শাহানারা ঝরনা
মন..পদাবলি
ক..মন দরজা খোলাই আছে ভাবনা ক'রো নাকো
যেমন আছো ঠিক তেমনি চুপটি করে থাকো !
খ..হরিণশিশু ভয়ে কাতর শুনে কোকিল সুর
গৌরি মনে বিলি কাটে ধুপছায়া রোদ্দুর !
গ..তীর্থ করি কামেল ফকির পীর মূর্শিদ মেনে
মন-কেবলার কেই বা মালিক ক'জন তাকে চেনে ।।
ঘ...মন-দেউলে পূজার বেদি পূজারি না বোঝে
নৈবেদ্যে হাত রেখে সে অন্যকিছু খোঁজে |
ঙ...যোগাসনে বসে জপি মন দেবিকার নাম
পোড়া কপাল ! কেউ দেয়না একটু তবু দাম !
চ...নিয়ম নীতির সংজ্ঞা মেনেই মনটা করি চাষ ..
তবু ফসল খরায় পোড়ে দুঃখ বারোমাস |
ছ... বাড়ির কাছে আরশিনগর পড়শিরা সব কানা
মন কেন হয় দ্বি খন্ডিত ..তা কারো নেই জানা !!
বোধনের চিঠি
অতিথি পাখির ডানায় আকাশের নীল ভাসে
চপল বাতাসে ওড়ে রূপকথার ভেজা মেঘ |
আজকাল মেঘেরাও নীল শাড়ি পরে নায়র যায়
কখনোবা বৃষ্টির পালকি চড়ে নেমে আসে আমাদের উঠোনে
;
দৃষ্টিতে এঁকে দেয় কাদামাটির জলছবি !
যখন ওরা জলের পিঁড়িতে বসে .
পদ্ম-পুরাণ গল্প শোনায় ....রূপশালি ধানভানা
কিশোরি মেয়ের গলায় কেউ একজন
পরিয়ে দেয় বন্ধনের সীতাহার !
পায়ে তার রুমুঝুমু নূপুর বাজে...শোনা যায় .
অতীত. বর্তমান ও ভবিষ্যতের সুরধ্বনি..!
বদল-নামতা পড়তে পড়তেই কিশোরি একদিন
যুবতি হয় , হয় গৃহিনী কিংবা পূর্ণবয়স্ক রমনী |
রমনী শৈশব- ভালোবাসার নক্ষত্র টিপ পরে
হেঁটে যায় দূর .....বহুদূর...!
ব্রতচারী ভাবনার প্রত্যয়ী মূহুর্তগুলো কখনো
নিবিড় হয় ...
জোছ্নার হাত ধরে আঙিনায় আসে নবোঢ়া চাঁদ
সে মমতায় খুঁজে পায় হারানো চারুকারু দিন..|
ব্যবচ্ছেদের ভাঁজে ভাঁজে শোনা যায়
অন্তর্দৃষ্টির কোলাহল...
রমনীর অহমী প্রহর হয় আরো বিস্তৃত .!
অতঃপর বোধনের চিঠি নিয়ে আসে বেহুলা মেঘ..
সচকিত রমনীর দুচোখের পাতায় নাচে
চিরায়ত বাসনার প্রজাপতি..
শুচিতার পাঠঘরে চলে সুহৃদ পাখিদের
অবাধ অভিসার ..!
অবশেষে...একদিন
রমনীও নীল শাড়ি পরে , নায়র যায় .....
পিছনে পড়ে থাকে তার কাদামাটির শৈশব.!
পালাবদল সময়
দিনগুলি খুব দ্রুত চলে যায়..
নিঃশব্দ রাত শেষে আমাদের ছুঁয়ে হাসে
সোনালি সকাল ;
আঙিনায় বেজে চলে মানবন্টণ সমীক্ষার ধ্রুপদ সুর
যখন মাধুকরী ইচ্ছেরা হাসে জড়োয়া বিলাসে..
অন্ত্যমিলের রঙে সাজাই অমৃত হৃদয় |
হৃদয়তো নয় কোন যৌথ-মালিকানা সম্পদ..
নয় কোন অসম প্রতিযোগিতার শেয়ার বাজার !
বিবর্তিত হতে হতে একদিন
বনেদী জীবনও ফুরিয়ে যায় ...
