শাশ্বতী সরকার
শুধু
কবিতার জন্য
আবার একটা জন্ম হাতছানি দিয়ে ডাকছে
আবার একটা পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ছে
পতন অথবা উত্থান – কিই বা এসে যায় তাতে
যদি মন লাগে মনে প্রিয়
তবে দুনিয়া উচ্ছন্নে যাক্
এসো, একবার মিলিত হই
বসন্তবাতাসে তোমার শরীরের ঘ্রাণ নিতে নিতে
আমি নদী হয়ে যাই
নদীর গহনে ডুব দিয়ে দেখো
থরে-বিথরে কবিতা সাজানো রয়েছে
শুধু তোমারই জন্য
এসো, আমরা মিলিত হই
পৃথিবীর সমস্ত রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে
আরও একটা জন্ম খুল্লমখুল্লা উদ্যাপন করি
শুধু কবিতারই জন্য।
আগ্নেয়গিরি
সমস্ত অন্তরঙ্গ কথাগুলো চেপে রাখতে রাখতে
আজ বোবা হয়ে গেছি
আমি নয়,আমার হয়ে এখন কথা বলে
একজোড়া রোবট ঠোঁট
কথাগুলো জমতে জমতে জমতে জমতে
একদিন নিশ্চই বেরিয়ে আসবে
গলন্ত লাভা হয়ে
পুড়িয়ে দেবে চারপাশের নকল সভ্যতা
মিথ্যের প্রাসাদ
আমি সেই দিনের অপেক্ষায়
এখন ঘুমিয়ে আছি
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি এখন স্বপ্নে বিভোর।
মৃত্যু
তুমি জীবনের থেকে বড় নও
হঠাৎ মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নিয়ে গেল তাকে
অথচ এই যে দেখ আবাল্য আমি তার
দেখা পাবার সাধনায় মত্ত রয়েছি
আমাকে সে ছুঁয়েও দেখে না।
কেড়ে নেওয়াতেই যদি তোমার আনন্দ
তবে নাও,
আমি এবার জীবনের সাধনায় রত হব
মৃত্যুর বিরুদ্ধে লিখে যাব দীর্ঘ কবিতা
জেহাদী মানুষ মৃত্যুর বিরুদ্ধে শিখবে লড়াই
যত অমূল্য প্রাণ তুমি কেড়ে নিয়েছ
যত শিশুর রক্তে তোমার হাত হয়েছে রাঙা
ধরে ধরে সবের হবে বিচার
তোমার ক্ষমতা তো ওই কেড়ে নেওয়া অবধিই
যত কেড়ে নাও তত জেগে ওঠে নব নব প্রাণ
ছড়িয়ে যায় গ্রাম থেকে গ্রামে
শহর থেকে শহরে
বলে যায়,মৃত্যু তুমি জীবনের থেকে বড় নও
তোমার রক্তচক্ষু তখন উন্মাদ হয়ে ছোটে
আরও আরও আগ্রাসনে।
কুহকিনী
বাঁশি
বাঁয়ে রাখি সুরসিক প্রিয় শ্যামকে
ডাঁয়ে রাখি নিঠুর কালা।
রাধা বলে মোহনীয়া শ্যাম
কি আছে তোর বাঁশিতে
কুল মান সব ভেসে গেল
তবু হৃদি মজে শ্যাম রসেতে
নিঠুর কালা খেয়ে রাধা হৃদি
গোপিণী সঙ্গে করে মাতামাতি
রাধা বলে হায়,লাঞ্ছিত প্রাণ
কী মোহের বশে করলাম দান
এখন আমার লাজ অভিমান
কোন্ সে সায়রে রাখি রে!
জনমে জনমে রাধারা মরেছে
শ্যাম কুহকিনী বাঁশিতে।
একলা
লাগে ভারী
হেরে যাওয়া মানুষকে সবাই
সব্বাই খুব ভালবাসে
তোর সাথে পরিচয় হল
তুই চলে যাওয়ার পর
তোর ফেলে যাওয়া প্রত্যেকটা চিঠি
পরম মমতায় ছুঁয়ে দেখলাম,আদর করলাম।
তোর আত্মধ্বংসী ডায়েরীগুলোকে
মৃত সঞ্জীবনী দিয়ে জাগিয়ে তুললাম
কী ভীষণ তিলে তিলে
নিজেকে তৈরি করেছিলি তুই
হেরে যাওয়ার জন্য
‘তোর একলা লাগে ভারী’
জানিস আমারও,আমারও না
আজকাল একলা লাগে ভারী।