অর্যামদেব দাস
ভারতমাতার মেয়ে
তিনরঙা আজ সবার ডিপি -পিপি
ভারত আকাশে ডিজিটাল জাল ওড়ে
আর্সেনিক আজ ও আমার জলে সহায়
আধপেটা পেটে অপুষ্টি ছায়া পড়ে |
আজও আমি প্রসব ব্যাথার রাত
ভ্যান গাড়িতে দশমাইলের পথ
ভাঙন ঘেরা আমার বন্যা - গ্রাম
বর্ষণ রাতে ত্রিপল-ই ঈশ্বর নাম |
আমার শৌচ ধানক্ষেত আলপাড়
আমার আব্রু শেষ রাত্রের ভোর
আমার রান্না ঘুঁটে উনুনের ঝাঁজ
আমার পুজোর মুড়ি বাতাসা সাজ |
একদিন কাজ দুশো দিন কিছু নেই
মাটি কাটা হয় দলাদলির 'পরে
আমার ঘামে পুকুর ভরাট হয়
আমার টাকা,দালালের পেট ফোলে |
আমার স্কুল ভাঙা বোর্ড ফাটা দেওয়াল
আমার স্কুল কাদা পথ জমা জল
আমার খরচ পনের অংকে মাপা
আমার শিক্ষা মিড্-ডে মিলেই চাপা |
রোজগার তবু সংসার আছে বলে
রোজগার,কারণ পেটে ধরতে হয়
ছানির ক্যাম্প পাঁচ টাকার দূর, তবু
ঘন্টার পথ হেঁটেই যাওয়া চলে |
আমার রাত্রি যোনিপথে লোহার তির
আমার মুক্তি অ্যাসিড পোড়া মুখে
আমার আওয়াজ রেওয়াজ হয়না আর
আমার কান্না ভাটিখানায় হাসি তোলে |
ঘরের লক্ষ্মী, দুধে আলতা পা
মেয়ে জন্মালে আজও শক্ত চোয়াল
জঠর ফাঁসে পুত্রলাভের আশায়,
মেয়ে বিয়োলেই, রক্তে ভাসা কপাল |
শহুরে পালিত উদারপন্থী বাবু
মুখ-বই তে লাগাও রঙের ছোঁয়া
মুক্তি দিবস সত্যি করে চাই?
আমার জন্ম তোমার হোক ভাই |
আমার অফিস,আমার বড় গাড়ি
আমার পার্টি,আমার ছোট্ট মেয়ে,
আমার বাড়ি,আমার লেকচার
জীবন এগোয় নিঃস্বাস না ফেলে
আমার কাজ,আমার সংসার
অফিস ফেরত প্যারেন্ট-টিচার মিট
আমার জীবন আমার মতো চলুক
তোমার নিয়ম, আমার ও চাহিদা থাক |
আমার ইচ্ছা মর্যাদা টুকু পাই
একটা জীবন,একটু বেঁচে নি
আরজন্মে অন্য কিছু হবো
স্বাধীনভাবে বাঁচার মানে পাবো |
দেড়শো কোটি প্রসব করার পরে,
সত্যি করে বোলো, ভারতমাতা,
আবার যদি সুযোগ পাও তবে,
নেবে কি, মেয়েজন্মের স্বাধীনতা?
ঠাকুর এবং একটু অসহিষ্ণুতা (?)
তুমি কেমন আছ , ঠাকুর?
খুব ভালো, তাই না?
তোমায় কটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে খুব |
আশা করি তুমি গর্দান নেবে না |
রক্তপিপাসা মেটানোর জন্য নিজের
গলা কেটেছিল তুমি |
এমন সংযম যদি আমরা দেখতে ,
দেখাতে পারতাম ঠাকুর |
আমরা শুধু মহানন্দে তোমার হাতে
খাঁড়া টা পড়িয়ে দি |
আমাদের রক্তপিপাসায় কিন্তু আমরা
পরের গলা কাটি |
তোমার ভালো লাগে,ঠাকুর ?
আচ্ছা, সেদিন যে তোমার মন্দিরে
ঢোকার অপরাধে পুড়ে মরতে হলো
একটা নব্বই বছরের দলিত বুড়োকে
তোমার কষ্ট হয়েছিল?
