ইন্দ্রানী সরকার
বসন্তের হাতছানি
কৃষ্ণচূড়ার ডালে উঁকি দিচ্ছে মায়াবতী রং। কচিপাতায় নূতন
স্বপ্ন ।
শীতগন্ধ মিশে যায় ঝরা পাতাদের মৃত্যুগানের কলতানে ।
ঋতুর চোখ এঁকে দিচ্ছে প্রেমিকার খোঁপায় ভুবন সুখের
স্বর্গোদ্যান ।
টলটলে জলের দিঘিতে ফুটে আছে থোকা থোকা পদ্ম । শাল পিয়ালের
বনে দখিন হাওয়ার কানাকানি । ফাগুন হাওয়ার সাথে কোকিলের
মিতালী ।
মোহন বাঁশি অগোচরে ডেকে যায় একরাশ ভাবনায় নিমগ্ন উঠোন ।
রুপালি মাছের বর্তমান
অতীতে থাকতে নেই,
রুপালি মাছ রোজ কেমন বর্তমান খুঁজে নেয়
খুব সতর্কে, গোছালো ভাবে ঠোঁট বেঁকিয়ে
মুঠোফোনের দিকে তৃষ্ণার্ত নজর রেখে
কয়লার হাত নিত্য কালি লেপে বলে
তোমায় বলি নি, এত লোক থাকতে তোমাকেই বা বলি কেন
নিরুপম সৌন্দর্য্য জানলায় নিত্য বিকশিত হয়
নব নব ভাবে, নব নব রূপে, তুমি নব নব রূপে
এসো প্রাণে
যারা নেই প্রকৃত অর্থে, কোনদিনই ছিল না
শুধু আরোপিত ভাবনায় বর্তমান
তাদের কথা নিয়ে প্রাঞ্জল উপকথা লেখা হয়
এটাই তো বর্তমান, রুপালি মাছের বর্তমান |
কথার পুতুল
কতবার তোকে খুন করতে গিয়েও
হাতগুলো সরিয়ে নিই তোর হিরন্ময় মন,
তোর হিরন্ময় কথা কথাদের আমরা সাজাই
নানান ভাবে তাদের গায়ে রং দিই,
আলখাল্লা জড়িয়ে দিই
দেখতে দেখতে কথাগুলো এক একটা পুতুল হয়ে ওঠে
এই ছুঁড়ি তুই এতগুলো প্রেম সামলে কি করে
এত কিছু ভেবে যাস রহস্যটা বলবি ?
মাকড়সার জাল থেকে কথাগুলো
বায়বীয় আকার হয়ে মিশে যায় |
মনে পড়ে যায়
মনে পড়ে সেইসব শিউলি ঝরা সকাল
জামরুল বন আর পেয়ারা পাতার ঝোপ
দিগন্তে মেঘ রোদ্দুর মাখা নীলাকাশ
আর সেই অপূর্ব গঙ্গার বহতা জলধারা |
সন্ধ্যার পবিত্র বাতাস আর শঙ্খধ্বনি
মন্দিরের ঘন্টা আর জলের কুলকুল
নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা সেই কিশোরী
যার চোখ চলে যায় ওপারে কাঁচমন্দিরে
যার নীল আলো ভাসে ঢেউয়ের দোলায় |
ঠিকানা
সপ্তর্ষি মেলা আকাশে পা দিয়ে ভাবি
তোমার বাড়িতে ফিরে যাবার কথা
পাঁচিল বেয়ে বোগেনভেলিয়ার গাছটা
ডালপালা ছড়িয়ে সুন্দর বেড়ে উঠেছে
রঙিন ফুলগুলোতে রামধনু ফুটে ওঠে
কিন্তু তোমার দেখা নেই, জানিনা তুমি
এখন কোন সমুদ্রে বালির ঘর আঁকছ
কালো আকাশে কাজলের মাখামাখি
নীল পাহাড়ের দেশে সবুজের আলপথ
ডিমনা হ্রদের সাজানো বাগানে এখন
অজস্র ফুল ঝরনার মত ঝরে যাচ্ছে
তোমার বাড়ির নম্বরটা খুঁজে পাই না ।