সীমা অসীমের পালাবদল হয় ,
রজকিনী বিষাদে হারায় অভিজাত মূল্যবোধ |
কখনো হৃদ্য হই | মুগ্ধতায় হাত বাড়াই |
মনস্তত্বের বিশালতা নিয়ে মনন সিলেবাসে সাজাই
সংজ্ঞায়িত নীতিমালা .
.কিংবা নিষিদ্ধ
পান্ডুলিপিতে
বন্দি করি দেবতা-জীবন !
ভাগ্যের পরিসংখ্যান পাল্টে যখন আয়ুজীবী
গোলার্ধের অধিশ্বর হাসে ;
বেড়ে যায় ব্যস্ততার পরিধি |
কেটে যায় কতো ভ্রমণিক প্রহর..
টানাপোড়েন রেখায় ভাসে জীবনের জলছবি |
আমিও অবাক হই ....!
নিশ্চিত বসে থাকি কুসুমিত দিনের
পুনরুত্থানের অপেক্ষায়...!!!
মন চিঠি ...
প্রিয় অক্ষর ....
সময়ের এলোমেলো বাতাসে
উড়িয়ে দিলাম মনের আঁচল .
বার্তা নিয়ে ঠিক পৌঁছে যাবে তোমার কাছে
মনে আছে ...?..একদিন জামদানি বিকেলের খোঁজে তুমি আমি
হেঁটেছিলাম
বিশ্বাসী নদীর পাড় ছুঁয়ে ..
পোষ্যতামানা মুহুর্তগুলো আমাদের সঙ্গ দিয়েছিল
কি আকুল উচ্ছাসে ..!!
সমস্যা সমাধানের সূত্র দিয়েছিল বনোচারী
শুকপাখি....!
আমার ভাঁজভাঙা শাড়ির আতুড় গন্ধে উজ্জীবিত তুমি
বলেছিলে ...এমন কি হতে পারেনা .
সপ্তসুরের মাধুরী মেশানো আমাদের এই দিনগুলি
শুধু একান্নবর্তী শৈশবেই ঘোরাফেরা করবে অনাদিকাল
??
তোমার কথাগুলোকে সত্যায়িত করে
ঘাসবনে সমাবেশ করেছিল ফড়িংছানারা ...
আর আমি ..অক্ষরের প্রজাপতি সাজানো
হলুদ খামখানা তোমার হাতে দিয়ে বলেছিলাম...
সময়ের টানাপোড়েন নিয়ে যখনি হাঁপিয়ে উঠবে
খামটা খুলে প্রাণভরে শেকড়ের গন্ধ নিয়ো ..!
জানো তো ..
শেকড় মানেই শৈশব ...
আর শৈশব মানেই চিরায়ত ভালোবাসার গল্প ...!!!
স্বপ্নের খেলাঘর
অতীতের বুকে আঁকি স্মৃতি- রঙ ফুল
বিলাসিনী ঢেউ ভাঙে হৃদয়ের কুল
আবেশিত শিহরণে জাগে ভালবাসা
কামরাঙা মন নিয়ে শুধু কাঁদা হাসা ।
ডিঙি বেয়ে কোথা যাই ধরে ভাঙা হাল
অভিমানি নায়রির মুখখানি লাল
জোছনার আলো আহা কী যে মোহমায়া
ভাসিডুবি বারবার জলে পড়ে ছায়া ।
বুক জুড়ে ঘুণপোকা পোড়া পোড়া মেঘ
স্বপ্নের খেলাঘরে নিশুতি আবেগ ,
পানরাঙা ঠোঁটে হাসে নিশিচারি বউ
হৃদয়ের ভাঁজে ভাঁজে জামদানি মউ ।
মউবনে অলি হাসে শুকপাখি গায়
মনকথা চুপিসারে কোথা ভেসে যায় ?
কেউ ভাঙে নিরবতা , কেউ বাঁধে সুর
স্বপ্নের ঠিকানাটা আর কতদূর !!
দৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেয় পরবাসি মেঘ
পাখিদের কান্নায় বাড়ে উদ্বেগ
ভাবনাও বিশ্বাসে তবু করি বাস
সুখে দুখে এভাবেই কাটে বারোমাস !