সৌরভ মজুমদার
চতুর্দশপদী ০০৩
ঘুমন্ত শৈশব
নীলকালো উপত্যকায় জ্যোৎস্নাপ্রেম জাগে ধীরে…
রাতচরা আকাশের সোহাগ জড়িয়ে, একপায়ে
দাঁড়িয়ে পাথর । রাস্তার কুকুরছানা মেঘপাড়ে,
মাকে ছেড়ে, শিশু লামা হাপুশ কাঁদে
বুদ্ধমন্দিরে ।
ত্রিপিটকে বদ্ধ বাতাস, মুক্তির পথ খোঁজে হন্য
হয়ে, অন্ধকার ঠেলে উঠে । শীতরাতে
দেয়ালায়
পাশ ফেরে দেবশিশু, একহাতে বে-ব্লেড, অন্যতে
মুঠোয় ধরা অলীক অভিমান । আফোটা কষ্টের
কুঁড়ি আঁকড়ে যশোধরা, অপলক বৃদ্ধ গৌতম ।
ছায়া ছায়া স্বপ্নের ভেতর কাঁদে জাঙ্গল ফাউল ।
লালিগুরাসের বনে চাঁদ নামে, ব্যাথাকুয়াশায়,
বার্ন আউলের ডাকাডাকি । ঘুমন্ত শৈশব বুকে
ধ’রে, মানুষের, কুকুরের, পেঁচার, বনমুর্গির...
গৌতমী অশ্রুসজল, অপলক ধ্যানস্ত গৌতম ।।
-----------------------------------------------------------------------
চতুর্দশপদী ০০৫
রূপকথা চুপকথা
হীরামন দাঁড়কাক গোল্ডফিশ ডুবস্নান বাঁধাঘাট
রবিবার সারাদিন প্রদীপের আলেয়ায় আলাদীন -
চুম্বক টুম্বক দুরুবুক এলোকেশে নাজনীন
সম্বিত ফিরে পেয়ে সূর্যটা উঁকি দিল ফিটফাট ।
প্রতিদিন হৃদয়ের খোলামেলা দুনিয়াটা ভাঙ্গাহাট
পার্ক মলে মশগুল ক্যাফেকফি বিধাতাও স্মৃতিহীন -
সুচতুর কড়িখেলা, শরীরের হোরীখেলা নিশিদিন
ভুলেভরা পাশাদানে কত রাজা খুঁইয়েছে রাজপাট !
অ-মানুষী রাতঘুম মুছে দেওয়া ব্যাভিচার, ধর্ষণ -
নিঃস্পৃহ সময়ের নিদানে, নিথর মনব্যাকরণ
কালের ঘৃণায় পোড়ে পিতা আর পুরুষের সংযম
সম-ফাঁকে তালি দেয় হাসিরাশি বালিকার ক্রন্দন -
অভিঘাতে কালো মুখ, জংধরা পৃথিবীর উদ্দ্যম
ভেসে যায় রূপকথা, চুপকথা মানুষের স্বমেহন
।।
--------------------------------------------------------------------------------
চতুর্দশপদী ০০৭
শব্দ-সহ-বাস
সহজ ক’রে বলা কথা, শব্দসহ বাস, শতেক দিন পর
ঘুরে ফিরে আসে । প্রতিদিনের আঁকা ছবি, দিস্তার পর দিস্তা
কথার প’রে কথা, কঠিন, বর্ষাবেলার ভরভরন্ত তিস্তা
নদির মতো বেগে, দুকূল ছাপিয়ে আমায় বলেছিল, সর -
জলবিছানা পেতে রেখেই, আঁকড়ে ধ’রে আমার শব্দঘর
তোমার দেওয়া কল্পভাষা, নকশিকাঁথা, ছেড়েই এলাম তা -
গুমোট শব্দশোক তোমার, শতাব্দি প্রাচীন হোক ।
কথকতা
সরল রেখায় এবার । মনদুয়ারে বাজুক কোমল স্বর ।
আমার শব্দসহ বাস, তোমার সাথে স্বপ্ন সাঁকো, ভেঙে পরা
কথার উপবাস । কুড়িয়ে নেয়া ধুলোর কুঁড়ি, জ্যোৎস্না ঘরে
ফেরার ডাক । বল্গাহীন বুনো বাতাস । আঁধার দিনের পরে,
শহর মেয়ের বুকের থেকে, হাস্নুহানার গন্ধটুকু ধরা
।
যৌথখেলার অভিকর্ষ, উষ্ণসময় যান, শব্দ সহবাস
আমার, একলা আকাশ বিজন ঘরের, আমিই কৃত্তিবাস ।।
--------------------------------------------------------------------------------
সহযাত্রী
ভেতর ঘরে পাথর প্রেমে জয়চণ্ডী
ভেতর ঘরে হাওড়া স্টেশন বড় ঘড়ি
ভেতর ঘরে বুঁদ হওয়া এক রেশম পথে
ভেতর ঘরে একলা আমি সীগারেটে ।
ভেতর ঘরে কষ্ট পাওয়া তোমার সাথে
ভেতর ঘরে শপথ নেওয়া নিজের কাছে
ভেতর ঘরে একটা, দুটো, তিনটে, চারটে
ভেতর ঘরেই বছর ঘোরে বনবাসে ।
ভেতর ঘরে কূল ছাপানো জলচ্ছাশে
ভেতর ঘরে কথার আদান থাকব পাশে
ভেতর ঘরে বাঁধা পরে অবুঝ খেলায়
বাইরে এসে হাতটা ধরা সকাল বেলায় ।
বাইরে এসে চলার শুরু প্রবল বাধায়
বাইরে এসে নতুন নীড় এ ভালবাসায়
বাইরে এসে তোমার সাথে (দু দশ) বছরগুলো
ভেতর ঘরে আলো জ্বালায় অহরহ ।।
-------------------------------------------------------------------------------------------
রস-কষ-শিঙাড়া-বুলবুলি
ও বোহেমিয়ান
কফি হাউস টানে নি সেভাবে কোনোদিন ।
আমাকে টানে না । আর কখনও
যদি গিয়ে পরি নন্দন চত্বর, সদন বা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গন
। শুরু হয় প্রাণপণ
ইচ্ছের সাথে দাড়িয়াবান্ধা খেলা, যখন তখন । পড়িমরি ঘরে ফেরা
। কড়িকাঠ হীন
আমার রস-কষ শূন্য চারদেয়াল । আকাশ
পাতাল । দিনের পর দিন, রাত । আজও ।
বারদুয়ারীর হাউস অফ কমন্স, লর্ডস, খালাসিটোলা হ’য়ে শহরতলির ছাদ -
টানেনি আমায়, কোনো অছিলায় । বিশুদ্ধ বাংলায়, সোচ্চারে, মুখোমুখি হইনি বিবেকের
তোমার । আমারও । এও তো ফ্যালনা নয় বরং
উলটোরথে চড়ে, বেহিসেবের
লাগাম পরানো । বেশ বেশিরকমের ভালো ।
তবে, মানসিক বোহেমিয়ান আমিও
।
বাবুঘাট, নিতান্ত কাজে ছাড়া যাইনি
কখনও । বইমেলা ফেরা বাসগুমটি আথবা ইনডোর
ফেরত । আউট ডোরও । শহরের কোনো অংশ
ছইফেলা ছিল না আমার, এতটুকু খোলা -
প্রথম খুলেছিলাম মেও রোড, বালিগঞ্জ ট্রামডিপো তারপর
চায়ের দোকান, শিঙাড়া, কেওরাতলা
কথার দাহ । সৎকার নিয়ে পাশাপাশি বসে
থাকা । নির্বাক । জেনে রেখো, বোহেমিয়ান আমিও ।
নেশারা ঘুরে ঘুরে ফিরে গেলে তমালতলায়, জয়দেবের মেলায়, রাতের থালায় গানধরা
হাতে হাতে । গরম খিচুড়ি আর লালপাহাড়ি
। স্বকণ্ঠে অরুণদা, ঘুরতে ঘুরতে অজয়ের চরে ।
বাসের মাথায় লোকায়ত ঝুমুর । সেই সব দিনরাত্রি নিয়ে নিয়ে বসত ক’রে বহুদিন ধ’রে,
বলেছিলাম থেকে যাও । থেকে গেলে, ঘরপোড়া তুমি, ভালবেসে সব টুকু নিয়ে, দিয়ে তোমার -
এই সব দিন রাত্রিতে, পাকা ধানক্ষেতে তাই আর
বুলবুলি খুঁজি না । বোহেমিয়ান আমি । তবুও
।।