বুধবার, ২১ জুন, ২০১৭

তৈমুর খান



তৈমুর খান

আলো নেই
____________
যৎসামান্য আলো নেই ঘরে
কী ভিক্ষা দেবো হে  অন্ধকারের বালক  ?
বাবার ক্লান্ত চপ্পলে ধুলো লেগে আছে
মায়ের সাদা থান টুকরো টুকরো
এখন আমরা তাচ্ছিল্য সব ছেলেমেয়ে
দীর্ণ হাহাকারে বসবাস করি

সুবর্ণ দিনের কোনো ছবিও নেই
অতীতদেওয়াল জুড়ে বিষণ্ণ দাগ
কোনো ঝড় ও কাঁপুনি বয়ে গেছে
এখনও বাতাসে তার সে ফসিল ডাক
থেকে থেকে বাজে

শূন্য আলোর ঝুলি বাঁশিটিও
মৃত অনুভব
হৃদয়ের ব্যালকনি জুড়ে পড়ে আছে
অগৌরব নিষ্ফল উৎসব

আলো নেই , আলো নেই
আলোকিত দুনিয়ায় এও আজ ভিখিরির ঘর





সর্বনাশ
________
সর্বনাশ খুব ভালো দেখতে
ভালো চাকরিও করে
আপাতত সবাই চাই ওর হাত ধরে পালিয়ে যেতে

প্রথম প্রথম ওকে সমীহ করতাম তারপরে সম্মোহন
ওর ঘরের জানালায় আমাদের কত উঁকি পড়ে আছে
তীক্ষ্ণ আলোর তেজ ছড়িয়ে পড়ত ঘরের বাহিরে
ওর স্নানের দৃশ্য, মনোরম সাবানের ফেনা, সোনালি চুল
আর খোলা নাভিকুণ্ড, কুচযুগল আমাদের আরাধ্য ছিল

প্রতিদিন পৃথিবী সুন্দর সুদৃশ্যে ভরে যায়

সর্বনাশ , কখন আমাদের ডাকবে নীল নির্জন রাতে ?

সর্বনাশ, কখন আমাদের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে যাবে?

তোমার হাসি দেখতে দেখতে কেটে যায় আমাদের দীর্ঘ নির্ঘুম রাত






শিকার কাহিনি
_____________
আমাদের শিকার কাহিনি জুড়ে
আদিম উল্লাসের ভাষা পড়ে আছে ।
উল্লাসের তরবারিগুলি এখনও অমসৃণ
এখনও অন্ধকারের মতো দ্রাবিড় কুশলী

আমাদের পাথুরে হৃদয়ে হিংস্র জাগরণ
আগুন সভ্যতায় প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে

সভ্যতার দীপ্ত অন্ধকারে বেরিয়ে পড়েছি
দলে দলে

মূর্খ অভিজ্ঞান নির্ণীত কারুবাসনায়
আজও আমাদের ঘুম ভাঙে
অরণ্য-গুহাগুলি মঞ্জিলময় শহরের
উদ্বিগ্ন বাসরবাগান
স্বয়ংক্রিয় বিলোল দুর্মুখ অভিলাষী
দৌড়ে চলেছি সচকিত আদিম গহনে

আজও এগুহার দেওয়ালে শিকার কাহিনি লিখে রাখি
কাহিনির ভেতরে কাহিনি , আরও অন্ধকার





অনন্তপুরুষ
___________
স্বপ্নের পাহাড়ে আমরা বেড়াতে এসেছি
একটা বিহ্বল ঝরনায় তুমি গা ভেজালে
কল্পনার আপেল বৃক্ষ থেকে
আমি আপেলগুলি পেড়ে নিচ্ছি
এক একটি আপেল যেন আদিচেতনার মুখ
শোভা পাচ্ছে সংরাগ কামড়ে

তুমি বললে স্বপ্নের ঘর চাই

ঘরে ঘরে প্রগাঢ় শিশু

নিয়ন্ত্রণহীন আমাদের অবাক পৃথিবী
বস্তুত অন্ধকারেই জেগে উঠল
প্রথম সঙ্গম থেকে আজও নিয়ত গর্ভবতী
বহু কোলাহলময় শিশু সভ্যতায় এনে রাখছ
একে একে

আমি আপেলবৃক্ষের ডালে ডালে
চোখ ছলছল স্বপ্নে চেয়ে আছি
অনন্তপুরুষ এক....





বীর
_______
দু একটি বীর যুদ্ধ থেকে ফেরে
তারপরে সব স্ট্যাচু হয়ে যায়
রাতের অন্ধকারে
ঘোড়া থেমে যায়
তরবারি শুধু প্রদর্শনী বোঝে
ইতিহাস থেকে অন্য ইতিহাসে
সভ্যতা আলো খোঁজে
এই রাস্তায় একটু দাঁড়িয়ে দেখি
স্ট্যাচুর মাথায় চাঁদ নামে নাকো
নামে কল্পনার পাখি






সর্বনাশ
_________
সর্বনাশ বহুদিন থেকে আসব আসব করছে
এখানে শিকার করবে এসে
মানবজঙ্গলে ভালো শিকার পাওয়া যায়
জ্যোৎস্না আজ নৈশগান গেয়ে চলে
সন্দেহপ্রবণ হাওয়া দোলায় জীবন
ছুটোছুটি এক্কা দোক্কা খেলায় মেতে আছে
কেউ জানে না কার কী খেলা
বিষাদপ্রতিমা গড়ে শিল্পী একা জাগে

কে তার নির্মাণকে আজ রক্ষাকবচ দেবে ?