কালের লিখন
তিরিশ
বছর
তারপর একদিন মরে
যায় যমুনার ঢেউ;
তিরিশ বছর
সামান্য সময় মেনে নিয়ে আজ-
মুখোমুখি তুমি
আমি, মনে হয় অতি চেনা কেউ
শেষ বন্দরে নোঙর
করেছে স্মৃতির জাহাজ।
বিস্তৃত বৃক্ষ
বাগান; একটা পুরনো জলাঘাটে-
বসে শতাব্দী
প্রাচীন জলের মুখোমুখি আমরা;
পাখিরাও বসেছে
তখন প্রাত্যহিক গ্রুপচ্যাটে!
পরস্পরের অচেনা; পাশাপাশি রেলের কামরা।
মানুষের সখ্যতা
লাভ ও লোভে; সামান্য এ রীতি-
অসামান্য অনুভবে
প্রেমশস্য চাষ করে ভবে।
শেষে হৃদয় নামের
স্টেশনে হয় যাত্রাবিরতি;
ভুল বাহনে সঠিক
জায়গায় কে গিয়েছে কবে?
তিরিশ বছর সামান্য
নয়; বুঝো কী শব্দবতী?
ঢেউ গেছে যাক, কেউ তো পেলো তোমার নামে স্থিতি।
শব্দচাঁদ
শব্দবতী কোথায়
থাকিস তুই? ঘর কোথা তোর?
টের পাস কী? তোর চোখে যে নিত্য নামে চিত্তে ভোর।
জানিস কী তুই? চাই না আমি বালাখানা স্বচ্ছ হুর-
প্রাণের দোসর
তুই আমার নাব্য ভাবের ঘোর।
গালে তোর লগ্ন
খেলে, মগ্ন পত্রে জলের কাঁপন-
স্থিতি তোর
স্বল্পকালীন প্রকাশে; দূরের আপন।
চুলে তোর
সন্ধ্যা নামে, পাখিদের হয় রাত্রিযাপন-
সামান্য ভুঁই, আমি ও তুই, শব্দে করি
লব্ধবপন।
নাকে তোর বায়ুর
বাঁশি, নির্দেশনা মাতাল ঘ্রাণে-
চাওনিতে তোর কী
প্রেম খেলে, ঠাকুরের কাব্য জানে।
আমিই শুধু জানি
না এখনো, তোর বাস কার মনে-
শব্দে আঁকি
শাব্দিক মুখশ্রী, ভ্রমণ ভাষার যানে।
রমণ জানিনে; প্রমাণ রেখেছি ভাবের আবাদ,
আমি তোর
সূর্যপ্রেমিক তুই আমার শব্দচাঁদ।
ভাবনা
আল্পনা
মেয়েটা গাঁয়ের
কিষাণ, ঘরের মধ্যে চন্দ্রআলো,
মাটির পথেই
হাঁটে, যায় জলের ঘাটে; বিকেলে-
পথধারে গুল্মলতা, বৃক্ষ-ফুল, আরও যারা ছিলো;
দেখতো সবাই চেয়ে
গ্রাম্যলতার চোখ, সে তাকালে।
মেয়েটা ছল জানে
না, জানে না কোথায় বিলাসিতা;
আকাশপেড়ে শাড়ির
আঁচল কোমরে দিয়ে প্যাঁচ-
হেঁটে যায় মগ্ন
মনে, রোদ্রপ্রেমে নাচে চুলেরফিতা;
মেয়েটা গেরামে
থাকে, বাঁচলে প্রকৃতি প্রেমে
বাঁচ্।
মেয়েটা সন্ধ্যায়
জ্বালে বাতি, রাতে করে চন্দ্রালাপ;
তার চুলে নামে
অন্ধকার, চোখে জ্বলে প্রাচীনালো।
পেরিয়ে যায়
ভাবনা ছুঁয়ে সংক্রমিত তন্দ্রা ধাপ-
চোখ দু’টি পাথর আঁকার। পৃথ্বী তারে বাসে ভালো।
ঘুমের চিতায় ছাই
হয়ে যায় ভাবনা আল্পনা-
মেয়েটার নাম
শব্দবতী, উপন্যাস বা গল্প না।
শূন্যগর্ভ
অপেক্ষার অন্য
নাম ভাবতে ভাবতে দেখি শুধু
অপেক্ষাই
দীর্ঘায়িত হয়, ছোট শ্বাস বড় হয়।
প্লাবিত সাগর
একা একা কাঁপে, সীমাহীন ধূধূ;
যদিও প্রতিটি
নদী তার শয্যাসঙ্গী, ধ্রুব ক্ষয়।
মুহূর্ত মিউট
করে, অনাদরে কাঁদে অনুভব-
তীব্র শোকে ভার
হয়ে আসে বেদনার ভিড়।
মনে হয় সে এলেই
পূর্ণতায় যাবে আর সব
নচেৎ অপেক্ষার
পৃথিবী নিশ্চিত হয়ে যাবে স্থির।
অপেক্ষা নীরব
থাকে, সরবে উচ্ছ্বাস জাগে ঠিক-
আসবে অচেনা কেউ
স্বচেনা প্রত্যয়ে। কিছু হবে;
মানুষের মূল
দিশা শব্দবতী জানে, সুসঠিক
মৌল অনুভব
সুমিষ্টতা দান করে শূন্যগর্ভে ।
সমস্ত গাছের
পাতা অপেক্ষায় আছে ঝরে যাবে-
যেমন প্রতিটি
মানুষ অপেক্ষায় সে অক্কা পাবে।
অমরতা
ঘরের ভিতর
আবদ্ধতা, বাইরে খেলছে আলো;
দূরের বেদন
সমাগত, মরেছে অমর কেউ।
এক মুহূর্তে
সবাই হয় স্বাভাবিক এলোমেলো-
দুই মুহূর্তের
অপেক্ষায় শব্দবতী তুলে ঢেউ।
অপেক্ষার নাম
গাছপাথর বয়স থমকে আছে,
একমুখী ঋণ জমাট
বাঁধছে চেনা অবিশ্বাসে।
এখনো মানুষ
শ্বাস খুঁজে, পরিচিত সেই গাছে-
সময় পেলেই লগ্ন
ছুঁয়ে; মগ্ন হতে ভালোবাসে।
ভালোবাসে আলোর
শ্লোগান, গগন বিদারী ডাক;
খুঁচিয়ে ক্ষতে, গত অধ্যায় সাজায় নতুন দিন-
বুকের মধ্যে
দুঃখের গীত নির্বাসনে হতবাক;
ক্রমাগত বাড়তে
থাকে বেঁচে থাকার শুদ্ধ ঋণ।
সবাই যখন বেঁচে
আছে, অমরতায় স্থায়ীস্থিতি-
তুমিও সুশব্দে
লব্ধ মেপে; অমর হও শব্দবতী।