জয়া চৌধুরী
বুদ্ধির ভুল
সেসব কিছু দিন ছিল আমাদের
কালেঃ-
আগে ছিল কালো গরু ডেইলী দুধ
দিত গ্যালন গ্যালন সাদা সাদা
আগে ডাবু হাতার এক হাতা
খিচুড়িই বকরাক্ষস খেয়ে শেষ করতে পারত না
আগে নিজের বউকে আদর করলে
বিছানায় পাঁচটা শালী ফ্রি পাওয়া যেত
আগে পরের বর সব্বার সামনে
আমার বউকে আদর করত বুক ফুলিয়ে
আগে রিয়ার স্টলের টিকিট
কাটলে বক্সে বসে বান্ধবীকে সুনীল গদার শোনানো যেত
আগে গৃহসেবিকারা ইতুপুজো
মহরম ভোটপুজো ভারতবন্ধ রোজ প্রেজেন্ট প্লিজ হত
আগে মাছওলা এক কিলোর
বাটখারাতে দুকিলো খলসে ইলিশ হাসতে হাসতে গছিয়ে দিত
আগে পাসপোর্ট অফিসে পাঁচ
মিনিটে পাঁচ বছরের স্টুডেন্ট ভিসাও বানিয়ে দিত
আগে ছেলের কলেজে বোমার বদলে
লাল নীল জারবেরার চাষ হত
আগে তোমার জন্য গান বাঁধলে
তোমার বান্ধবীও চিঠি দিত সঙ্গে ফাউ কোহিনূর
এখন ভাবি
আগেই তবে বুদ্ধি করে নিজের
জন্য কেমন করে প্লুটোর পাড়ায় দুদশ একর জমি রাখিনি!
বজ্জাতি
একটি স্ট্যাটিক ভালবাসার খপ্প্ররে
সারাক্ষণ চুল ছিঁড়ছি
ঠেলা গাড়িতেও নিউটনস্য আইন চালানো যায় কিন্তু
ডায়নামিক বেগে ছোটাতে গিয়ে
হাত থেকে লাগাম ছুটে যায়
বেহায়া কিংবা গোঁয়ার যে বিশেষণ টাই
লাগসই লাগুক না কেন
ওটা বিদ্যেসাগর কিংবা বিল গেটসের জন্য
ক্যাপশন থাকুক
এই সব ইঞ্চি টাক কলিজা দিয়ে
তোকে মাপতে যাওয়াই ভুল হচ্ছে কেবল
ভাবছি মিশ্রণ না বাঁদরের তেল মাপা বাঁশ
কোন অঙ্কে পিছলে যাবার অজুহাত দেব!
দান ওলটায়
অশ্বারোহীর লাগাম ছাড়াই
বল্গা মৃগ চালিয়ে যাবে?
এমন তোমার মুঠোর জোর
বড়শি আগায় প্রেম গাঁথবে?
জীবন মানে যদিই ভাবো
তোমার হুকুম বরদার
সময় হলেই পাশার চালে
মুখোশ খুলে ছারখার।
নিজের শুধু নিজের ভেবে
বরাত জোরে চালিয়ে দিলে
নিজের বলতে শেষের দিনে
নিজেই তুমি থমকে যাবে-
সমাজ সমাজ বড্ড ভাবো
ফুলের সাজেই শবকে ঢাকো,
আড়াল হলেই কোপের থাবায়
নিমখোল দাও গাছের গোড়ায় ?
ভানের পিছে সচ যা আছে
সময় হলেই চিচিং ফাঁক
সে সব দিনে উলটে দেখো
রইবে না আর কিছুই জাঁক।
দমকা হাওয়া
রোজ
একই চ্যাপ্টা গোল থালায় ভাতের পিন্ডি
একই কলঘরে দেওয়াল রঙে ছিটকানো
নিয়ম মানা স্বমেহন শুধু
একই বালিশ আর ঘামে ভেজা তোশক
একই কাগজ বিস্কুট আর দুধের প্যাকেট
নিয়ম বাঁধা রুটি জলের বালতি চালানি পোনা
একই চশমা টেলিফোন ঠাট্টা চিমটি কাটা
শুধু কখনও দমকা হাওয়া এলে
হুক ছিঁড়ে যায় ...
আমি যাকে
ভালোবাসি
আমি যাকে ভালোবাসি সে খুব জেদী অবুঝ ধনুর্ধারী
আমি যাকে ভালোবাসি পাগলামি তার অঙ্গের ভূষণ
আমি যাকে ভালোবাসি তাকে কেয়ূর চন্দনে সাজিয়ে তোলা আমার
দুঠোঁট জানে কারুকাজ
আশ্চর্য! আমাকে পেলেও সে বিমুখ হয়ে যায় কত সহজে!
আমি তো ওকে ভালই বাসি!
আমি যাকে ভালোবাসি সে লাল রঙ কিংবা সব রঙা সাদা সমুদ্র
বীচিমালা
আমি যাকে ভালোবাসি সে তো মুখচোরা গুরুগম্ভীর পড়ুয়া কবিতাই
এক
আমি যাকে ভালোবাসি সে রঙিন আত্মহননকারী জীবিত হৃৎপিণ্ড কোনো
আশ্চর্য! জাগলিং খেলাতেও সে এত দক্ষ!
আমি তো ওকেই ভালোবাসি!
আমি যাকে ভালোবাসি তার শরীরের প্রতিটি রোম আমাকে জানে
আমি যাকে ভালোবাসি ফুস করে সে চুপসে দেয় আমার ভ্যানিটি
থলেটি ঘন আদরে
আমি যাকে ভালোবাসি সে খুব বুঝদার, একদম লক্ষীটি, আসন পিঁড়ি
এগিয়ে থুই তার লাগি
আশ্চর্য! গ্রন্থিতেও সে এতই আঁটো!