অলভ্য ঘোষ
হ্যাংওভার
গলিই তোমার জন্য ঠিক আছে। রাজপথে নেম না।
এসো ছেদ গলির অন্ধকারে চুমা চাটি করি।
ছত্রিশ, বত্রিশ, টোয়েন্টি টোয়েন্টি!
মাপ নিই অঙ্গ প্রত্যঙ্গের। এসো বেথেলে নিই
স্বর্গের সুখ। সুখ যোনি শুকতে শুকতে
তলিয়ে যাই ফাই ফরমাশে; খেয়োখেয়িতে।
হ্যাংগিনের পরে সিলিং থেকে নামিয়ে যারা চোখের
জল ফেলবে তাদের ও জীবন শুকাবে
শুটকি মাছের মত ভেনটিলেশনে।
সুবিধা একটা কাঁটা পুকুরের লাশ কাটা ডোমেরা
তোমার ঘিলু ঘেঁটে দেখবে না; কত সম্ভাবনার পিছন মেরেছ
তুমি।
তারাও ঝুলবে জাটিঙ্গার বিদ্যুতের তারে ঝোলা
পাখি টার মত হ্যাংওভার হয়ে; অন্ধ গলির ছিলিম টেনে।
পৃথিবী ঘোরে কেন?
পৃথিবী ঘোরে কেন?
এ উত্তর খুঁজতে
আমি যখন ঘুরছি
দরজায় দরজায়
কিসের তাড়নায় বুঝতে
পারছি না।
মাউনট্যান ম্যান সেই
যে তার গ্রাম আর
শহরের মাঝখানের
পাহাড়ি রাস্তায় পড়ে পা
মচকানো বৌ এর জন্য
বাইশ বছর ধরে একটা
পাহাড় কেই নিরুদ্দেশ
করে দিয়েছিল ছোট্ট
একটা ছেনির ওপর হাতুড়ি
ঠুকে ঠুকে; সে এই বল
কোথা থেকে পেল।
শরীরে না মনে?
মনে না শরীরে?
শরীর চর্চায় যোগা
না জিম নবতম
সংস্কৃতি! মন কি বাড়ে
চলতি সিনেমাতে?
শরীর জুড়ে অষ্টপ্রহর বিজ্ঞাপন।
মনের খবর আজ বল কে রাখে।
পেট না পেট্রিওজম।
কতদিন বল শরীর বেঁচে থাকে!
মন কি শুধু শরীরেরই অনুকূলে।
পাহাড়ের বুকে গেলে
বোঝা যায় না সে কত উঁচু।
দূর থেকে শুধু ডরাই।
প্রশ্নটা এবার পাহাড়ি
মানুষ টাকে।
উত্তর ছিল ঠোঁটের ডগায়
লেগে।
পৃথিবী ঘোরে কেন?
-গাঁড়ের জ্বালায়!
আমার সব পোশাকি
আতলেমির মূহুর্তে যেন
আভরণ খসে পড়ে।
ক্ষণিকেই বুঝি শিকল
পড়ানো পায়ে; বশ-হয়েছি
কার অধীনে।
কঠিন কঠিন পুঁথিপত্র ঘেটে;
আমরা কেবল;
বিদ্যে বাহক মুটে।
সহজ সরল উত্তর গুলো সব
গোল পাকিয়ে ঘুলিয়ে জল খাই।
পৃথিবী কেবল ঘোরে তাদের জন্য
যাদের বাঁচা মরায় নিজ স্বার্থ নাই।
তুমি কি ঠিক আগের মতই আছো?
তুমি কি ঠিক আগের মতই আছো?
রাত পোহালে শিশির ভেজা পায়ে;
ভোরের আলোয় ঝিলিক নদীর গায়ে
এক পায়েতে এক্কাদোক্কা খেল?
শিউলি তলায় ফুলের মোচ্ছবে
আজো তুমি কি ভোমর হয়ে দোল?
তুমি কি ঠিক আগের মতই আছো?
