সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

সম্পাদকের কলমে



“কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি
নোটের রাজ্যে ভারত লাইনময়:
চল সবাই লাইনে গিয়ে জুটিঁ”

না আজকে ভারত জুড়ে যে নোট জ্বরে গা পুড়ছে আপামর জনসাধারণের, সেখানে কবিতা নিয়ে দুচার কথা বলতে যাওয়া নিষ্ঠুরতার থেকেও বড়ো বেশি নৃশংস কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু কবিতাউৎসবের মতো একটি মাসিক পত্রের নিয়মিত প্রকাশের জন্যে সেই কবিতা ছাড়া অন্য কোন কিছুতেই তো আশ্রয় করার উপায়ও নাই। সময়ের নির্দিস্ট নিয়মের সীমানায় তাই আমাদেরকেও কবিতাউৎসবের অগ্রহায়ণ সংখ্যার নতুন কবিতার ডালি নিয়ে উপস্থিত হতে হয়েছে। কিন্তু ভারতবর্ষ জুড়ে আজ যে নোট বিপর্যযের দুর্যোগে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে- সেই সময়ের গণ্ডীতে দাঁড়িয়ে কেউই কবিতা চর্চার কথা কল্পনাও করতে পারবে না। পারা উচিতও নয়। সাহিত্য ও জীবনের সম্পর্ক যত গভীরই হোক, জীবনের মূল্য সাহিত্যের থেকে অনেক, অনেক বেশি। কথায় বলে পেটে খেলে পিঠে সয়। সত্যিই খালি পেটে সাহিত্য হয় না।  এই বিপর্যয়ের ফলে ভারতে কোথাও না খেতে পেয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে এমন কোন খবর এখন পর্য্যন্ত না পাওয়া গেলেও আজকে অধিকাংশ মানুষেরই দৈনন্দিন জীবন যাপনের চেনা ছন্দেই ঘটে গিয়েছে সম্পূর্ণ ছন্দপতন। আর এই নোট বদলের চক্করেই এখন অব্দি মৃত্যুর সংখ্যাটি প্রায় পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই করছে।

না এই মানুষগুলির কোন দোষ ছিল না। তাদের একটাই ভুল হয়েছিল অসমর্থ্য শরীরেও নোট বদলের লাইনে বাতিল নোটের সৎকার করতে তাঁরাও ঝাঁপিয়ে ছিলেন আর পাঁচজনের মতোই। কিন্তু তাদের শরীর নিতে পারে নি সেই ধকল। অকালে অযথা ঝরে গেল এতগুলি প্রাণ। সামান্য একটি দরকারী সরকারী সিদ্ধান্তের ফলে। সিদ্ধান্ত নেন দুচার জন। মূল্য চোকান অধিকাংশ। এটাই মানুষের রাজনৈতিক ইতিহাস। নোট বদল ভালো কি মন্দ, প্রয়োজনীয় কি অপ্রয়োজনীয়; আসল উদ্দেশ্য ও প্রচারের মধ্যে রয়ে গিয়েছে কিনা আসমানজমীন ফারাক সেসব বিচার নিয়ে অনেকেই অনেক তর্ক বিতর্কে ব্যস্ত। কবিতাউৎসবের নিজস্ব ক্ষেত্র সেটি নয়। কিন্তু জাতীয় বিপর্যয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গোড়াতেই যদি ঘটে যায় এমন ছন্দপতন যাতে মৃত্যুই এসে কেড়ে নিয়ে যায় মহামূল্যবান প্রাণ: তখন সাহিত্যচর্চাই হোক আর কাব্যচর্চাই হোক সেই সঙ্কটকে যদি অন্তরে ধারণ করা না যায় তবে মনুষ্যত্ব আর মানবিকতার পক্ষে সে এক মহা অপমান।

সাহিত্যচর্চা বা কাব্যচর্চা অবসর বিলাস নয়। জীবনকে ছুঁয়ে ছেনে অনন্ত সময় ও মহাজীবনের পটে গভীর ভাবে অনুভবের বিষয়। যে অনুভব মানবিক উপলব্ধির সীমানায় মানুষকে আরও মানবিক করে তোলে। জীবন সংগ্রামের প্রতিদিনের অলিন্দে যাবতীয় অন্ধকারকে প্রতিহত করতে প্রেরণা দেয়। অনুপ্রাণিত করে নব জীবনের উদ্বোধনে। সেইখানেই তার মূল প্রাসঙ্গিকতা। কবিতাউৎসবও সেই পথের পথিক হওয়ার প্রয়াসে নিরন্তর সজীব থাকতে প্রত্যয়ী।

তাই কবিতা প্রকাশের এই লগ্নেও আমরা বর্তমান পরিস্থিতে গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। মানুষের মৃত্য জীবনের অমোঘ নিয়মের একটি পর্ব হলেও, মানুষের কোন সিদ্ধান্তের ফল স্বরূপ সেই মৃত্যুই যখন অকালে জীবনের পর্বে আত্মপ্রকাশ করে, তখন কবিতাকেও প্রতিবাদী হয়ে উঠতে হয়। কবিকেও সচেতন হয়ে উঠে অক্ষরের বয়ানে প্রতিরোধের শব্দ বুনতে হয় মনুষ্যত্বেরই জয়গান গেয়ে। সেখানেই মিশে যেতে পারে জীবন ও কবিতার দুই দিগন্ত দৈনন্দিন সংগ্রামের প্রত্যয়ী পটে।

