বুধবার, ২১ জুন, ২০১৭

মিঠু কর্মকার





মিঠু কর্মকার
আত্মা

তোমার অন্তরের নির্জন আঁধারে,
একান্ত নিরালায় সুখনিদ্রায় মগ্ন আমি |
তোমার যন্ত্রণা আমার প্রাণবায়ু হবে,
অশ্রু মেটাবে তৃষ্ণা, কষ্টগুলো ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করে দেবে তৃপ্তির কাঙ্ক্ষিত আস্বাদ |
কালের নিষ্ঠুর কশাঘাতে তোমার অগোচরে স্যাঁতস্যাঁতে জীর্ণ শরীরে
আশ্রয় নেবে কোনো বিষাক্ত কীট  |
হয়তো বা একদিন  উদাসী অবচেতনায়
স্মৃতির বৈতরণী বেয়ে, হৃদয় কবর খুঁড়ে চরম ঘৃণায় ভষ্মীভূত করবে আমার
নশ্বর গলিত দেহ |
কিন্তু আত্মা ?
সে তো তোমার হৃদসাগরের অতলান্তে বিলীন তোমারই অজ্ঞাতে ||





স্মৃতি

তুমি চলে গেলে……
হৃদকম্পনের তীব্রতায় রিক্টারের অশনি সংকেত,
ঘুণ ধরা অস্থিমজ্জায় বরফকঠিন নিরাশার অগ্নুত্পাত,
রক্তজালিকার শুষ্ক গিরিখাতে চূর্ণ বিচূর্ণ স্বপ্নের পাথর,
নেত্রনালীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত,
হতাশার বাতাস থামলে ধ্বংসের চিহ্ন সুস্পষ্ট,
ছানি পরা চোখের তাচ্ছিল্যের আগুন গ্রাস করছে অসংখ্য জিজ্ঞাসা,
ভূমিষ্ঠ হতে চেয়ে যোনিপথে মৃত্যু ঘটেছে জারজ ইচ্ছে,
বেদখল হওয়া বিষণ্ণ স্মৃতিপথে সুখী যন্ত্রণার অনির্দিষ্টকালীন অবরোধ,
শোকস্তব্ধ উপত্যকায় প্রতিধ্বনিত হয় উদাসী বিশ্বাসের গোঙানি ||





ভালবাসা

তোমার অবহেলাগুলো শাণিত করেছি
বিঁধতে কষ্ট না হয়,
তোমার দুঃখের ঋণ সুখ দিয়ে শোধ করেছি নিলাম না হয়,
তোমার দেওয়া যন্ত্রণাগুলো লকারবন্দী করেছি হারিয়ে না যায়,
তোমার মিথ্যা ভালোবাসা সত্য বলে আঁকড়ে রেখেছি
প্রতারক না হয়,
তোমার স্বপ্নগুলো চোখের জলে ভিজিয়ে রেখেছি
শুকিয়ে না যায়,
এখনও কাফনে জড়ানো ভালোবাসা তোমার দাফনের অপেক্ষায় ||





আধুনিকতা

গগনচুম্বী ইমারত তুলে আড়াল করেছি সূর্যকে,
ব্যালকনির রেলিং গলে চুরি করে আসা একচিলতে রোদ্দুর
ফিরে যায় বদ্ধমনের কড়া নেড়ে,
ব্যস্ততার অজুহাতে অনাদৃত সম্পর্কের বেড়াজালে
ধূসর স্মৃতি পড়ন্ত বেলার রোদ পোহায়,
বৃদ্ধাশ্রমের নোনা ধরা ইঁটের পাঁজরে বন্দী অজস্র রূপকথা
অনন্ত অপেক্ষার সবুজ শ্যাওলা সিঁড়ির পথ চেয়ে,
অপরিসর পরিধিতে ইনক্যুবেটরে নিষিক্ত বিবেক অপুষ্টির শিকার,
সংক্রমণের ছোঁয়া থেকে আলগোচে রাখা ব্যক্তিত্বে
জং ধরা চেতনার ব্যারিকেড,
অন্যায়ের যূপকাষ্ঠে মাথা রেখে ন্যায়ের
নিশ্চিত নিশিযাপন,
মান-হুঁশ হীন মনুষ্যত্বের প্রতিহিংসায়
ঝলসানো ধর্ম
বিধ্বংসী অধর্মের সংকীর্ণ গর্ভগৃহে,
প্রতিবাদী গলায় টাই বেঁধে উন্মত্ত আধুনিকতার উগ্র আতর মেখে
আবেশিত আঁধারে অনিশ্চিত গন্তব্যের
উদ্দেশ্যহীন লং মার্চ,
স্বার্থপরতার মাঞ্জা দেওয়া সাফল্যের ঘুড়ি
একাকীত্বের বিষাদময় বাতাসে ক্লান্তির
ধুলো মাখে,
সময়ের নাগপাশে শ্বাসরুদ্ধ শিক্ষার আবর্তে
সিলিং এ ঝোলে যান্ত্রিক মূল্যবোধ ||



রক্তাক্ত আশা

জীবনের বৃন্ত থেকে অসময়ে ঝরে যায় অগণিত ফুটন্ত ভবিষ্যত,
কয়েক ফোঁটা রক্তের অভাবে |
হতাশ স্বপ্নকে  প্রাণপণে বাঁচিয়ে রাখতে ফ্যাকাসে জীবনকে রাঙিয়ে তোলা আর্তি জানিয়েছিল ওরা,
করাঘাত করেছিল গরাদবন্দী চেতনার  দরজায় ,
যদিও রক্তলোলুপ সভ্যতার  বিবেকের শিরায় মেলেনি কোনো লাল তরল|
অথচ অনিয়ন্ত্রিত শোণিত প্রবাহে প্লাবিত  বিস্তীর্ণ জনপদ |
সর্বত্রই বাতাসে আঁশটে দুর্গন্ধে  শ্বাসরুদ্ধ ভুয়ো মূল্যবোধ,
প্রতিহিংসার তীক্ষ্ণ বড়শিতে বিদ্ধ প্রতিবাদী কলরব ,
হামাগুড়ি দেওয়া সমাজের রেটিনায় জ্বলে হিংসার আগুন ,
মুনাফার পোস্টমর্টেম রিপোর্টের দাবীতে  শকুনের অবরোধ,
স্বার্থের তুলিতে  চলে বিবর্ণ মৃতদেহ রং করার প্রতিযোগিতা,
কলঙ্কিত জোছনা ভেজা রাতে মৃত জোনাকীর মিছিলে,
পদপিষ্ট হয়ে নিহত হয় অজ্ঞাত পরিচয় বিবেক |
তবুও আসন্নপ্রসবা আশা প্রসববেদনায় অপেক্ষার প্রহর গোনে……

বিষণ্ণ শোকের জলীয়বাষ্পের ক্ষরণে ভাঙবে মনুষ্যত্বের শীতঘুম ||