সৌমিত্র চক্রবর্তী
বারবণিত
----------------------
বহুমাত্রিক কুশলতায় মাথার ওপরে দু হাত ঘুরিয়ে জাল ছুঁড়ি
নিপুণ
একে একে ধরে ফেলি খলবলে কিশোরী মাছ ঝুম বিকেলে।
কাকেদের কা কা, চড়ুইয়ের কিচমিচ, মুখ তুলে শিকার গন্ধ
খোঁজা বেজির
ছটপটে ঘড়ির কাঁটায় অলবেলা সন্ধ্যে নেমে এলে
মেকআপ বাক্স হাতে তুলে বর্তমান ঠেলে দিই অতীতের ঝলমলে পেগ
এ:
তুলির প্রত্যেক কম্পিট্যান্ট টানে ক্রমশঃ পুরুষ বেশ্যা হয়ে
যাই।
অদৃশ্য কেউ যেন কানের পাশে সপাট চপেটাঘাত করেই
শোনায় গর্ভধারিণীর বেশ্যা হওয়ার নিখুঁত গল্প,
গ্রীনরুমের সব আয়না হঠাৎই কাচের ভঙ্গুর দরজা হয়ে ফিকফিক
হাসে:
রিভলভিং মঞ্চে দাঁড়িয়ে বেমতলব হাসিকান্নার ঝড় তোলে
মহারাজ নিঃসঙ্গ অয়দিপাউস।
************
অমোঘ
-------------
না সংশয় রাখিনি আমিও
জন্মান্তরে বিশ্বাসও না,
বিকেলের নদীর ভাঁটায়
হঠাৎ হরকা বানে
একে একে ডুবে যায় বদ্বীপ:
না, সংশয় রাখিনি
বুজে যাওয়া আঁচড়ের দাগে
জ্বরতপ্ত নিষিদ্ধ টিন ঠোঁটে
একলা সন্ধ্যের ঘরের এজলাসে:
সব সংশয় তোমার ব্রাহ্মী গালে
জিভে, বিষুবীয় বিভাজনে
বন্ধক রেখে স্বাধীনতা উদযাপন করেছি।
************************
লাস্ট ডাউনট্রেন চলে গেলে
-----------------------
অনেকটা সময় একা থাকতে থাকতে
রেললাইনের মাথায় ওভারব্রিজেরও ক্লান্তি আসে,
রাত হুম হুম করলে
শান্ত কুকুরছানা
আর প্ল্যাটফর্ম ভিখারির ঘেয়ো
সতেরোতম বাচ্চার বন্ধুত্বপূর্ণ ঘুম আসে।
সারাদিনরাতের একটানা বোঝা বয়ে
ওভারব্রিজের হাত ঘাড় পিঠ
ফেটেফুটে ছড়িয়ে যায় রাত্রির
ধূসর আকাশের কেশরে,
রক্ত ভাসে, ক্লেদ ভাসে,
যতকিছু
পাপবোধ ভীড় করে আড্ডা জমায়,
অথচ একতারায় মজে যাওয়া
নৈশবাউল আর মগ্ন স্রোতার পিন্ড
একবারও আহা উহু বলেনা,
বলেনা, আয় ব্রীজ ... আয়
ব্রীজ
চুমু নিয়ে যা...!
অভিমানে টপটপ জল গড়ায়
রিক্ত ব্রীজের দু চোখের অন্ধকার কোল বেয়ে,
চারপাশে আলোর ঝলকানিতেও
একা পড়ে থাকে অথর্ব ওভারব্রিজ।
**************************
এ মোহ নষ্টা হলে
------------------
আকাশে অনন্ত দুধের বাগান
সারাদিন স্বপ্নে ডোবো
স্বর্গীয় মালি হওয়ার।
কি জানি কি মোক্ষলাভে
আত্মসায়রে নিমগ্ন বসে
চিত্রকল্প গড়ো নারকীয় হাজার,
শকুনিয় উল্লাসে ভাবো
আনন্দের বাজার।
এ মোহ ছত্রখান হলে
বোধগম্য হবে
সামুহিক নিস্তব্ধতার নান্দনিক অরণ্যে
একা তুমি দস্যু রত্নাকর।
সামান্য সুখের জন্য
অফসেটী নাম, নীল ফোন
মারুতির চকচকে আয়নায়
ব্যাকব্রাশ মুখ দেখা
লিপ্সটিকে ডোবানো ছলনার জন্য
বোঝোনাকি হয়ে আছ ক্রীতদাস
নরকের জীব!
