সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

কচি রেজা



কচি রেজা
এক
আমার চারপাশটায় হঠাৎ হঠাৎ গজিয়ে ওঠে সোনার পাহাড় আর যে সবুজ হরিণের স্বপ্ন আমি দেখি যা কিনা মহাভারতের কোথাও নেই ! সেই হরিণ তখন শুধু মাত্র একটি নদীর নাম ! নদীর জলে ভেসে চলা পাল ! পাল ছুঁয়ে উড়ে চলা তুন্দ্রার পাখি !  যজ্ঞের পরে প্রার্থনার মতো, পাপের পরে অনুতাপের মতো পেয়েছি  তাকে ! নাম জলেশ্বরী ! যেন নক্ষত্র ! যেন ডাহুক ! রক্তাক্ত জগৎটাকে ওমে ভরিয়ে অভিঘাতে অভিঘাতে আমারও পুনর্নিমান হলো তার জলে ! তার ঘোরে-নেশায়-মোহে আমি রুপোর  পথে সোনার আঁচল উড়িয়ে হাঁটি ! সে-ই আমাকে রচনা করে আর আমি তার রচনাকে অক্ষর দিই ! তার জলে আমি ধুয়ে নিই আমার পাপও প্রণাম !জানি, শোলকবলা দিদিরা হারিয়েই যায় ! আমি হারিয়ে যাই জলেশ্বরীর চোখে চোখে গোপনে বয়ে !




দুই
যেন আমি হরপ্পা নগরীর আগন্তুক ! মাত্র গতকাল এসে পৌঁছেছি ! মনে নেই, কোন গ্রহ থেকে ! রাতভর কেটেছে স্বপ্নে !পরদিন ভোরের আলোয়, আমার বিস্মিত চোখের সামনে দেখি, বিস্তৃত হয়ে রয়েছে পুরানো সভ্যতার ভাঙা অবশেষ ! দেখি, পড়ে রয়েছে ইঁট ! যত্র তত্র ছড়ানো ব্যালকনি ! কোথাও দূরে টের পাই, সমুদ্র ফুঁসে উঠেছে ! প্রবল উষ্ণ হাওয়া ছুটে এসে লাগছে মুখে ! গ্রিবাভাঙা টেরাকোটা নারী মূর্তিটির চোখে আতঙ্ক ! আর হঠাৎ আমার চুলে আটকে যেতে দেখি, একটি আশ্চর্য গ্রহ্নের ছেঁড়া পৃষ্ঠা !




তিন
আমি বার বার পথ হারাই এই গ্রহ্নের টানেই ! কী লেখা আছে এর পাতায় ! কোন্সে রহস্য যা পৃথিবীর কাছে আজও অজ্ঞেয় ! হারিয়ে গিয়ে সেই লেখা আমি দেখতে থাকি শহরের সব ক'টা বাড়ির গায়ে, গাছে গাছে, পাখির ডাকে ! কাল বোশেখি্র হুংকারে সেই একই ইঙ্গিত ! বর্ষা্র অঝোর ধারায় একই মিনতি ! শরতের শুভ্রতা কি কেবল বিসর্জন !
তাহলে শিউলির বোঁটার এক ফোঁটা হলুদের মত জীবনে এত আলোড়ন কেন ! কেনইবা
মৃত্যুর মত এমন দীর্ঘকালীন জরা !




চার
ধুসর এক পৃথিবী আমার সামনে ! পেছনের যা কিছু ছেড়ে আসা সেইসবও ধুসর ! মাঝের এইযে দোলাচল যেখানে আমার নিত্য কাজকর্ম,, স্বপ্ন দেখা এমনকি নিদ্রাও এটাও কি সেই পুস্তক যা আমি অনিচ্ছায় লিখে যাছি ! কার জন্য এই অজ্ঞেয় অক্ষরের সাধনা ! কেউ কি আবার পথ হারাবে ! গৃহহীন হয়ে পথে পথে ঘুরে খুঁজে নেবে অনুক্ষণ তাড়না করে ফেরা সেই এক শ্যাডো জগত ! কার জন্য এই দুঃখের জগত আমি রেখে যাচ্ছি ! কার নিদ্রা হরণ করলাম চিরদিনের জন্য ! যেভাবে কোনো অজ্ঞাত পূর্ব পুরুষ আমার জন্য গড়ে গেছে এই জগত, এই কৌতুক এই ছায়া !




পাঁচ

বধির সময়টায় আমি কেবল কবিতাই বুঝি ! চারদিকে বেজে চলেছে কুরুক্ষেত্রের ডামাডোল, দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের এই সময়ে আমি কবিতার অর্থ বুঝে নিতে জগত পরিক্রমা করি ! পরিক্রমার সময়ে সূর্যের অকাল গর্ভপাত দেখি । নীল রঙের অন্ধকারে ভরে যায় তখন ! কতদিন জোয়ার ওঠেনা ! লোনাজল সরে যায় দূরে ! পৃথিবীর এই একলা সময়ে, হতাশার মুহুর্তে বেদনা বদলে যায় ! আমার ভারি আঁচলে করে সমুদ্র কুড়িয়ে আনি ! বিপন্ন কপালে ওঠে প্রতিপদের চাঁদ !