না ..মানে....তুমিও তো আগুনে পুড়েছিলে
স্বামীর অপমানে |
খুব জ্বালা করে না, ঠাকুর?
বুড়োটারও খুব জ্বলেছিল মনে হয় |
আচ্ছা ঠাকুর, তোমায় যখন আল্লাহ বলে ডাকে
আর তোমার প্রতিপক্ষ শয়তানকে ঢিল মারতে গিয়ে
লাখ লাখ লোক
পায়ের চাপে চেপ্টে মরে যায়
তোমার মনে হয়না যে ওই পাথরের
বুক ভেঙে একটা ঘাসের কণা গজাক |
প্রাণের জয় হোক |
মনে হয়?
না মানে, তোমার বুকের উপরেও তো
পায়ের চাপ পড়ে |
আচ্ছা বেশ, ঠাকুর | একবার বলবে তুমি,
সেইদিনের কথাটা |
তোমার মন্দিরে দাঁড়িয়ে যখন কতগুলো লোক
কসাইয়ের মতো ঠিক করে নিলো নিজের মতো
আর ঝাঁপিয়ে পড়ে পিটিয়ে মেরে ফেললো একটা লোক কে
তোমার হাতে বাঁশিটা কি তখনও সরগম সুরে
বেজেছিল?
অসহিষ্ণু লাগেনি একটু?
'অভ্যুথ্যান অধর্মাস্য .....'
কিছু কি এরকমই বলেছিলে?
না মানে ,
আর্ত চিৎকার টা বড্ড শোনা যাচ্ছে কিনা |
আচ্ছা ঠাকুর,একবার বলবে,
তোমার ঠিক কি মনে হয়?
কালো টাকায় সাদা হওয়া সোনায় সাজ যখন |
লিটার লিটার দুধে তোমার স্নান হয় যখন
আর একটা আমলাশোল তাকিয়ে থাকে ম্লান |
তোমার কি একটুও ঘেন্না করেনা, ঠাকুর?
বিষ রঙে চোবানো ফলগুলো কেটে যখন
নৈবিদ্য সাজিয়ে দেয় তোমায়,
খাও তো?
নাকি সত্যি গাঁজা ছাড়া তোমার কিছু
কথা চলেনা?
তুরিয়াবস্থা সদাবিরাজমান?
ঘরের কুলুঙ্গিতে সিঁদুর মেখে যখন
বসে থাকো তুমি
আর তার নিচে খাটিয়ায় যখন বৌকে পেটায়
মাতাল বর টা ,
আরশোলা চেটে যাওয়া ওই কুলুঙ্গিতে,
দমবন্ধ লাগেনা তোমার?
বেশ্যাবাড়ির মাটি মেখে তবে তোমার মূর্তি হয় |
তবু দুর্বার কে পুজোর প্রার্থনায়
হাইকোর্ট যেতে হয় | বারবার |
কেমন লাগে,ঠাকুর?
তবু যখন একটা স্পিরিট ল্যাম্প জ্বেলে
তুলির টানে তোমার চোখ ভোরে যায় আলোয়,
বড্ড ভালো লাগে, ঠাকুর |
ভালো লাগে যখন চারটে গণধর্ষণ
কুড়িটা দেশক্রমণের আর হাজারো বোমাবাজির পর,
এক মুসলমান মা জন্ম দেয় এক মন্দিরে এসে |
তুমি যে তখনি আবার জন্মাও |
ভয় লাগে, যখন তোমার আমার মাঝে কিছু
তত্ত্ব,কিছু ইসম এসে পড়ে |
দেশ,রাষ্ট্র,সমাজ,সরকার,বিরোধী,এরা - তারা,
সবাই তোমায় বেচে খায় |
সত্যি বলো তো, কেমন লাগে?
হাতের পায়ের পেরেকের দাগগুলো জ্বলে ওঠে না?
মনে হয়না, আবার করে ঝড় উঠুক একটা?
সন্ধ্যা হলে প্রদীপ জ্বলে, সকাল হলে সূর্য ওঠে |
অন্ধকারটা তবু থেকেই যায় , তাই না?
