সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

শাকিলা তুবা




শাকিলা তুবা

আকাশ ছোঁওয়াও মেঘের ওপার থেকে

পুষ্প চয়নকালে ওভাবে কেন মেলে দিলে
পাঁপড়ি; সুনয়ন, সুলোচনা?
দৃষ্টির থেকে বয়ে গেল বাতাস
তপ্ত কেমন, কেমন আধবোজা
ঠোঁটের কাছে অমন, জীবন নির্বাস দেয়া যাক
নাকি ঐ চোখের সামনে পৃথিবীও তুচ্ছ!

এমনি করে হবে একা যে দিনগুলোতে
ডেকো ঝড়, উতল তুফান
অযথা যুদ্ধে হয়ো পরাজিত
সবশেষে ক্লান্ত পৃথিবীতে
প্রোথিত হবে শান্তির ব্রজবীজ
হোক তা প্রেম অথবা প্রেমহীনতার।





রেস্টুরেন্ট
এই রেস্টুরেন্টটা মীরা'র পছন্দের
নেই বারণ, এখানে বসে সিগারেট টানা যায়
ডুমো মাছিদের হল্লা, চার আঙ্গুলে গেঁথে নিয়ে
সবজেটে কাঁচের সস্তা গেলাস বেয়ারা ছেলেটার
বেয়ারা রকমের ঘামগন্ধের ছোটাছুটি;
মন্দ লাগেনা।
গ্রুপে গ্রুপে আড্ডা, ধোঁয়ার কালচে আভরন
সব ঘ্রান মিলে আরতির একটা ইমেজ
মীরার ভালই লাগে।
কয়েকটা ছেলেমেয়ে সস্তা বাঁধাইয়ের নোট হাতে
গল্প করছিল কি পড়ছিল আরেক টেবিলে
বইয়ের ভেতরের ময়লা একটা পৃষ্ঠা
উড়ে পড়ল খসখসে মেঝেতে
একটা ছেলে দৌঁড়ে গেল, অন্যরা হাসছে
এসবই মীরার খুব বেশী ভাল লাগে।





কে গেল কোথায়
সে আমার রাখে না খবর তাই
আমি ডাকি না তারে জুয়ার আসরে
ঘড়ির ডায়ালে আর লিখে রাখি না,
ক্ষমাই প্রভুত শক্তির উত্স
আমারে সে ডাকে না
আমারে সে চেনে না এমন ভাবে
আমারে সে ফেলে দেয় বাতিলের খাতায়।

অথচ তার দিন কাটে তারা গুণে
যেসব তারায় সে পায়না খুঁজে আমার ঘরবাড়ি
একে তাকে জিজ্ঞেস করে খোঁজে ঠিকানা
নিখোঁজ মানুষের ভিড়ে
যেভাবে ছেড়ে গেছে, ভয় হয়
সেও যেন একদিন এমন
সেও যেন তাদেরই মত মৃত্যুকামী মানুষ
চল্লিশেই যাকে আশির ভ্রম লাগে।

আমাকে যে রেখে গেছে এত সোহাগের মাঝে
দেখা পেলে তারে বলো আশীর্বাদে আছে
আমার এখন যেমন কাটে দিন, অস্থির
ভুলে যাইনি তাকে শুধু ভাববার
আর হয়না অবসর
সে যেন আর না আসে
ভুলে যেন যায় যেমন সে ভেবেছিল আগে
ফাঁকিতে যেন না পড়ে আর
আমাকে ভুলে গেছে ভেবেও ভোলেনি যে
এবার দোহাই দিও তারে
সে যেন ভুলে যায় এই আমারে
সে যেন আর না কাঁদে লুকিয়ে অশ্রু হাসিমুখে।





বাসন্তিক বিষুবন
আলোরা কষ্ট পাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে
পাখা ছাড়া উড়তে উড়তে পুড়ে যাচ্ছে
হাজারো সূর্যাস্ত
দখিনের রাস্তায় ঘুরে যাচ্ছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস
ফুলে ধর্ণা দেয়া মৌমাছিগুলো
ফিরে যাচ্ছে, ফিরে যাচ্ছে
দেখেশুনে এসব, কষ্ট হচ্ছে।

বিগত জীবন থেকে বেরিয়েছে এই দেখো
একটা পাথর, রঙচঙে কি?
দেখে মনে হয় কারো কিছু হয়েছে কোথাও।
কোথায় কি হয়েছে? ভুল?
ভুল হয়েছে?
জীবনে কিছু ভুল হয়েছে
ভুল থেকে জীবন কষ্ট পেয়েছে।

ভুল জানতে ভাল লাগে, সুন্দর লাগে।
একরের পর একর জীবন পার হতে হতে
মখমল জুতা প্রথমে সিল্ক, সিল্ক থেকে
জলীয় হয়ে খুলে যাচ্ছে
বাকল সব খুলে যাচ্ছে
নষ্ট জীবন অনুতাপে পুড়ছে, পুড়তে পুড়তে
আলোগুলোর কষ্ট হচ্ছে, আলোরা নষ্ট হচ্ছে।





নৌকা ডুবুরী
সে প্রতিদিন পালাবার পথ খুঁজত
অন্যদিকে তখন চলত সুদের হিসাব
সংখ্যা গরিষ্ঠতায় আটকে গেল
ভাল নামের বাসাটা।

সে চলে গেল মরীচিকা পথে
এদিকে ঝাউবন হল উত্তাল তখন।

তৃতীয় সৌভাগ মন্ত্রী; জোর বৃষ্টি হয়ে
চলে এল চারকোণ ঘরে।

এভাবেই মধু মঞ্জরী হয় বিলীন
এক থেকে অপরে
ত্রিমূর্তির শিব ধংসের প্রতীক ঠিক
তবু শৈব উপহারে ভরে থাকে বেদী।





গুজরি-পঞ্চম
সমতলে নেমে এসো পুরুষ
দাঁড়াও পাশাপাশি
চোখে রাখ চোখ, হাতে হাতে
চলো ভালবাসা নিয়ে
কাটাকাটি খেলি হৃদয়ে হৃদয়।

অনেক আছিল কথা তোমাকে বলিবার
হৃদয় চিরে দেখাবার
প্রভু-ভৃত্যের আপোষহীন সম্পর্ক ভেঙে
এখনো কি আসেনি সময়
সমতার; আসেনি সময় ভালবাসা বাসিবার?

এখানে এসো পুরুষ কামক্রোধহীন
ভালবাসি তোমাকে শুধুই যক্ষ যেন
খনি খুঁড়ে দুটো হীরে
একই চাঙরের ভেতর জড়াজড়ি
কালো কয়লার।

তুমি যদি মোহর হবে, আমিও তেমনি
সুচিকন জরিসুতা তোমার মুকুট।
একদিন পাশাপাশি বসিও পুরুষ
সমভূমির জলই কেবল
গড়িয়ে যেতে পারেনি অন্যকোথাও।

সমতলে নেমে এসো একদিন, পুরুষ
মুখোমুখি দাঁড়াবার সাধ নিয়ে
সমানে সমান
তখন আমার জাগবে সময়, হবে অবসর

তোমাকেই ভালবাসিবার।