরে চুম্বন
স্বরচিত কবিতা আওড়াতে থাকলে
আমরা অহেতুক লজ্জা বিসর্জনে সম্মত হই
আমাদের দুইজোড়া হাত
পরস্পরকে কাছে টেনে নিতে নিতে নিতে নিতে
অবশ হয়ে আসে শেষটায়
প্রথম বন্ধনী দ্বিতীয় বন্ধনী
এভাবে তৃতীয় বন্ধনীর দেয়াল টপকে
আমরা এক নির্জন ঘুমের মুখোমুখি হই।
চৈত্রে
এই চৈত্রে
আমরা পুড়ে যেতে পারতাম
কিছুটা ঝলসে হলেও
নুতন আবরণে
বদলে নিতে পারতাম
আমাদের ভবিতব্য
গোটা বসন্তে করুণ ডাকছে
যে কোকিল
মহা সমারোহে
তাকে জানাতে পারতাম
প্রণয়ঘটিত যত সুক্ষ্ণ
কারবার।
যুদ্ধবাজ পুরুষ
নগর কেঁপে শীত নামলে
অন্ধকার মুড়ে বহুদিন যেতে
চেয়েছি
রাতের পাড়ায়
আগুন কেনার আকাঙ্ক্ষা ভুলে
ফিরে এসেছি এই ঠাণ্ডা ঘরে
এ ঘরেই সন্ধ্যার আয়তন মেপে
কাছে আসার সংকল্প করেছে
এক যুদ্ধবাজ পুরুষ
যার তরবারির ফলা মুছে
নিয়েছে
আমার কাঁধের মসৃণতা
চাপ চাপ রক্তের উপর দাঁড়িয়ে
সে
বলছে-
হে নারী... অপেক্ষায়
থেকো...
তোমাকে যোগ্য করে রেখে
গেলাম
জন্মান্তরের ভালোবাসায়।
জিরো জিরো
ট্রিপল সেভেন
অপেক্ষা শব্দটিকে লিখতে
চাইলে
সমূলে কাঁপিয়ে দিয়ে যায় কেউ
চাপচাপ ভয় বুক বেয়ে নেমে
যায়
নীচে আরও নীচে ঠাণ্ডা
মেঝেতে
সেখানে রাতের এঁটোকাঁটা
ব্যবহৃত জামাকাপড়
সেফটিপিনের ডগায়
ক্ষত বেড়ে যাওয়া ওড়না
স্তব্ধ রাত আরও স্তব্ধ
অপেক্ষায় ডুবে থাকতে থাকতে
নেশার তীব্রতা নিয়ে ক্ষুধা
আসে
নরম সাদা ভাত ঝোল তরকারী
কয়েক ঢোক পানি
ঘুম এবং স্বপ্নের মাঝখানে
অপেক্ষা শব্দের নির্লজ্জ
নাচন
রাতের স্তব্ধতা ছিঁড়ে
উচ্চারিত হয় কল্যাণের দিকে
এসো
কুয়াসাদের বসতি উচ্ছেদ করে
বৃষ্টি নামলে বাড়ন্ত শীতের
শরীর
রোয়া ওঠা কুকুরের টানা
কুঁইকুঁই
হঠাৎ অনিরুদ্ধকে মনে করতেই
একটা মদের দোকান মনে পড়ে
গ্লাস ভর্তি তরল অপেক্ষা
হাতে
বসে থাকা এক যুবক উদভ্রান্ত
বুকপকেটে লেমন কালার রুমাল
সেলফোনের স্ক্রিনে ডায়ালকৃত
লাস্ট ডিজিট
জিরো জিরো ট্রিপল সেভেন।