(ইদানিংকালের কিছু অসহিষ্ণু (?) ঘটনা কে মনে রেখে)
খোপ কাটা দিন
খোপ কাটা দিন . মিশকালো রাত
আলাদা করে সময় মাপা যায়না এখানে
সবকিছু একই রকম
শুধু দেয়ালে রোজ একটা করে দাগ
একটা করে দিন যায়
খোপ কাটা দিন
গুণতি করা
অনু রোজ ওঠে . রোজ যেমন উঠতে হয়
হাজার হাজার ওর মতো মেয়েকে
মাঠে, প্রান্তরে তুলে নিতে হয় কাস্তে
মাথায় তুলতে হয় ভার
মুখ বেঁধে ঢুকতে হয় খাদানে
আর দিনটা শেষ হলে আবার যেমন
ফিরে আসে ঘর
আসে লোক . আসে রাত
খোপ কাটা দিন আসে. আবার
অনুর তা হয়না. অনু ওঠে.
তার খোপ কাটা দিনের শুরু একটু এলোমেলো
তার ঘুম ভাঙে নিজের খেয়ালে
তার দিন শুরু হয় হুইসেল টা বাজলে
অনু জাগে . তার খোপ কাটা দিনে গতি আসে
দরজা খোলে . খোপ কাটা ঘর
অনু বেরোয়. অনু হাটে . মুখ ধোয়
আঁজলা ভরা জলে যেন ব্রহ্মপুত্র ঝরে
নামটা মনে আছে অনুর.
দশ ক্লাসে ভূগোলের ম্যাপ আঁকতো
ভারী ভালো নাম.
পুরুষ মানুষের মতো ভারী
অনু আসে তারপর . মেট্রন দিদি চুল বেঁধে দেয়
মুড়ি খাওয়ায়. তারপর বাগানে নিয়েও যায়.
বাগানে কত ফুলের টব . কত গাছ . পাখি.
অনু ভাবে. এই তো আমার পাড়া . আমার গ্রাম
আমার দেয়াল তবে ওরম অচেনা কেন ?
আমার ঘরে তো অমন খোপ কাটা ছিল না..
তবে যে দূর্গা দিদি বলে এটাই আমার ঘর.
ছয় নম্বর ঘর. অনুর ঘর.
আমার ঘর তো ছিল একচালা টিনের.
এরম পাকা দেয়াল তো নয়.
পাকা দেয়াল তো ওই বাড়ি. যেখানে অনু যেত.
অনুর স্কুল. দিদিমনি.
যাকে মায়ের থেকেও ভালো লাগতো.
যে তাকে দশ ক্লাসের পর কটা টাকা
আর একটা মস্ত বড় স্বপ্ন ধরিয়ে দিয়ে রাত অন্ধকারে
বি এস এফ ক্যাম্প পার করে দিয়েছিলো.
বলেছিলো 'বাঁচ অনু,তুই তো বাঁচ '
ওপার যখন এপার হলো, ছিল.
দিদিমনির লোক ছিল
ও ছিল সাথে
এনেছিল একটা কারখানা গঞ্জ তে.
সারাদিন গতর খাটালে বিকেলে কারা যেন
বিনাপয়সায় পড়ায় , তাদের কাছে যেতে দেবে.
অনু কিরম বড় হয়ে গেছিলো. হালকা মনে পরে.
প্রথম রাত্তিরেই অনু বুঝেছিলো. টেকা দায়.
বাগানে এলেই সব কেমন মনে পরে যায়.
গাছের পাতায় হাওয়া দোলে আর বারবার মনে পরে,
এই গাছের ছায়ায় একদিন শ্রান্ত অনু ঢুলে পড়েছিল বলে,
কারখানা থেকে ছিঁচকে এক মিস্তিরি এসে এমন পেটান পিটিয়েছিল...
মরেই যেত যদি না ও আসতো .
মরেই যেত যদি না ও আসতো .
এসে দু ঘা এলোপাথাড়ি দিয়ে অনুর হাত ধরে বলতো '
চলো চলে যাই অন্য কোথাও'
দুজনের কারখানা বাস ঘুচলো.
