বৈদূর্য্য
সরকার
বৈশাখ দুপুরের শিল্প
ঝলসানো এ বৈশাখে দুপুরের মিনিবাসে রফিগান শুনি,
ঝকঝকে কোনো মেয়ে বাসে উঠে ব’সে যেই' খেয়ালো কি মালিকা'
মনে হয় ভেসে যাই 'লেকিন জবাব নেহি’, কিসের জবাব!
নরম একটা মেয়ে কথা বলে যায় শুধু অনন্ত ঐ ফোনে
দু চারটে টিকে থাকা এলিট বাড়ির রাস্তা থমথমে হলে।
গরমের হলকায় ঘসটাতে ঘসটাতে এগোনো শহরে
হাজরা রোডের গলি, ঢিকোতে থাকা জীবন
তৃতীয় বিশ্বের
গানে ঘেমেনেয়ে ভেজে, এ শিল্প শুধু বোদ্ধার
হয় যে কি'করে?
হ্যাংলার দল চেয়েছে রফির এসব গানে ঠাণ্ডা খুঁজে পেতে,
বাসে একদল শিখ গোলাপি রঙের জল হাতে দিয়ে যায়
গান ধর্ম সম্প্রদায়ে মিশে থাকা কলকাতা বিকেলে গড়ায়।
বৈশাখের ভোট
মরুভূমি ক্যাকটাসে ধুঁকতে থাকা পথিক, কবেকার গল্পে
ঘামতে থাকা শহরে চরক বাজনা শেষে আজ তুমি এলে,
অকারণ ভূমিকম্পে পতনের ইতিহাসে ‘এই হাসি খেলা’
কাটা ঘুড়ি উড়ে যায় ব্যর্থতার কানা গানে, সন্ত্রাসে ধর্ষণে
গ্লোবাল ওয়ার্মিং গদ্যে অধুনা ভোটের পদ্য ক্লান্তিকর ছন্দে
কানাগলির কবিতা খুঁজে নিতে চায় আজ অসংখ্য খালি পা।
বৃষ্টি মরীচিকা হলে চ্যাটচ্যাটে লিপস্টিক ছুঁয়ে থাকে রোদ
পুড়তে থাকা শহরে মাথা তোলে ষড়যন্ত্র সর্বনামে মৃত্যু!
কে যে জেতে আর হারে কাকে দিয়ে গেছি ভোট, কত ব্যবধানে
হারালাম কাকে জিতল কে?
অন ডিউটির সুখে দুপুরের মাংসভাতে বেলার আড্ডায়
ভরসা বলতে কবি রবিমাসে পুন্যলগ্নে গ্লোবাল স্ট্যাটাসে,
বুকজোড়া হয়ে তুমি কবে যে ঝড় উঠবে, হাওয়া অফিসে
কে কবে ঝরবে বৃষ্টি হয়ে!
না মোছা কথা
উইপোকা বাসা বাঁধে কবেকার প্রেম ও প্যাশানে
বিষণ্ণ বিকেলে ভাবি গভীরতা কমে যাচ্ছে কেন?
কালো রঙে আমি তুই, অবিশ্বাসী খুনের রোমাঞ্চে
অতীত হারিয়ে ফেলে, কেন ভাঙে তোমার আয়না!
কল্পনায় কাকে দেখি চলে যেতে, রক্তমাংস ছেড়ে
মনখারাপ হয়েছে অকারণ কার গান শুনে!
আমার জীবনে কেন প্রেমিকারা বান্ধবী হয় না,
কেউ কাকে খুঁজে পায় ঝলসানো ফুলেদের শবে
আমাদের বদনাম যে লিখেছে সেতারের তারে!
চেনা সে রাস্তার ধারে রোজকার সন্ধে হয়ে এলে
কে যে কখন কবিতা পড়ে ফেলে নিজেও জানে না,
কেউ কাউকে আসলে কোনোদিন বুঝতে পারে না
তাই লিখে মুছে যাচ্ছি তারপর আবার লিখছি ...
মুছে মুছে একদিন লিখে ফেলি এমন কাউকে
যে আর মোছে না কখনও।
কৈশোরের স্বপ্ন
সব ছেলের কৈশোরে কেউ কেউ পরি হয়ে থাকে,
তারা হারিয়ে গেছিল কোন ভোরে বাস্তবের চাপে
ক্রমে অলৌকিক ডানা ভেঙে গিয়ে রক্তার্ত হয়েছে
স্বাধীনতার নামে সে কার কাছে কি বেচলো কবে?
শুধু বসন্ত সকালে মনে হয় স্বপ্নসুন্দরী সে
পরিপূর্ণ আলো হয়ে ছুঁয়ে ফেলে
নিত্যযন্ত্রনাকে,
আগের রাতে শিশিরে লেগে ছিল ফুলের আগুণ
তার পলাশ তখন ঝলসেছে কপাল পুড়িয়ে।
দুঃস্বপ্নের ঘুম ভেঙে গোপনীয় কৈশোরের বন্ধু
পথ হারানো দুপুরে কার সাথে দেখা হয়ে যায়?
কেউ তাকে খুঁজে ফেরে, সুদিনের অপেক্ষায় থেকে
খোলামকুচির লেখা মনে রেখে হেঁটে যায় একা!
উৎস
কতযুগ আগে থেকে অপেক্ষায় আছে এই মাঠ
নির্বাসিত গণ্ডগ্রামে, দূর পল্লী থেকে
সুর ভাসে
গরমকালের হাওয়া অপলকা মন ছুঁয়ে গেলে,
পরিচয় ছেড়ে এসে অন্ধকার মোড়ে কি খুঁজছি !
ঠাকুরদালানে বসে প্রত্যক্ষ করেছে ক’প্রজন্ম
অন্ধকার মাঠঘাটে কবেকার কথা ভেসে আসে
সেই পাড়া প্রতিবেশী ফিরে ফিরে আসে যারা নেই,
গল্পগাছা জমে ওঠে মৃতদের সাথে সম্পর্কের।
কিসের যে এত টান বুঝতে পারে না নতুনরা,
সব বদলে গিয়েও স্মৃতির ভেতর থাকা সুরে
হেডলাইটের আলো তীব্রতা বোঝায় অন্ধকারে,
‘সে’সব দিন নেইকো’ জীবন যখন নিরুদ্বেগ।