কবিতাউৎসবের বর্তমান সংখ্যায় আমরা কোন বিশেষ বিষয়ের উপর আলোকপাত করে কবিতার সংকলন প্রস্তুত করি নি। ভারতবর্ষের নোট বিপর্যয়ের অভিঘাতকে ধরার প্রয়াসেও এই সংকলন নয়। বস্তুত এই সংকলনের অধিকাংশ কবিতাই এই বিপর্যের পূর্বে লেখা। এবং কবিতাউৎসবের প্রত্যকটি সংকলনের মতোই এই সংকলনেও কাঁটাতারের উভয় পারের কবিতাই স্থান পেয়েছে। কবিতাউৎসব কাব্যপ্রেমী আপামর বাঙালির অন্তর্জাল কবিতাপত্র। নির্দিষ্ট কোন রাষ্ট্রীয় মানচিত্রের সীমানায় তার অবস্থান নয়। কিন্তু জগৎজীবনের নান্দনিক সংস্কৃতির বর্ণময় উদ্ভাসনের রেখাচিত্রের সীমারেখার বাইরে যেখানেই মনুষ্যত্বের অপমান সেখানে সমস্ত শুভবোধ সম্পন্ন নাগরিক মননের সাথে কবিতাউৎসবও সামিল।

কবিতাউৎসবের বিগত বেশ কয়েকটি সংখ্যায় অনিবার্য কারণবশত আমরা এ মাসের অতিথি বিভাগে কোন কবি সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সাথে একান্ত আলাপচারিতার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে পারিনি। সে আমাদেরই দুর্ভাগ্য। বর্তমান সংখ্যায় অন্তর্জাল সাহিত্যচর্চার পরিসরে সুপরিচিত কবি মৌ মধুবন্তীর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে পেরে আমরা তাই সবিশেষ আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। আমরা আশাবাদী মৌ মধুবন্তীর চিন্তা চেতনা মন মননের সাথে পরিচিত হয়ে কবিতাউৎসবের পাঠকবর্গে বিশেষ আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করবেন। সেই সাথে এই সংকলনে যাঁদের কবিতা দিয়ে অগ্রহায়ণের বরণডালা সাজানো হলো, তাঁদের কবিতার বর্ণচ্ছটায়েও পাঠকবর্গ সমৃদ্ধ বোধ করবেন। আমরা আশাবাদী।


কবিতাউৎসবের ফেসবুক পেজ :
https://www.facebook.com/amaderkobitautsov/  কে লাইক করে ফেভারিট করে রাখলে কবিতাউৎসবের যাবতীয় তথ্য ও বিজ্ঞপ্তি সরাসরি আপনার ফেসবুক ওয়ালেই দেখার সুযোগ ঘটবে। এই পেজেই কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতাগুলিও নিয়মিত প্রচারিত হয় লিংকসহ।


এবং এরই সাথে কবিতাউৎসবের ফেসবুক গ্রুপ:  https://www.facebook.com/groups/kobitaautsov/#  এ জয়েন রিকোয়েস্ট পাঠালে গ্রুপের সদস্য হিসাবে গ্রুপের ওয়ালে আপনার কবিতা ও কবিতা বিষয়ক মূল্যবান মতামত সরাসরি পোস্ট করে সকল সদস্যদের সাথে শেয়ার করেও নিতে পারবেন। গ্রুপের পিনপোস্টে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে।


এছাড়াও কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি: https://plus.google.com/u/0/communities/117144176931778027450  তে সরাসরি জয়েন করে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের মতো সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে আপানার কবিতা পোস্ট করার সুবিধা ছাড়াও আপনার নিজস্ব সাহিত্য ব্লগের লিংক নিয়মিত ব্যবধানে প্রচারের সুবন্দোবস্ত ও অন্যান্য একাধিক বিভাগে আপনার যোগদানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সুস্পষ্ট নিয়মাবলীও।


***কবিতাউৎসবে লেখা পাঠানোর সাধারণ নিয়মাবলী:
১) স্বনির্বাচিত স্বরচিত ৫টি প্রিয়কবিতা পাঠাতে হবে
২) অভ্র বাংলা হরফে টাইপ করে একটি এমএস-ওয়ার্ড ফাইলে এটাচ করে
৩) কোনভাবেই পিডিএফ ফাইল ও বিজয় ফন্ট গ্রহণযোগ্য নয়
৪) একটি প্রফাইল চিত্র  অতি অবশ্যই আবশ্যক
৫) কবিতা পাঠানোর ঠিকানা amaderkobitautsov@gmail.com
৬) পাঠানোর শেষ দিন প্রতি বাংলামাসের ১লা তারিখ

***কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতার স্বত্ত্ব লেখকের নিজস্ব


কবিতাউৎসব আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধাশীল থেকে সবরকমের সহযোগিতার বিষয়ে সাধ্যমত অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিতাউৎসবের সাথে থাকুন কবিতাউৎসব আপনার পাশে রয়েছে সবসময়।