গঞ্জ ছেড়ে একেবারে খাস কলকাতা মায়ানগরী.
গোবিন্দপুর রেল কলোনী তে
ভাড়ার ঘরের ভাড়াটে হয়ে আসতেও
অনুর গলার হাতের রুপোর হার বালা গোলে গেলো.
অনুর হাতে উঠলো শাঁখা .
অনুরা মিলে গেলো .
ও কাজ পেলো কাছের গ্যারাজে .
গাড়ি চালানো শিখলো.
ড্রাইভারের বরাত জুটলো.
অনু তখন অভিজাত পাড়ার রান্না মাসি.
ছোট ঘর তাও খোপ কাটা ছিলোনা
ছোট ঘর তবু নিজের ছিল খুব.
থাকলো না. ও চলে গেলো অন্য মেয়ের সাথে.
অনু কাজ করে. একার সংসার চলে যায়.
অনু যে বাড়ি রান্না করতো,সেই বাড়ির মালকিন
ছিলেন মাস্টারনি. অনুর ছোট দিদিমনি.
আবার অনুর হাতে কলম. আবার বই
এবার বারো ক্লাস
পাস দেয়ার পর মাস্টার দিদি
অনুকে স্কুলেরই একটা কাজ পাইয়ে দিলো.
অনু আবার কাজ করলো. করতে লাগলো.
শুধু সব কাজেই খালি মনে পড়তো ওকে.
অনু একদিন যাচ্ছে পথ ধরে.
কুনুই ধরে হঠাৎ একটা টান. ঘুরে দেখে ও.
তার পাশে ...দিদিমনি.
এই এত্তদিন পর!
অনু ছুটে ধরতে যাবে...
দিদিমনি বললেন ওপারে তার বাপ মা মরে গেছে.
কচুকাটা.
কারা নাকি লেখকদের খুন করছে.
অনুর বাপ মা দাঁড়িয়েছিল বাঁচাতে..
মূর্খের রক্তে ভিজেছিলো লেখকের শব .
দিদিমনি আরো কি বলছিলেন মনে নেই
ঠিক খেয়াল নেই সে পড়ে গেছিলো কিনা.
মাথায় চোট লেগেছিলো কি?
ভুল তো সে বলেনা
মনে পড়েনা তারপরটা
শুধু এই খোপ কাটা ঘরে থাকতে হয় এখন তাকে
কারণ মাস্টার দিদি তাকে এনেছে এখানে.
মাস্টার দিদি রোজ আসে. দিদিমনি কোথায় গেলো?
মাস্টার দিদি কথা বলে,ডাক্তার আনে
জিজ্ঞেস করে,কেমন আছে অনু!
অনু বলে ভালো আছে.
কাল সারারাত মা তার চুলে বিলি কেটে দিয়েছে.
বাবা ভাঙা গলায় শুনিয়েছে মনসা পালা
ডাক্তার শোনেনা. কটমট করে তাকায়
অনু যত জোরে বলে ওই তো মা.
দেখো কেমন বসে আছে ওই টেবিলে
ডাক্তার তবু আরো রেগে যায়
আরো বেশিদিন থাকতে হয় ওই খোপ কাটা ঘরে.
বাগান থেকে এসে একটা কি যে খাওয়ায় দূর্গা দিদি,
সে কেবল ঘুমোয় আর ঘুমোয়
ঘুমঘোরে গলাভাত গিলিয়ে দেয় মেট্রনটা
ঘুম পায় . খুব .
অনু জানে তখন মা বাবা থাকে না পাশে
ওরাও বুঝি ঘুমোতে যায় তখন দূর্গা দিদির সাথে
খোপ কাটা দিনে ঝুপ করে সন্ধ্যে নামে
সন্ধ্যেটা যখন আবার অনুর জীবনের মতো হঠাৎ করেই
মিশমিশে অন্ধকার হয়ে যায় ...
তখন মাঝে মাঝে ও আসে
এসে জিজ্ঞেস করে , ' তোর নাম কি রে অনু ?'
