বিদিশা দাস
***অবশেষে...***
অবশেষে,
রূপকথার খেয়াঘাট পার হয়ে যায়
গোধূলির কনে দেখা আলো,ঢেউ তুলে।
আমিও কি আর এই সুযোগ ছাড়ি !
পার হয়ে যাই যত মুগ্ধ শব্দ ভুলে ।
দুঃখরঙ কান্নারা আসে আমার কাছে,
ছলাৎছল নদী হয়ে মোহনায় মেশে !
ফিরে যাবনা মোটেও আর ফেরিঘাটে
গন্তব্য পেয়েছি খুঁজে আমি অবশেষে ।
হারজিৎ ভুলে যাই,যত বেদনার ফুল
ফুটলেও কি আছে,জলের আলপনা
সব-সব কিছু দুঃখ-সুখ-ভালোবাসা;
জলছবি অস্থায়ী বড় তুমি কি জানোনা ?
*** নদীটা ***
কতদিন যে নদী দেখা হয়নি !
অথচ সবসময় ভাঙনের শব্দ শুনি,
উৎসটা খুঁজে বের করতে চাই !
পারিনা,যদিও ভগ্নস্তূপে বসে আছি।
চিরবহমান নদীটাই আবার নবসৃজনের
কবিতা আঁকে সময়ের চালচিত্রে ।
নদীটা কাছেই আছে ।।
***আশ্রয় ****
ওইখানে নদী ছিল,
ছিল ডাহুক-দুপুর, হরিণের নিলয়;
ফেনিল আবেগ আর শান্তির আশ্রয়,
বর্ষাভেজা রাত সংগে একমুঠো মেঘ;
প্রেমিক হৃদয় আর গোপন উদ্বেগ !
রাখালবালক আর তার মোহনবাঁশি,
মিঠে সুর সেই-"ভালোবাসি ভালোবাসি" ।
ওইখানে অরণ্য ছিল,
আলোছায়া আর রোদবৃষ্টি মাখা;
মুঠোমুঠো ফুল-রঙ-জলছবি আঁকা !
অভিমান ভুলে বাঁকাচাঁদের ছলাকলা,
গলে গলে পড়ত অনেক না-বলা !
নামঠিকানা ভুলে সেই হারিয়ে যাওয়া,
গহন সবুজেই পথ খুঁজে পাওয়া ।
ওইখানে সব ছিল !
নদী ছিল,অরণ্য ছিল,আকাশ-বাতাস-মাটি !
প্রজাপতির পাখায় ছিল ভালোবাসা খাঁটি ।
ওইখানে আজ আছে ইট-কাঠ-বালি,
ঐশ্বর্য সম্পদ-গুমোট বাতাস আর শর্তাবলী !
নদী আর অরণ্য গেছে হাত ধরাধরি করে
খুঁজে নিতে অন্যকোথাও নিঃশর্ত আশ্রয় ।।
*** যদি ছুঁয়ে দিই শ্রাবণ সকাল ***
বৃষ্টি হোক বা নাই হোক আজ বর্ষাকাল !
আজ ফুল-মেঘ-জল-রোদ কিছুই ছোঁবনা
যদি ছুঁতে পারি মনখারাপিয়া শ্রাবণ সকাল।
যে সকাল যাপনের প্রতি মুহূর্ত কবিতা হয়ে ওঠে !
যদি ছুঁয়ে দিই আজ এমন সকাল,
ব্যথারা এক একটুকরো মেঘ হয়ে যাক্,
এক তুমুল বৃষ্টি হোক !
ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে যাক চারদিক;
মনসিঁড়ি বেয়ে একটু ভিজেভিজে নামি,
নতুন কিছু চাওয়ার ভাবনারাও থাক সাথে !
কিছু অসমাপ্ত গল্পের উপসংহার সামনে এসে গেলে,
হোঁচট খেয়ে একটু নাহয় থামি ।
বৃষ্টি হোক বা নাই হোক আজ শ্রাবণ মাস!
আজ কালি-কলম-মন কিছুই ছোঁবনা,
শুধু ছুঁয়ে দিতে পারি ;
গল্প বলা এই সকালের প্রতিটি নিঃশ্বাস,
যে সকালের প্রতিটি শব্দ এক একটা উপন্যাস।
যদি ছুঁয়ে দিই আজ এমন সকাল !
নিজেকে চিনে নেব আবার নতুন করে,
নিজের সংগে হয়নি দেখা বহুকাল ।।
*** তোমাকেই বলছি ***
ভালোবাসা,তুমি কি শুধুই খাজুরাহো ?
হতে কি পারোনা আজ একবার
গঙ্গোত্রী হিমবাহ ?
পবিত্র ধারায় ভাসাতে পারোতো গিরি-মরু-সমতল ।
মোছাতে পারোতো দুখী মানুষের ব্যথার অশ্রুজল !!