ফিরোজ
আহমেদ
জাহাজ বাড়ি
একটি বন্দর হেঁটে যাচ্ছে জাহাজের দিকে
যদিও তাকে বন্দর বলা যাবে কি-না, আমি জানি না
কারণ সেখানে কোনো পতিতালয় অথবা পানশালা নেই,
প্রজাপতিদের ডানার
স্বাধীনতা নেই
জাহাজটি লোহার নয়, সেগুন কাঠের
বন্দরটি জাহাজে প্রবেশ করে দেখলো,
সেখানে ক্যাপটেন নেই, তিনজন নারী
বিবাদ করছেন জাহাজটির অধিকার নিয়ে,
যেন গ্রীক পুরাণের সোনার আপেল
যেন একজন আফ্রোদিতি
আমরা কয়েকজন ছিলাম বন্দরের জীবিত মানুষ
বাকীরা গরু,ছাগল, কুকুরে পরিণত হয়েছিলো
আমাদের ক'জনেরই শুধু চোখ ছিলো
বাকীরা অন্ধ অথবা ইচ্ছা-অন্ধ হয়ে,
বধির অথবা ইচ্ছা
বধির হয়েও
চিনে নিচ্ছিলো আমাদের সিন্দুকঘরের চাবিগুলো
আমাদের জীবিত মানুষদের একজন
সেদিকে হাঁটলেন
তার চোখ ঝলসে গেলো
আমাদের কিছু মাথা নেমে গেলো হাঁটুর সমতায়
জাহাজে উঠে দেখলাম, আমার কামরাটা ফাঁকা
আমার জীবিত বন্ধুরা মরে গিয়ে,
আমাকে নিয়ে তুমুল হাসছে
আর ওদিকে আবার গ্রীক ট্র্যাজেডি
একজনই আফ্রোদিতি
বন্দর ঢুকে পড়ে জাহাজের কালো ঘরে
বোরকা
পরা দোকান
বোরকা পরা দোকানে যে যায়, সে জানে--
এখানে কারা আসে, কী খায়
ইতিহাসে লেখা থাকে সংযমহীনতার দলিল
বাঁকা অক্ষর, কালো কালি।
একটি পাউরুটির সাথে জিলাপির প্যাঁচ সরেস
দুধ বেশি চিনি বেশি এক কাপ চা
সাথে বিনা পয়সার বালি।
মৃত্যু
অথবা বেঁচে থাকা
বুক পকেটের নিচে কোনো হৃদয় থাকে না
মানুষ মূলত নক্ষত্রের সন্তান, না কি ঈশ্বর-কণা
জানা না গেলেও--
জানা যায় ভালোবাসাও এক দৌড় প্রতিযোগিতা
এখানে পরাজিতরাই শুধু মরে যায়।
টিকে থাকা শস্যবীজ টিকেই থাকে
নক্ষত্রের সমান আয়ু নিয়ে বার বার জন্মায়
মরে শুধু আগাছারা-ই
আকাশের চিলেকোঠায় তাদের কোনো কবর থাকে না।
নীরব গান
আমাদের মেঘদিন বৃষ্টি আসে না
ছাতাবৃক্ষগুলি থাকে না রোদে বা বর্ষায়
আমাদের ঝড়দিন বিদ্যুৎ চলে যায়
গবাধি পশুর ঘরে বাসের রাত্রিটা দীর্ঘতর।
মাঝে মাঝে আমারও খবর নেয়, যাদের আপনের মতো লাগে
যাদের বন্ধুর মতো লাগে
যাদের স্বজনের মতো লাগে,
সত্যটা লুকিয়ে রেখে আপনের কাছে যাই
বন্ধুর সাথে মিশি
স্বজনের বাড়ি যাই,
সত্যটা জেনে গেলে সুখগুলো ঝরে যায় শীতের পাতার মতো।
বসন্ত এলে, তবু
সেইসব বৃক্ষের কাছেই ফিরে যেতে হয়
হাতে কাগজের ফুল
মুখে মিঠে হাসি,
ঝরাপাতাদের নীরব গান অন্যকোথাও বাজে।
জীবন
পর্ব
আত্মহত্যার আগে শেষ চিঠিতে ছেলেটি তার প্রেমিকাকে লিখেছে-
"নারীদের সঙ্গম অভিজ্ঞতার আগেই মরে যেতে নেই
আর পুরুষদের আত্মহত্যা করা সমীচীন প্রথম সঙ্গমের পরেই
তুমি বেঁচে থাকলেই পৃথিবী উর্বর হবে
ঠিক আমি মরে গেলে হবে যেটা
মৃত্যু ছাড়া জীবনের আর কোনও সত্য নেই
সত্যের কাছাকাছি গেলে জীবন পূর্ণ হয়
জীবন পূর্ণ হলে মরে যাওয়া ভালো
যদিও বেঁচে থাকাটা লাভ জনক- বলেছিলো
একজন সুদখোর কবি"