মাঠ থেকে উঠে আসা কাদা মাখা কৃষকের বিশ্বাসে-
কয়লার পিণ্ড খান খান করা কালো মজুরের বিশ্বাসে-
টগবগে ফুটে চলা অখণ্ড তারুনিক বিশ্বাসে-
দুই মেরু এক করা শান্ত প্রজ্বলন্ত নারীর বিশ্বাসে-
সামান্য আঁচড় আঁকার ক্ষমতা নেই তোমার,
শত মিথ্যা লিখে ভণ্ডামির মুখোশ আজ
বিখন্ড চৌচির।
ক্ষতি নেই, এমনিই যাক চলে,
যার মই বয়ে চল
সেই ফেলে দোলে-,
এ মোহ নষ্টা হলে-
ফিরে এস
মন্ত্র দেব বাল্মিকী হওয়ার।
***********
দুধ সাদা দুপুরের কাব্য ৫
____________________
ধানকাটা মাঠ শুয়ে
খড়ি ওঠা গায়ে প্রসব সময় শেষ শুয়ে
আছে ক্লান্ত জরায়ু মেলে।
হাওয়ায় মিঠাস ওড়ায় দেশজ শ্যাম্পেন।
বাসনার স্তুপ কাঁখে গাঁয়ের নতুন বউ নিস্তরঙ্গ শাড়ির ভাঁজে
ইশারায়
তামাকের গন্ধমাখা নড়বড়ে লাউ।
বিবর্ণ রঙের বাক্স কাঁধে সরীসৃপ চলন, মাথা উঁচিয়ে গন্ধ শোঁকে গিরগিটি সময়।
**************
ছেঁড়া রাত ছেঁড়া চিন্তা
------------------
একটুখানি ভাবা, একটুখানি চলা একটুখানি এদিক ওদিক ফ্রিলি কথা বলা। এখন সবই মেকি, এখন সবই ফাঁকি এখন সবই সৌজন্য, কেবল ধার ও বাকি।
কিছুই নয়কো শেম, ভালোবাসাও গেম
বঙ্কিমযুগে নির্বাসিত দূর্গকন্যা প্রেম।
স্বেচ্ছাচারের ঘড়া, কেউ পড়েনা ধরা
বাকচালিয়াত শাসনযন্ত্র, মেজাজ খুবই
চড়া। ছোট্ট ছোট্ট প্রাণ, সবই হণ্যমান ফেবলস কাঁদে পরিত্রাহী, ঈশপ চাইছে ত্রাণ।
মাতাল কুকুর হাঁকে, তিন প্রহরের
বাঁকে ছেঁড়া ক্যানভাসে অগোছালো রঙে রাত্রি ছবি আঁকে।
*************
দিনভর বৃষ্টি রাতভর খন্ডযুদ্ধ
________________________
চৌষট্টি কিম্বা তারও বেশি পায়ে মাটির গোপন কুঠুরি থেকে
কিলবিল উঁকি দেয় জরায়ুদ্রংষ্টা অমেরুদন্ডী, মাটির নিচের নোনা রসদ বাড়ন্ত হয়েছে। প্রাচীন স্থাপত্যে পাগল
চিল শকুনের দল রেখাচিত্রে ভাগ করে যে যার ফুর্তিখামার, শুধু হাতি আর কাকের কদর এখন জনে জনে কোটিতে বিকায়, খেলে। ভুত খুবই শস্তা এ পরিত্রাহী দশকে, ডাকিনীর টানে ভুত এসে গর্ভ খসায় একলপ্তে কত মিথ্যে মিথ হয়ে
আকাশসেনায় দাপিয়ে একইসাথে ভূমিকম্পকেও
রগরগে পর্ণোফিল্ম করে হাসে তুলকালাম ; সখ্যতায় পলিউশন ফ্রী স্পেস আর কাদাজল না লাগা ভালোবাসা রূপকথার ইউনিকর্ণ হয়েছে
কবেই ...!
**************