বুধবার, ২১ জুন, ২০১৭

স্বপন কুমার দাস




স্বপন কুমার দাস

নদী 

সাদা মাস্তুলে ঘিরেছি মনোক্রোম আকাশ-
        নাস্তিক ক্যানভাসে রামধনু আঁকা হয়নি,
               অথচ পাতা ফুলে পথ ... পশমীনা।

সুবর্ণরেখা- কোয়েল আছড়ে পড়ে নুড়ি পাথরে,
             “যে জন প্রেমের ভাব জানেনা
                            তার কাছেই প্রত্যাশা।

পরিত্যক্ত পসরা রেখে কেউ চলে গেছে।

কারও বাঁশির সুরে পাখীরা ঘরে ফেরে।

আধাঁর নামলে কেউ ডানা ঝাপটায়।

এক বিস্তীর্ণ নদী এবার অন্তঃসলীলা হবে-

                  অন্য জীবনের তীব্র সান্নিধ্যে...।



রূপান্তর

কয়েক যোজন দুর থেকে আসা
কয়েক যোজন দুরে মিলিয়ে যাওয়া।
মাঝখানে বনস্পতি ঘেরা একটু খানি ছায়া।
এইখানে কতকথার কথকতা
এই সব বিমুগ্ধ শ্রোতারা
কাঁপা কাঁপা সুখ, তিরতিরে হাওয়া।

জীবনের জপমালা থেকে
 শব্দের আভরণ  খুলে যাওয়া  
সংঘাতে সংঘাতে বিজয়ী হয়ে
ভূমিকার সঙ্গে একাত্ব হওয়া।

সায়াহ্ন আলো  অচেনা মুখ
সব পথ  সাগরে মিশে যাওয়া।
একটা জীবন
এবার মূঢ়তা থেকে মুক্ত হয়ে
 অন্য ভাষণে অভ্যস্ত হওয়া





প্রথম প্রেম

ঈষানি হাওয়া অবিশ্বাসের পাল তুলে
শুনিয়েছে তোমার নিরুদ্দেশ যাত্রা
নক্ষত্ররা চুরমার হবে জেনেও
পড়া হয়নি সেই নিটোল বর্ণমালা।

সময়ের স্রোতে অস্পষ্ট
দুচার পদচিহ্নের রোমন্থনে আছে-
                      নির্জন তটভুমি।

তোমার তীব্র শুভ্রতার সামনে,
প্রায়শ্চিত্যের কোন লাল গোলাপ-
     আমার রিক্ত বাগানে ফোটেনি।

এখন এই অবেলায়,
বেদনায় সিক্ত শরীরে,
নিজেকে নিয়ত টুকরো করি।
অথচ কোন বৈশাখী দিনে
একটা তুখর ইচ্ছায়
শুধু তোমারই নাম লেখা ছিল।






কোলাজ 

নিয়নের আলো মেখে
ফাইভ স্টার হোটেলের
এঁটোকাটা খাচ্ছে বস্তির বালক।

মোমবাতির মসৃন অবয়বে
হাত রেখেছে কোন ছত্রিশ চব্বিশ ছত্রিশের
                   স্ট্যটিসটিকস্.. ডিনার টেবিলে।

মোজার্টের মিউজিকের তালে
দেওয়ালের টিকটিকি
অবিশ্বাস্য দ্রুততায় পৌঁছে গেছে
নিজের শিকারের কাছে।

একটা কোলাজ আঁকতে গিয়ে
কোন শিল্পী স্রেফ কালো রঙে
কয়েকটা আঁকিবুকি কেটে গেছে
               সাদা ক্যানভাসে..।





কলকাতার ক্লিভেজ 

সবাই যুদ্ধে গেছে,
শীতলপাটি দাওয়ায়
বোধহয় কেউ ফিরলো না।

প্রতিদিন সন্ধ্যায়
স্বৈরাচারী ইচ্ছেগুলো বিলবোর্ডে
লাস্যময়ীর চোখের গভীরে ডোবে।

চাঁদের চাঁদোয়ায়
ফুটপাথের দীর্ঘ করিডোরে
অনেক ক্লান্ত ঈশ্বর…….
দিনের আলো যাদের উপর
অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিল।

সুপারী গাছের মতো
দীর্ঘ কিন্তু অতি নমনীয় হয়ে
নৈঋতের হাওয়ায় দুলছি।

সাদাকালো ছাড়া অন্য কোন রঙে
এ শহরের মাষ্টারপিস আঁকা যায় না।
চারদিকে আলোর অন্ধকার,
চোখ বুজলেই দেখাযায় কলকাতার ক্লিভেজ।