একটুতে মুখ গোমরা হয়ে ওঠে?
চোখ ছলছল শ্রাবণ ধারা ফোটে?
কড়ে আঙ্গুল দেখিয়ে আড়ি কাট?
বেলে ডাঙ্গার মাঠের দিয়ে অভিমানে ছোট?
ঢেলা ছুঁড়ে পণ্ড কর ছিদেমের মাছ ধরা?
চুরি করা আচার খেয়ে ভাবটি করে দেখতে
যাবে বরাকরের চরা।
তুমি কি ঠিক আগের মতই আছো?
ছোট্টটি ছোট্ট মাধবীলতা;
কাজল চোখে এখনো কি আছে সরলতা?
সাদা বুটি নীল ফ্রকে;
এখন তো আর জানালার কাছে;
বলোনাক; কুলের আঁটি ছুড়ে
সোদর মাঠে যাত্রা পালা আছে!
সাঁঝ পোহালে এখন আমায়
বসতে হয় না পাঠে।
সন্ধ্যে গুলো শুধু তোমার
কথা ভেবেই কাটে।
বেলে ডাঙার মাঠেতে এখন
ঔষধ কারখানা।
বিদ্যুতের চাবুকের ঘায়ে
পালটেছে পুরো সোনামুখী গ্রাম খানা।
তুমি এখন শহরে বা গ্রামে কার ঘরের বউ!
সত্যি করে বলতো বন্ধু পাল্টেছো তুমি মৌ?
আমার মনের মমের মৌচাকে;
মৌমাছি টা ছোট্ট হয়েই থাকে।
একটি অকৃত্রিম হাসি
কি অপূর্ব সুন্দর। মোমের আলো পিছলে পাহাড়ী প্রকৃতির বুকে
জাপানি পুতুলের মত দেখাচ্ছে তাকে। মুখের হাসিটা যেন বোধিসত্ত্ব লাভের পর বৌদ্ধিক
উপবেশন। স্বচ্ছ কাঁচের মত জলের পাহাড়ী ঝরনা হয়ে ঝরে পড়লে যেন সে জল পান করে
পৃথিবীতে চির শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
আর আমি কলকাতার কংক্রিটের জঙ্গলে পুড়ে পুড়ে ছাই হওয়া
চিতা।
হ্যাঁ। এই প্রাতে আমি শহুরে একটু বিশ্বাসের জন্য কাঙ্গাল
ভিখারি; অস্থির গতির কাছে! বারবার
বলাৎকার হতে হতে এখানে সবুজ ঘাসগুলোতেও কার্বন কালি জমে খেছে। পলিউশন চেকআপ করে না
কেউ।
এক পাহাড়ী রাস্তার পাশে বড় বড় কুসুম চেরা চোখ, নাক চ্যাপ্টা যে মেয়েটিকে খুঁজে পেলাম; গা থেকে তার জুনিপার গাছ পোড়া সুগন্ধি ঘ্রাণ বের হচ্ছে।
কোনও পারফিউম, ডিওড্রেন্টে সে
গন্ধ নেই!