'আমার নাম ...অন্নপূর্ণা '
খোপ কাটা দিনে আবার ছেদ পড়ে
অনু হঠাৎ করে খেয়াল করে সে বাগানে
মুড়ির বাটি উল্টে একাক্কার
মেট্রনের কুৎসিত চিৎকার আর অভিযোগ .
সারাদিন কি এত বিড়বিড় করে ?
কি বলা হচ্ছে ? কার নাম ?
অনু তাকায় . তার চোখ তাকায় না
অনু হেঁটে যায় . আবার . তার খোপ কাটা ঘরে
রেজিস্টারে টিক্ পরে : অন্নপূর্ণা মাঝি
(কালপুরুষ উপন্যাসের অন্নপূর্ণা চরিত্রের নাম টি নিলাম. বাকিটা একটা গল্প )
রাষ্ট্র ও azadi
রাষ্ট্র
আতসকাঁচের তলায় রেখে রাষ্ট্রর মানে
বুঝতে চাই
দেশ আঁকা হলো রক্তধারায়
রাষ্ট্র এবার কোথায় যায়!
একটা মায়ের দুইটো ছেলে, একটা জামা পড়তে
চায়
টানাটানি,ছেঁড়াছেঁড়ি , আধখানা জামা দুটোই
পায়
দুইটা যদি দুইশো হতো
জামার মাপ বাড়লোনা তাও
পাবে এবার সবাই কিছু?
নাকি সত্যই জোর যার.....
দুইটা লোকে শঠ করে তাও
মুনাফা করবে ভাগচরা সব
একটা কিছু মতলব পাও
ধান্দাতে ভাই এগিয়ে যাও
দুইশো থেকে দুইশো কোটি
আওয়াজ তবু থামতে না চায়
কার যে আওয়াজ , কার কানে যায়
রাষ্ট্র মানে কর্কশ দাঁড়ায় |
azadi
মনিপুরে আমার ধর্ষণ হয়
তাই আজাদী চাই
পুতুল পোড়াও
কাশ্মীরে আমার খুন হয় ভাই
তাই আজাদী চাই
আমি রাষ্ট্রর ওজন বাড়াই
পার ক্যাপিটা ইনকামে আমার ঠাঁই
আমি পুজোর মাসে বোনাস চাই
ফুচকায় ফাউ
আমি চাই আমার গোগোল এক্সামে টপ করুক
আমি চাই আমার
টি ডি এস - পি এফ - এই এম আই কাটা
মাইনের যে অংশটা কালার টিভিটার পেছনে যায়,
সেটার পুরো দাম পেতে |
আমি ভালো খবর চাই |
একটু ভালো খবর |
আমি রাষ্ট্র ভালো বুঝিনা |
ওটা আমি দেখিনি |
আমি ম্যাপ জানি | ওতে লাইন টেনে
আঁকা আছে আমার দেশটা |
আমি পাঁশকুড়া লোকালের জানলার ধার পেলে
দেশ দেখি | মাটি টাই দেশ ?
গোগোলের বইতে আছে, জলেও দেশ আছে |
দেশের লাইন আছে | আকাশেও | বাব্বা!
সেই আকাশের দেশে আমার জায়গা আছে?
যে বোমা মারার প্লেনটা আমার সেই জায়গা
দখল করেছে, তাকে মুর্দাবাদ | দূর হাট |
আজাদী চাই |
টিভি তে যারা পতাকা নাড়ছে, তারাও
আজাদী চায়?
তাহলে তাদের চাওয়াগুলো আমার
চাওয়ার সমান?
তারাও চায়,এবার বর্ষা খুব ভালো হোক,
আনাজের দাম কমুক |
বাজারের বুড়ো সব্জিওয়ালাটা একটু লাভ করুক |
একটু বাঁচুক |
টিভিতে বলছে মতের অমিলের অধিকার চাই |
আজাদী চাই |
অফিসে তাহলে আমি ঘুষখোর বসকে
ঘুষখোর বলতে পারবো,স্যার বলতে হবেনা?
এরা এটা চায় ?
নাকি আমার ঘুষটা খুব ভালো, তোমারটা না |
এটা চায় ? আমার তত্ত্ব ভালো,তোমারটা না |
আমার গড তোমার গড এর থেকে ভালো?
