সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

মিঠু নাথ কর্মকার




মিঠু নাথ কর্মকার

আমি
******
সুবিস্তৃত নীলাকাশ, সুগভীর নীলাভ সমুদ্রকে
আলিঙ্গন করে যে দিগন্তে;
সেই অসীম উদারতার মাঝে,
একাকী খুঁজে ফিরি আমার একান্ত 'আমি' কে|
দুগ্ধ ফেনিল অফুরন্ত তরঙ্গে উদ্বেলিত
আমার ইচ্ছেপাখি |
মুক্ত গগনে মেলেছে ডানা দু'খানি,
পেতে স্বাধীনতার কাঙ্খিত আস্বাদ |
আজ সেই বিশালতার মাঝে গিয়েছে হারিয়ে
নিরুদ্দেশের  অচিন ঠিকানায় |
ফিরে আয়, ফিরে আয় ,পাখি মোর শূন্য খাঁচায়  |




অস্তিত্ব
*******
একদিন হারিয়ে যাবো আমি অসীম শূন্যতার মাঝে ;
আমার অস্তিত্বটুকু থাকবে---
বাতাসের সোঁদা গন্ধে , মেঠোপথের ধূলায়,
জ্যোত্ স্নার স্নিগ্ধতায়, মরুভূমির রুক্ষতায়,
সমুদ্রের অতল গভীরতায়, আকাশের অনন্ত উদারতায়, স্মৃতির অস্পষ্টতায় |
তুমি দিগ্বিদিক খুঁজে ফিরবে আমায় ,
আমি তো থাকবো তোমার অনুভূতিতে, প্রতি শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত শোণিতধারায় ||




সেই মেয়ে
**********
আমি সেই মেয়ে,
যার উঠলে ওঠা যৌবনের ইশারায়,
খসে পড়ে তোমাদের ভদ্রতার মুখোশ,
নিগুঢ় রাত্রির গোপনীয়তায় নির্লজ্জ বর্বরতার
নীরব সাক্ষী সময়ের সময়ের অভিসারে অর্থের বিনিময়ে অনর্থ হয় |

আমি সেই মেয়ে,
মায়াবী রাতের ছায়াবৃত্তে  চেনা  প্রতিটি শরীরী খাঁজে সম্ভোগের উল্লাসে উন্মত্ত হও,
দিনের উজ্জ্বলতায় সমাজের কলঙ্কিত মুখে একরাশ ঘৃণা ছিটিয়ে শিক্ষিত সভ্যতার বড়াই করো |

আমি সেই মেয়ে,
যার অমোঘ টানে  ঠান্ডাঘরের রাজকীয় সুখ ছেড়ে, নিশিডাকে নষ্ট পাড়ার অলিগলির দমবন্ধ ভ্যাপসা গরমের অভিশপ্ত জীবনের খোঁজে তোমরা উন্মাদ হও |

আমি সেই মেয়ে,
নামগোত্রহীন কোনো এক অমেরুদন্ডী পৌরুষের ঘৃণ্য খেয়ালীপনায় যার জন্ম, তোমাদের মতো বুভুক্ষু মানুষের লালসার বিলাসীভোগ্য হয়ে হস্তান্তরের জন্য ||




অন্তিমযাত্রা
**********
উদ্বেলিত রক্তের উন্মাদনায়, বিবেকহীন লালসার প্ররোচনায়, বারুদের গন্ধময় প্রগাঢ় আঁধারের চক্রবূহ্যে অন্তহীন আবর্তনের পথে শুনেছি তোমার নীরব পদধ্বনি |
অভিশপ্ত জীবনের অসহায় নিষ্ঠুরতা তোমায় ফিরিয়েছে বারবার অসীম নির্লিপ্ততায় |
সময়ের অভিসারে নিঃসঙ্গ অবসন্ন জরাগ্রস্ত  দেহে , অন্ধকারের টাটকা স্মৃতির ভয়াবহতায়, যন্ত্রণাতুর অপলক দৃষ্টি ,
তোমার অধীর প্রতীক্ষায় |
আমার অবারিত দ্বারে চরম নিঃস্তব্ধতায়, তোমার নিবিড় আবেশে চিরশান্তির নীড়ে হোক আমার অন্তিমযাত্রা ||




নারী
*******
ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই হয়তো মিটে যাবে তোমার জন্মানোর সাধ,
অযাচিত পৃথিবীর প্রথম আলোর স্পর্শে জ্বলবে তোমার স্বপ্নের চিতা,
উন্মত্ততার হিংস্র থাবায় অকালে ঝরে যাবে তোমার শৈশবের কোমলতা ,
বর্বর পাশবিকতায় কৈশোরেই অনুভব করবে অনাহুত মাতৃত্বের গ্লানি ,
বজ্রকীটের বিষাক্ত সংক্রমণে নীলাভ বলিরেখা সুস্পষ্ট হবে ,
রাতের নিঃশব্দে ঝরা শিশিরের রিক্ততাও স্পর্শ করবে না তোমার একাকীত্ব |
তবুও তুমি অকাতরে বিলিয়ে দেবে তোমার আমিত্ব, বিশ্বসংসারের নষ্ট সেবায় ,
রক্তরসে পুষ্ট করে অসহ্য প্রসববেদনায় জন্ম দেবে চিরন্তন পুরুষত্ব ,
ধন্য হবে তোমার জন্ম, সার্থক হবে তোমার নারীত্ব  ||




কাঁটাতার
********
ভরা শ্রাবণে যৌবনের তরঙ্গ উদ্বেলিত করেছিল তোমাকে,
প্রতিটি শরীরী খাঁজের স্পর্শসুখ অনুভব করে তৃপ্ত হতে চেয়েছিলে তুমি,
চেয়েছিলে শুধু একবার আমার গহীনতায় নিজেকে হারাতে,
সঙ্গমের প্রবল ইচ্ছা পোষণ করে তোমার জীর্ণ শরীরটাও উন্মত্ত হতে চেয়েছিল |
কিন্তু তোমার অন্তর্লীন আকাঙ্খার স্রোত ধাক্কা খেয়েছিল সীমান্তের হিমশৈলে ,
রক্ষীবাহিনীর গুলিবর্ষণে রুদ্ধ হয়েছিল তোমার নীরব আর্তনাদ ,

কাঁটাতারের হ্যাঙ্গারে ওরা ঝুলিয়ে রেখেছিল তোমার অতৃপ্ত কামনার রক্তাক্ত অপভ্রংশ ||