আমার ঘাম রক্তে একটু বেঁচে থাকার জন্য সমঝোতা করতে করতে
শ্রেণী চেতনাহীন বিকট ভেবসা মোজা পচা গন্ধ! আমি পুড়লে মরা পোড়া ধোঁয়া ছায়
কেওড়াতলার আকাশ জুড়ে। ধূপের মতো গন্ধ বিলাতে জানি না।
নতজানু হয়ে বসলাম একটি অশ্বত্থ গাছের তলায় পাহাড়ের উচ্চ
শৃঙ্গের নিচে। সব কৃত্রিমতার মুখ মুছিয়ে দিয়ে প্রবল দহনে ঘর্মাক্ত এই পৃথিবীতে
ছায়া ঘন শান্তির অরণ্যে গাছের পাতার ফাঁক ফুঁড়ে নেমে আসা রোদের মতো এই মেয়ে
তুমি আর একবার; আর একবার তোমার ওই স্নিগ্ধ অকৃত্রিম হাসি হাসতে পারবে। না।
ওতে তেজ নেই দাহ্যতার; আছে শান্তি
শীতলতা! তুমি হাসলে কলিঙ্গ যুদ্ধের পর সম্রাট অশোকের মতো সন্ন্যাস নেবে মানুষের যত
আদিম হিংসা, রুক্ষতা, বর্বরতা, পাষবিকতা, সংকীর্ণ সংস্কার, হীনমন্যতা গুলো। হ্যাঁ তুমি হাসলে ওয়ার্ডসওয়ার্থ বসন্তের
ফুল ড্যাফোডিল ছেড়ে মজবে তোমার নয়ন তারায়। নাখোদা মসজিদের গলিতে আতর ব্যবসা
লাটে উঠবে। শয়ে শয়ে শিশি গোলাপ, জেসমিন বা মোতিয়া, ফিউদা, কেশর, গুল হীনা, জেন্ডা, চম্পা, বকুল, নীলপদ্ম, সাদা পদ্ম, জাফরি, অম্বর, গুলমোহর টান মেরে রাস্তায় ফেলে দেবে সৌন্দর্য পিয়াসী এ পৃথিবীর
মানুষ।
তুমি হাসলে ধরিত্রী নির্মল হাসি হাসবে অলীক সুখ ভুলে।
অপদার্থ
অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছি কাজের কাজ কিছুই করতে পারিনি।
পৃথিবী তোমায় ভালবাসি বলে চোক চোক করে চুমু খেয়ে নিতে
পারিনি!
আমার লোভের লেলিহান লালা রেখেছি অবদমিত। পারিনি ধরিত্রী
তোমার কোমর জড়িয়ে ধরে নিঃশ্বাস ঘন করে তুলতে তুলতে
নিতম্বে হাত বুলতে। পারিনি স্তনবৃন্তে তুফানি চুমুক তুলে ভোরের আড়মোড়া ভেঙ্গে
জাগিয়ে তুলতে কুসুম কলি। ধরণীর স্তন সুধা লুট করে খেয়েছে ঔপনিবেশিক ডাকাতে।
তৃতীয় বিশ্বে আমরা ছাগলের তৃতীয় সন্তান। নাভির পাশে সুড়সুড়ি দিতে দিতে পারিনি
আর একটু নিচে নেমে এসে বিষ রাসায়নিকে সবুজ বসুন্ধরার উলঙ্গ জঠরে; রাত্রির জোছনা আলোয় ধান ক্ষেতের উঁচু আলের উপর তার কোমর
তুলে গোগ্রাসী যোনিপথে কঠিন দৃঢ় ছুঁচালো দীর্ঘ বল্লমের মতো পৌরুষ দীপ্ত লিঙ্গ
ঠেসে দিতে। আমি পারিনি ভবিষ্যতের সোনালী ধানের ক্ষেতে বর্তমানে উন্মাদের মত হাল
কর্ষণ করতে। আউশের মাঠে আমার পিচ্ছিল মদন রসে রসিকতা করেও পারিনি বীর বীর্য বর্ষার
মতো বৃষ্টি ধারা হয়ে নদী সমুদ্র প্লাবিত করে বন্যার মত স্খলিত হতে।যে স্খলনে
পৃথিবী উর্বর হয়; তাতে পাপ কিসের।
আমি পাপ করেছি এই বাংলার মাঠে ঘাটে নদী সমুদ্র তটে নরম
এঁটেল মাটির
ফাইব্রোমাসকুলার জরায়ুর যোনি দ্বারে; শিহরিত বিদ্যুতের আলোক দ্রুতি মিলতে না মিলতে বজ্রের মতো
কর্ কর্ রবে বীর্যপাত না ঘটিয়ে।
আমি অপারগ। অকর্মণ্য,অপদার্থ!