আমার দেশ ? তোমার দেশের থেকে?
আমার অন্য দেশ দেখা নেই | ওটা ভালো বুঝি?
প্রমোশন দেবে? গোগোলের মায়ের একটা শাড়ি
কিংবা ট্যাপারোওয়ারের ব্যবসা হবে?
গোগোলের আই আই টি টা
ওখানে ফাঁসি হয়না তো? বোম মারেন তো,বাবা!
কলেজে আবার কোটা আছে নাকি?
তাহলে তো আবার আজাদী চাই |
আমার চাই |
আমার বছরে তিন লাখ আসে | দশ লাখে আমি
গ্যাসে ভর্তুকি পাবো না | দশ লাখ পেলে আমি
নিতামও না |
দশ লাখ পেলেও কিন্তু কোটা তে সিট নেয় |
আমার গোগোল নব্বই পেলেও চান্স পাবে না |
আমার আজাদী চাই |
আমি ভোট দিতে চাই | দি | সেগুলো জলে যায় |
ভোট গুলো ফেরত চাই |
আমি চিৎকার করে কিছু বলতে না চাই |
আমি সেই মুক্তি চাই |
azadi চাই
( এক ছাত্রের আত্মহত্যা, এক উপত্যকার ধ্বংসলীলা আর এক আম বাঙালির
কথন )
শহর
মানুষকে নির্বোধ হতে হয়
ভালো থাকতে গেলে | বেঁচে থাকতে গেলে |
বেঁচে মরতে গেলে |
একেবারে মারা যেতও ... বোধ লাগে না |
অবোধ্য অ -বধ্য প্রাণ লাগে |
অবাধ্য |
একটা শহরকে জ্যান্ত থাকতে গেলে
যেমন পাথর হতে হয় |
নিশ্চল | উঁইঢিপি বরাবর যেমন
হেঁটে যায় সারিবাঁধা লাল পিঁপড়ে |
মৃত্যু ততোধিক নির্বোধ | জেদি |
জগদ্দল | সারিবাঁধা প্রান্তরঙ্গে একমুহূর্তের
ছন্দপতন |
কোনো কারণ নেই কারণের | কারণগুলো
তবু অকারণে আসে |
ছিন্ন দেহগুলোর মতো |
দুনিয়ার দূষণ, একই নিস্বাসে
প্রতিটা নাক, তবু, কিছু তো আজ অন্য
আঘ্রাণ নিল |
থেঁতলে যাওয়া প্রত্যঙ্গ সব একই ধুলোবালি মাখা
মৃত্যু রং আজ একই | ভরপুর | ভেজা |
রক্ত রং লাল | তবু রকমফের হাজার |
মৃত্যুও তাই |
জীবনও তাই নয় কি?
একই বিষ নিশ্বাসে সবার | একই আকাশ
ভাঙে মাথায় | কিছু এপারে | আর
কিছু যায় উপত্যকার ওপারে | তফাৎ এটুকুই |
চোখের জল আর একখণ্ড টাটকা কালো ঠান্ডা
নিয়ে মর্গের ট্রাক পৌঁছবে কারোর বাড়ি |
ট্যাক্সি করে রক্তদাতা পৌঁছবে হাসপাতাল |
যারা বেঁচে আছে | তারা থাক |
রক্ত যাবে | রক্ত পাবে |
একই ধুলো মিলিয়ে দেবে এপারের সবাইকে |
আর যারা ওপারে | তারা থাক | শান্তিতে |
আর ঠিক এমনি নিশ্চল থাক এই
পাথরের শহর |
এমনি ব্যস্ত থাক তার দিন | এমনি দামী হোক
তার ক্ষয় |
এমনি করেই চলুক নাহয়
মহানগরের মহাকাব্য |
রোজ | যেমন চলে | যেমন বাঁচে |
যেমন মরে | যেমন ভোলে |
অবাধ্য বোধের মতো যেমন জ্বলে ওঠে
ক্ষয়ে যেতে যেতে |
এই শহর |
(31st মার্চ ও 1st এপ্রিল : কলকাতার এক কালো দিনে |
উড়ালপুল
দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে )