ইন্দ্রাণী সরকার
"অন্তহীন পরিক্রমা"
যখন প্রেম ও ভালোবাসার পার্থক্য নিয়ে
অনেক আলাপ আলোচনা চলে তখন
দুপুরগুলো আকাশকুসুম ভাবনায় কেটে যায় ।
অন্তহীন অপেক্ষার আঙুল ধরে গভীর ভাবনায়
এক একটি দিন অপরূপ কোনো আলোর অপেক্ষায়
গভীর অন্ধকার ছেনে নিয়ে আসে ।
আলো বস্তুত আঁধারেরই এক রূপান্তর
আমাদের সঞ্চয়গুলি সামুদ্রিক হাঁসের মত
মগ্ন সাঁতারে সমুদ্রতীর পরিক্রমা করতে থাকে ।
"শিলালিপি"
কৃষ্ণপক্ষের রাতে বায়বীয় আঁধারে
শুনতে পাই বাতাসের শিরশির
মেঘে ঢাকা সন্ধ্যাতারাগুলি
ঘন আঁধারের বসনের আড়ালে
জড়িয়ে রেখেছে চোখের পাতা |
অনুরাগের মুর্চ্ছনায় বিবশ মনের কথা
বিশ্বাসের রৌদ্রে পোড়া মনকে
ছুঁয়ে যায় ভ্রমরের গান নীলিমা |
অজস্র শিলালিপি ছড়ানো চোখের
সমান্তরাল মেঘে ঢাকা পড়ে যায়
নক্ষত্রদের উপন্যাসের রাত্রি ||
দ্বিধাহীন সত্ত্বাগুলি আবার ফিরে পায়
বিগত দিনের আশা ও সৌরভ |
"নির্বিকার"
নিজেরাই গড়েছে দেয়াল নিজেদের হাতে
ক্ষমতার লোভে আর তুলনার তফাতে
কেউ বদলায়, কেউ বদলায় না
না বদলানোর একটাই পথ
নিজেদের মলিনতা, স্বল্পতা ঢাকতে
শুধু লোক দেখানি তুলনা আর রক্ষকের ভূমিকায়
পাশে এসে দাঁড়ালে ত’ জনসমক্ষে প্রেমিক
প্রমাণিত হয় না
তাই দূর থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে নানান ভঙ্গিমা
ঠুনকো আভিজাত্য, ঠুনকো ভালোবাসা
ঠুনকো অহম, শুধুই প্রাপ্তির আশা
হা হুতাশেই জীবন গেল লোকদেখানো ঢঙে
যার জীবন আসলেই গেলো সে কিন্তু নির্বিকার।
"নি:সঙ্গতা"
নিত্য ভিক্ষার শেষে একটি বৃদ্ধকে
শহরের একটি জনবহুল রাস্তা পার হতে হয় ।
রাস্তার ওপারে একটি পাথরের সাদা পরী,
তার নীচে বেদিতে বসে সে আহার সম্পন্ন করে |
চরাচরের সব মানুষ তাকে বর্জন করেছে
কেবল ওই পরীটি ছাড়া |
কতগুলো কাক পরীটির গায়ে ঠ্যাং তুলে মুতে দিয়ে
যায় |
বৃদ্ধটিকে রাস্তা পার হতে গিয়ে অন্ধ সাজতে হয়
নয়ত: সে গাড়ি ঘোড়ার মাঝ দিয়ে ঠাহর করতে পারে না |
কতগুলো ঘুঘু রাস্তার ওপর ল্যাম্পপোস্টে বসে
নিত্য এই দৃশ্য দেখে |
পাশের জঙ্গল থেকে একটি কোমর ভাঙা বলগা হরিণ,
যে শেয়ালদের পাড়ায় বেড়াতে এসে নিজের পরিচয়
ভুলেছে
বৃদ্ধটির লাঠিটা কামড়ে ধরে ।
সেও বৃদ্ধটির মত নি:সঙ্গ জীবনে ওই পাথরের পরীটির
পাশে ঝিমোয় ।
ঘুঘুপাখিগুলো ল্যাম্পপোস্টের উপর থেকে ডেকে ওঠে,
"বল হরি হরি বল, বল হরি হরি বল
।"
"চার্লি খুড়ো ও মেমসাহেবা"
খুড়োমশায়ের সাথে চার্লির
প্রথম দেখা হয় বাঘের খাঁচায়
আসলে চার্লির পিছনে খুড়োমশাই ছিলেন
যেটা মুভিতে দেখা যায় নি ।
এমত খুড়োমশাই রোজ গোঁফে মোম লাগিয়ে
মেমসাহবকে কোলে টেনে নেন ।
প্রতিদ্বন্দীদের দিকে তাঁর কড়া নজর
চিতল হরিণীকে ধরতে না পেরে
লক্ষণকে পাঠান কিন্তু মাঝখান থেকে
শুপর্ণখার অঙ্গহানি একদম যা তা !
বিমর্ষ খুড়োমশাই এখন স্বপ্নে দেখেন
মেমসাহেব ও তার লো কাট ফ্রক
দেখতে দেখতে তিনি ছক তৈরী করেন
যেখানে প্রত্যহ মেমসাহেব ও তার
প্রিয় মানুষদের মুন্ডচ্ছেদ হয় |
কোনো না কোনো খদ্দের রোজই খুঁজে নেন
যেদিন কিছুই পান না মনের দু;খে
পান চিবোতে চিবোতে বকেন,
কোথায় গেলে প্রিয়া ?
ফের রাতে হাইওয়েতে পথ হারালে না কি ?
হায় হায় কেন যে তার সাথে থাকি না ?
এ অবস্থায় তাকে পথ দেখানোর জন্য
আমি ছাড়া কে বা আছে !
অত:পর শুকসারির ডানায় আটলান্টিক ক্রস করে যান ||