পারিনি কিছুই। শূন্য মাঠ। শূন্য গোলা। অথচ শরতের হিমেল বাতাস, আষাঢ় শ্রাবণের ধারা, কালবৈশাখী উন্মাদ বিকেল বেলা গুলো এসেছিল ফাগুনের রঙে মিশে
বসন্তের কোকিলের মতো চপল অষ্টাদশী তরুণী প্রকৃতির কাশ ফুলের শুভ্রতার মত শিউলির
গন্ধ ছড়াতে ছড়াতে; চোখের ইশারায়
কোমর দুলিয়ে কাঁখে কল্সি নিয়ে চরাচরের তৃষ্ণার জল আনতে যাওয়ার সময়; ভোরের শিশির ভেজা ঘাসে মৃদুমন্দ বয়ে যাওয়া হাওয়ার মতো
যেন ফিসফিস করে রেখে গেছে পা বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঋতু স্রাবের লোহিত চিহ্ন। শরতের
মেঘের মত ঝাপটা বাতাসে; চামরের মত তার
হাঁটু অবধি কুসুম তেলের সুভাষিত গুচ্ছ চুল উড়ে এসে লেগেছে আমার চোখে মুখে। দমকা
হাওয়ায় দোলায় এক জোড়া ডালিমের মতো কেঁপে উঠেছে তার বুক। গ্রীষ্মের তাপ দাহের
মত তার গরম নিশ্বাস পড়েছে আমার বুকে। তবু আমি নিঃশ্বাস ফেলা সামান্য দূরত্ব টুকু
ঘুচিয়ে পারিনি কাঁকড়ার মত তাকে জাপটিয়ে আঁকড়িয়ে ধরতে। সাপের শঙ্খ
লাগার মতো তাকে পেঁচিয়ে সিদে হয়ে উঠতে উঠতে চিতকরে ফেলতে পারিনি অনুর্বর এ
গোলার্ধে। গোলকের মাঝ খান থেকে দু ফালি করা হলে স্তনযুগল; অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ লাল নীল শিরা উপশিরা। উত্তর ও দক্ষিণ দুই মেরু
বৃন্তের মত। জননী মা পৃথিবী বসুন্ধরা। আমরা হাল কাঁধে ফেরা চাষী। প্রত্যেকে পিতা
আগামীর।
কেন তবে কিছুতেই আমার উৎসাহ নেই। কেন হতাশার ঘন কালো ছায়া।
কেন কেউ ভালো নেই। কেন বৃষবিক্ষের ফল খাচ্ছি আমি। কেন কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।
অথচ বিশ্বাস ছাড়া কিভাবে বাঁচা যায় তাও জানিনা। কেউ বিশ্বাসের ভেতর আমাকে একবার
ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে পারো। বিশ্বাসের সমুদ্রে আত্মবিশ্বাস দৃঢ়।ইচ্ছে করছে
প্রচণ্ড নেশা করে হারিয়ে যেতে কিংবা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য নোংরা কোন কাজ করে
ফেলতে। কিন্তু পারছি কই। মানুষ কিভাবে মনুষ্যত্ব হারায় শিখতে চাইছি। কিন্তু
কিছুতেই পারছি না বিবেক বুদ্ধি চেতনা আত্মাভিমানের উদভ্রান্তের মত বলাৎকার করতে।
পারছি না।না আমি কিছুই পারছি না। পুরনো আন্ডারওয়ার এর গায়ে বহুকাল শুকিয়ে কাঠ
হয়ে থাকা শুক্রাণুর মতো প্রাণ। বুঝতে পারছি না ব্যাঙাচির মত লাফাতে লাফাতে
নিষিক্ত হতে পারবে কি না ডিম্বাশয়ে।
সেই সত্তর সালের মতো কয়লার উনুন আজ আর নেই। লোহার শিক টা
আছে আঁচ টাকে খুঁচিয়ে দেওয়ার লোক নেই গ্যাস ওভেনে।