সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

সৌমিত্র চক্রবর্তী



সৌমিত্র চক্রবর্তী

অবেলার গুটিশুটি দিনগুলো
----------------

দিনগুলো কেটে যায় একে একে ছায়া রোদ্দুরে
বড় বেশী ধাক্কা খাওয়া দিনাতিপাত আমার।

আশেপাশে ঘোরাফেরা করা মুখ চিনতে পারিনা আর
কখন যে চেনা মুখ ছদ্মবেশী হয়! জানিনা কখন!

বিশ্বাস কি কোন দুর্লভ প্রজাতির এ্যান্টিক
কালেকস্মিনে খোঁজ মেলে আরশোলার গন্ধমাখা নীলামখানায়!

অথচ খুব বেশী চাওয়া ছিলনা আমার,
যখনি এসেছি, দুহাতে দিয়েছি নিজেকে সাজিয়ে।

শীতকুয়াসা বড় আবেগময়, ঝাপসা করে দুচোখ নির্দ্বিধায়
কুয়াসার বিচরণে শিরায় শিরায় রোজ মৃতদেহ মিছিল।

এ পাথরভূমি বড় বেশিদিন বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে
সবচেয়ে প্রিয় মুখ ও আজ হারিয়েছে মুখোশ আড়ালে।
                                                *****



ভারতবর্ষ
_______________________________________
আজ চৌরাস্তার মোড়ে
আমার সাপ্তাহিক সব্জীবাজারের অর্দ্ধেকেরও কম
ছেঁড়াখোঁড়া ফেলে দেওয়া দৈনিকের পাতায় সাজিয়ে
এককোনে গুটিশুটি দুটি আর্তচোখ।
চতুর্দিকে হট্টগোল,ব্যস্ত পায়ের আনাগোনা
গাড়ীর হর্ণ,বাইকের ধমকানি,সাইকেলের টিং টিং
পুলিশের চোখ দেখেও না দেখা;
পুলিশেরও দয়া হয়
#
ভাঙা তোবরানো গাল,একমাথা বরফ চুল
ফরসা ঝুলে পড়া চামড়ার নীচে লিকলিকে হাত পা
এককালে ভারী সুন্দরী ছিলেন।
হয়তো বাড়ীতে কেউ নেই
হয়তো বাড়ীই নেই
হয়তো বা
#
চারিদিকে ভয়ংকর শব্দস্রোতে একমাত্র বাক্যহীন
কতদিন ভাতের মুখ না দেখা
আমার ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ মা আমার।     
                                                 *****



গাজা স্ট্রীপ
-------------
রাষ্ট্রপুঞ্জের ছুঁচলো গর্বিত মাথায়
পতপতিয়ে উড়ছে কাটা শিশুমুন্ড,
শাইলকের ফর্ক ব্যাঙ্গহেসে মুখে তোলে
একটুকরো জরায়ুর কাবাব,
নেক্সট তারই বক্তৃতা শান্তির সপক্ষে।
তেলের কূপগুলোর চারপাশে
দাউদাউ অ্যাম্বার শিখায় বৃহদাকার ওভেন,
যেভাবেই হোক পরিস্কার রাখতেই হবে
আদ্যন্ত গলিত সোনার চলাচল পথ।
কোথাও বাদামি কুত্তির ঘেউ শান্তি ভাঙলেও
মিসাইল প্রহার অনিবার্য হয় ঈশ্বরের নামচায়,
কোথাও কোনো নাট্যমঞ্চে বিবেক স্পর্ধিত হলে
জিভ কেটে নিতে নিশপিশ করে সাদা আঙুল।
আগুন সর্বভূক, ছড়ানোর সাহস
নেভাতে আসবে ধর্মকল্যাণ,
পায়ের তিনফুট নীচে ফুটছে গাজা,
রক্ত থইথই কার্পেটে আরামদায়ক শান্তিসম্মেলন।
রাষ্ট্রপুঞ্জের লাল দাড়ির আগায়
উড়ছে পতপত কাটা শিশুমুন্ডের কালো চুল।

                                                *****





খোলস ছাড়ার বৃত্তান্ত
__________________

সারারাতই জ্বর, সারারাতই শুধু উষ্ণ বিকিরণ
সারারাত।

অনেক শুকনো খোলস বয়ে কুঁজো হয়ে
কাটিয়েছি বিগত ঠুনকো মরিচ সময়,
সর্বস্বত্ব বাঁধা ছিল ধূর্ত ধূসর শেয়ালগর্তে।

বোধ কড়া নাড়ে ঠিকই, বোধ শৃগাল নয়।
দুঃস্থ চেতণ জ্বলে, পেরিয়েও ফিরে ফিরে
দেখে নেয় ফারেনহাইট সীমা।

অশক্ত হালকা জানালায়, টুকি দেয়
দ্বিতীয় শৈশব
হাতের মুঠোয় টুকরো হাসি একে একে
বিলিয়ে রঙহীন,
তবুও সুখের আলিবাবা গুহা, তবুও হতবুদ্ধি চিচিংফাঁক -

দেসদিমোনা তোমায় থোড়াই কেয়ার!
জ্বর ছেড়ে গেছে আমার!




ছায়া
_____

যাতায়াতের রেলিংয়ে পেঁচিয়ে সর্বদাই ইশারায় ডাকে রেললাইনের সমান্তরালে ওকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাও শুকনো পাতায় সরসর আওয়াজ তুলে মাঝেমধ্যে সামনে এসে লোলুপ দৃষ্টি মাখিয়ে গা চেটে ফিরে যায় আবারও এবং বারবার ফেরার অশুভ আকাঙ্খায় শেষের সেদিনের গল্প চাউর যতই করুক বিষমাখা নিত্যহাওয়ায় সেখানেই ফেলে রেখো প্রথম আলো দেখার দিনে যে অবলীলায় দুপায়ে ঠেলে এসেছিলে মৃত্যুকে বশম্বদ কর যন্ত্রমানুষ!
                                                *****