সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

মোকসেদুল ইসলাম



মোকসেদুল ইসলাম

আততায়ী
............................
অধিকারের কোন রঙ নেইএই কথাটি জানার পরেই
কেউ কেউ বাদ্য বাজিয়ে গেয়ে ওঠে জীবনের গান
একদিন জলসিরিজ লিখছিল যে কবি সে এখন আলো খোঁজে
যুথবদ্ধ ভালোবাসায় জলের আঁচলে তুলে আনে মধ্যলিপির সুখ
চড়ুইভাতির আয়োজন দেখে আমারও শখ হয়েছিল তীর্থযাত্রায় যেতে
নৈমিত্তিক জীবনে আড়মোড়া ভেঙ্গে দেখি চোখের সামনে যে অঙ্কিত মানচিত্র ভাসছে
সেখানে শুধু পরিচয়হীন লাশের ছবি।
উড়ে যাওয়া ধুলোর সময়ে দূরত্ব রেখাটুকু মুছে গেলে
সব রক্তের সম্পর্কই ফিকে হয়ে যায়
প্রতারকের প্রগলভ হাসিতে ক্ষয়ে যায় বুনো হাঁসের জীবন
তীব্র অভিশাপের কলকাঠি নেড়েছিল যে পাপী
তার হাতের শোভা পায় এখন বিষের পেয়ালা
ক্ষমা করো বিহঙ্গিনীবলে বিশ্বাসের নৌকায় পা রেখেছিল যে সাধু
প্রাচীন বিস্ময়ে চোখ খুলে দ্যাখে সামনে দাঁড়িয়ে তার আততায়ী।




স্মৃতি
....................
চরম শূন্যতার সময়ে চাঁদের আলো কোন মুখ্য বিষয় নয়
কুয়াশার প্রেমিকা জানে অসীম অন্ধকারে প্রতীক্ষার শরীরে
কিভাবে আঁকতে হয় সযন্তে পুষে রাখা বেদনার মুখাবয়ব।
পথের বাঁক ছেড়ে হাটছিলাম সময়ের তীরবিদ্ধ চোখে
দেখছিলাম পিপাসার্ত ঠোঁটে আলোর স্রোতধারা
দৃষ্টিভ্রম নয়, পৃথিবী উদ্বাস্তু হলে শীতের রাতে ঝড়ে পড়ে
মেঘ বৃক্ষের সব দুঃখ বিলাস।
পেন্সিলে আঁকা সুখ মুছে গেলে বুক জুড়ে বয় বৈরি বাতাস
একপশলা বৃষ্টিতে ভিজে গেয়ে উঠি রবী ঠাকুরের গান
মানুষের জীবন কতনা বিচিত্র,
বৃক্ষশরীর নিয়ে দাড়িয়ে দেখে মানুষেরই বর্বরতা।
এসব সত্যের অপলাপ, মাছের পেটের মত সাদা
ছিল যাদের মন তারা নাকি এখন দুর্গন্ধ ছড়িয়ে
জরাজীর্ণ দেওয়ালের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকে সুখের আশায়।
ঘাসপাতা মন যাদের তারা আয়না জুড়ে নিজের ছবিটাই দেখে
আশ্বিনের রাতে মৃতরাও যে ডাকতে পারে সমুদ্রের ডাক
তা না জেনে ভূমিহীন এসব মানুষ শুধু স্মৃতির ঝিনুক খুঁজে।






হারাবার ভয়
..........................
হাওয়ার সিঁড়ি ভেঙ্গে যে মেয়েটি হাঁটছিল আকাশ পথে
সেও দেখছিল সবুজ পাতায় রোদ্দুর ভরা সুখ
অদ্ভুত কিছু অপেক্ষা এসে যখন দাঁড়িয়ে যায় দুয়ারে
তখন প্রাগৈতিহাসিক স্রোতে ভেসে যায় তাঁর সব শূন্যসুখ।
শোক স্বপ্ন দেখে যদি ঘুমিয়ে পড়ো আমার শান বাঁধানো হৃদয়ে
তবে নাব্যতা সংকটে পড়ে যাবে সব মাতাল প্রেমের কারিগর,
জন্মটা পাপ নয়, প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয় সেতো মানুষের কারণে।
আমরা তো আমিষভোজী, রক্ত দেখলে থাকতে পারি না স্থির
জীব প্রেম ভুলে সুনিপুণ কৌশলে কিছুটা উষ্ণতার আশায়
রাতের হেরেমে বসে দোতরা বাজিয়ে যাই।
যে সুখের আশায় ভেঙ্গে চলছো আকাশ পথ
সে তো বড়ই বন্ধুর,
প্রতিশ্রুতির ভাঙ্গা নৌকায় কখনো পা দিতে নেই
কিছু হারাবার ভয় সবসময় হৃদয়ে লালন করতে হয়।





এটি নিছক একটা প্রেমের কবিতা
..........................................
একটা রাত নাহয় আমার জন্যে বরাদ্দ রেখ সখি
অদ্ভুত আগামীর পথ ধরে যেন হেটে যেতে পারি পাশাপাশি
বিমুগ্ধ আগুনমুখে যদি একবার বলো ভালোবাসি
আমি সমস্ত শূন্যতা বুকে নিয়ে ঈশ্বরের সাথে লড়তে রাজি আছি।
পৃথিবীর্ আলো যদি কোন দিন নিভে আসে এই বেদুঈন শহরে
নির্লিপ্ত সে রাতে আমি হবো নিয়ন বাতি
তৃষ্ণার্ত চিবুক বেয়ে সমস্ত কোমলতা দেবো ঢেলে।
শুধু পটলচেরা চোখটা তুলে দেখো একবার
বিপরীত প্রেমের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে যে প্রেমিক
অভিমানী বিকেলের রোদে এবার সে উল্লাসে ফেটে পড়তে রাজি।






মধ্যবিত্ত (২)
.........................
আমাদের মধ্যবিত্তের সংসারে চৈত্রের তৃষ্ণা বয়
নদীটিকে মুঠো করে বুকপকেটে রেখে দিলে
হৃদপিন্ডে বয়ে যায় একরাশ বিবর্ণ সবুজের ঝড়।
স্মৃতি হাতড়ে উদ্ধার করেছি আদিগন্ত মাঠ
চোখের ফাঁদে আটকে আছে না দেখা পান্থ জনের সুবাস।
আমাদের এখন আর কিছু হারাবার ভয় নেই
নরম ফুলে ঝুলে থাকা মৌমাছির ন্যায় সংসার
বালিকার হাত ধরলেই ভেবে নিই সে কৃষ্ণচূড়ার ফুল
নিজের সীমানা ভুলে বারবার চলে যাই অসীমের দিকে।
শীতের পাখনায় ভর করে আমরা দেখি সূর্যের আনাগোনা

চাঁদের ধৃষ্টতায় শূন্য হৃদয় নিয়ে দাঁড়িয়ে যাই ভাঙ্গা কুঠিরে।